ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আপন আলোয় মানবজমিন

প্রিয়তমা সুখেই আছে

মাহমুদ মানজুর, হেড অব এন্টারটেইনমেন্ট, বাংলা ট্রিবিউন
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
mzamin

মূলত আমার জন্ম অন্যত্র এবং অন্য অনেকখানে। তবে আমার বেড়ে ওঠা মানবজমিন-এ; যেখানে রেখে এসেছি দুর্বার তারুণ্য এবং যৌবনের অনেকাংশ।
দুই হাজার সালের দিকে, মামা সাংবাদিক-নির্মাতা অরণ্য আনোয়ারের হাত ধরে সাপ্তাহিক পূর্ণিমায় হলি/বলি অনুবাদ দিয়ে শুরু করি। আমার প্রথম অনুবাদ ছিল, অমিতাভ বচ্চন, সালমান, শাহরুখদের বাড়ি নিয়ে একটি ফিচার। এরপর ইনকিলাব, যুগান্তর, ভোরের কাগজে হাঁটি হাঁটি পা পা করে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে  যোগ দিয়েছি পাক্ষিক তারকালোক ম্যাগাজিনে। বেতন সাড়ে তিন হাজার টাকা।
বলতে গেলে, আমার প্রথম জন্ম মূলত তারকালোকে। এখান  থেকেই যেটুকু কানেকটিভিটি, সেটুকু ঘঁষেমেজেই চলছি আজও। এই ম্যাগাজিনে সাড়ে চার বছর চাকরি করে প্রথম সুযোগ পাই  দৈনিক পত্রিকায়। আজকের কাগজ। দুই হাজার চার পাঁচ সালের কথা। যোগ দিলাম ফিচার বিভাগে ‘চারবেলা’র সদস্য হিসেবে।

বিজ্ঞাপন
বেতন চার হাজার টাকা। সপ্তাহে এক দুটো ফিচার-  কেমন যেন অলস আরাম সময়! অথচ পাক্ষিক পত্রিকায় টানা সাড়ে চার বছর লিখেছিলাম চার হাত-পায়ে প্রায় পুরো ম্যাগাজিন। ফলে আজকের কাগজে যোগ দিয়ে কেমন যেন ‘হাই  তোলা’ অবস্থায় পড়ে  গেলাম। 
না, বেশিদিন আরাম করে হাই তোলা হলো না। এক বছরের মাথায় ডাক এলো দৈনিক মানবজমিন থেকে। দুই হাজার ছয় সালের কথা। তখন এই পত্রিকাটি ছিল সবচেয়ে হট এন স্পাইসি। মার-মার কাট-কাট সব নিউজ।  দেশের একমাত্র ট্যাবলয়েড বলে কথা। তখন বিনোদন বিভাগের প্রধান ছিলেন মোশাররফ রুমি ভাই। সম্ভবত ৮ জনের মস্ত বড় একটা টিম ছিল। সেই টিমের দুজন (আতিক ভাই ও আসলাম ভাই) চলে যাবেন দিনের শেষে পত্রিকায়। মূলত সেই ফাঁকা স্থানেই ডাক  পেলাম আমি আর শাহ আলম সাজু (এখন  ডেইলি স্টার)।
প্রায় ডাবল বেতন সাড়ে সাত হাজারে জয়েন করলাম। অবশ্য করার আগে কাগজ বন্ধুদের অনেকেই নাক সিঁটকিয়েছেন। বলেছেন ‘এই চটি পত্রিকায়’ যাবেন! বিপরীতে আমি বললাম, ‘চটি না পটি,  সেটা বিষয় নয়। আমি আসলে গতি নিয়ে প্রফেশনালি কাজ করতে চাই। আমি সামনে বাড়তে চাই।’ কারণ, তখন বিনোদন এরেনায় মানবজমিনই ছিল একমাত্র ব্লকবাস্টার। যে বিনোদন বিভাগে তখন কাজ করতেন ইকবাল করিম নিশান,  মোশাররফ রুমি, মিলন কান্তি দে, সীমান্ত  খোকন, আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, আসলাম রহমান, আরিফুল ইসলাম, ওমর ফারুক, দীন ইসলাম সহ আরও অনেক উজ্জ্বল সাংবাদিক। যাদের মধ্যে রুমি ভাই, আসলাম ভাই, আওলাদ ভাই মারা  গেছেন। বাকিরা প্রত্যেকেই এখনো আছেন নিজ নিজ অবস্থানে দৃঢ়।
যাই হোক, টানা ৯টি বছর কাটে এই মানবজমিন-এ। আমার দুই দশকের সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারে যা এখনো সবচেয়ে দীর্ঘ এবং দরকারি হয়ে রইলো। শুরুতেই বলেছিলাম, মূলত আমার জন্ম অন্যত্র এবং অন্য অনেকখানে। এখানে অন্যত্র মানে তারকালোক। আর অন্য অনেকখানে মানে মানবজমিন। যে পত্রিকাটি আমাকে ফিচারের গল্প থেকে  বেরিয়ে রিপোর্টিং শিখিয়েছে। শর্ট নিউজ  লেখা শিখিয়েছে।  ব্রেকিং, গুঞ্জন, সরজমিন প্রতিবেদন কীভাবে তৈরি করতে হয়; সবটুকুই শিখিয়েছে। এই পত্রিকাটি আমার সাংবাদিকতার প্রায় পুরোটাই বার বার  ভেঙেচুরে গুঁড়ো গুঁড়ো করে নানারূপে দাঁড় করিয়েছে।
তাই নয়, শেষ বেলায় এই পত্রিকা তথা শ্রদ্ধেয় প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সরাসরি আগ্রহে জেনারেল রিপোর্টিং বিভাগেও কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। যে সময় আমাকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছিলেন শামীমুল হক ভাই, কাজল ঘোষ দাদা, সাজিদুল হক ভাই, লুৎফর রহমান, কাজী  সোহাগ ও তানিয়া মোমিন মৌরিসহ অনেকেই। সেই সময়ের একটি লিড রিপোর্ট আমাকে আজও মুগ্ধ করে। ‘আমি শিবির নই হিন্দু’ শিরোনামের সেই প্রতিবেদনটি তখন বেশ দামি প্রতিবেদন হিসেবে প্রশংসিত হয়। সেই প্রতিবেদনে আমি তুলে ধরি, একজন হিন্দু ছেলে নয়ন বাছারের আকুতির কথা। যে কিনা হিন্দু হয়েও পুলিশের চোখে ‘ছাত্রশিবির’ হিসেবে গুলি খায়, গ্রেপ্তার হয় এবং মামলার আসামি হয়।    
সবকিছুরই তো একটা  শেষ থাকে। আমারও মানবজমিন অধ্যায়ের  শেষ হলো টানা ৯ বছরের গতিময় জীবন  পেরিয়ে ২০১৫ সালে।  যোগ দেই সাংবাদিকতা জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়ে- অনলাইন  পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন-এ। কারণ সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, দৈনিক পেরিয়ে অনলাইনের স্বাদটাও  তো নিতে হবে। সময়  তো ফুরাচ্ছে দ্রুত।  পোর্টালটির সঙ্গে গত ৮ বছর ধরে এখনো আছি, আরও গতিময় আবেশে। কারণ, অনলাইন মানেই ২৪ ঘণ্টা সচল ও সতেজ রাখতে হবে নিজেকে।
আজ ১৫ই ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পার করছে প্রিয়তমা মানবজমিন। হুম এটা আমার সাংবাদিকতা জীবনের প্রিয়তমার মতোই। কারণ, এই প্রতিষ্ঠান আমাকে সর্বোচ্চ কাজের সুযোগ দিয়েছে, সর্বোচ্চ ইনক্রিমেন্টের আশকারা দিয়েছে (সাড়ে সাত হাজারে ঢুকে থার্টি প্লাসে  বের হই), সর্বোচ্চ আনন্দ দিয়েছে এবং সর্বোচ্চ কষ্টটাও। আট বছর হলো আমি কাওরান বাজার  ছেড়েছি। সেই যে বের হলাম মানবজমিন  থেকে- আজও আমি যাইনি সেখানে। কারণ,  গেলে যদি কেঁদে ফেলি; প্রিয় ফেলে আসা মুখগুলোকে দেখে বা  ভেবে? নয়টি বছর যাদের পাশে বসেছি,  মেতেছি, ঝগড়া করেছি- তাদের অনেকেই নেই এখন। আমার বস রুমি ভাই আর সহকর্মী আওলাদ ভাইর মৃত্যুর বিষয়টি তো আমার জন্য ভয়ঙ্কর বেদনার। এসব  ভেবে, মানবজমিনে আর যাইনি; সেভাবে আর  কেউ ডাকেওনি! ধরেই নিলাম প্রিয়তমা সুখেই আছে।
তাই দূর থেকে শুভ জন্মদিন; প্রিয়তমা মানবজমিন।

আপন আলোয় মানবজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

আপন আলোয় মানবজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status