ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আপন আলোয় মানবজমিন

ভালোবাসার মানবজমিন

শাহ আলম সাজু, স্টাফ রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
mzamin

আমাদের বড় চওনা বাজারে সুশীল দা অনেকগুলো পত্রিকা রাখতেন তার দোকানে। বেশ কয়েকটি পত্রিকার মধ্যে মানবজমিন ছিল অন্যতম। প্রতিদিন সুশীল দা’র দোকানে পত্রিকা পড়ার জন্য ভিড় করতেন অনেকে। আমিও যেতাম। অপেক্ষায় থাকতাম -কখন মানবজমিন হাতে নিয়ে পড়তে পারবো। বড়দের পড়া শেষ হলে আমরা কলেজ পড়ুয়ারা হাতে নেয়ার সুযোগ পেতাম। 
সেই দিনগুলির কথা আজও ভুলিনি। সে এক এক দারুণ সময় ছিল। প্রথম পৃষ্ঠার  মূল নিউজের প্রতি ছিল ভীষণ আকর্ষণ ছিল সবার, আমারও। এরপর বিনোদন পাতা। বিনোদন পাতা এবং রাজনৈতিক খবর পড়া চাই কী চাই। 
এভাবেই টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার বড়চওনা বাজারে গিয়ে মানবজমিন এবং অন্যান্য পত্রিকা পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু কখনো ভাবনায় ছিল না, মানবজমিনে কোনো একদিন সাংবাদিকতা করা হবে। তবে, ইচ্ছে  ছিল। 
তারপর বহু বছর কেটে যায়। পত্রিকাটির প্রতি আমার ভালোবাসা কমে না। বরং গোপন এক ভালোবাসা কাজ করে যায়। আরও অনেক পরে ঢাকা শহরে পড়তে আসি। ম্যাগাজিন দিয়ে সাংবাদিকতা  শুরু ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে। সেটা কিশোর তারকালোক। 
আরও পরে পাক্ষিক আনন্দ বিনোদন। আরও পরে পাক্ষিক আনন্দভূবন। 
পাক্ষিক আনন্দ ভূবনের কারওয়ান বাজারের অফিসের পাশেই  মানবজমিন ছাপা হতো। আমি বহুরাত ঘাটাইল উপজেলার লিটনের  সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। আগের রাতেই পত্রিকাটি পেয়ে যেতাম মাঝে মাঝে  লিটনের কাছ থেকে। তারপর, এক রকম লুকিয়ে পত্রিকাটি নিয়ে বাসায় যেতাম। সকালবেলার   পত্রিকা মাঝরাতে পড়তাম আর দারুণ এক ভালোলাগায় মন ভরে যেতো! মানবজমিন পত্রিকার প্রতি আমার ভালোবাসা দীর্ঘদিনের।
সম্ভবত ২০০৪ সালের ঘটনা। মানবজমিন পত্রিকায় পরীক্ষা  দিলাম। চাকরি হলো না। এখনো চোখে ভাসে আমার টাঙ্গাইল জেলার মানুষ, প্রয়াত কবি সাজ্জাদ কাদির  ভাই পরীক্ষার দিন উপস্থিত ছিলেন। একজন বড় নেতার বাসায় বেশ কয়েকদিন গিয়েছি, যদি একটু বলে দিতেন, তাহলে আমার চাকরিটা হয়, কিন্তু নেতার সময় কোথায়?
দিন যেতে থাকে। আমি ম্যাগাজিনেই  থিতু। কিন্তু মানবজমিন পত্রিকায় বিনোদন পাতার চাহিদা তুঙ্গে। এফডিসিতে আরও জনপ্রিয় । ২০০৬ সাল এলো। জানতে পারলাম মানবজমিন বিনোদন পাতায় রিপোর্টার নেয়া হবে। মনে মনে ভাবি, স্বপ্ন কী পূরণ হবে? 
সংগীত শিল্পী আসিফ ভাইয়ের সংগে আমার দারুণ সম্পর্ক। আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসেন। তাকে জানালাম খবরটি। আসিফ ভাই আমার জন্য সুপারিশ করেন। ডাকা হয় আমাকে। আমি ও মাহমুদ মানজুর একইদিনে সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করি। তিনি নানা প্রশ্ন করেন শোবিজ নিয়ে। তারপর অবাক করে দিয়ে বললেন, আগামীকাল জয়েন করতে পারবেন? আমি রাজি হয়ে যাই। মাহমুদ মানজুর অবশ্য আরও একদিন পর জয়েন করেছিল।
চাকরিটা হয়ে যায়। বছরের পর বছর ধরে স্বপ্নে দেখা পত্রিকাটির সঙ্গে পথচলা শুরু করি। বিনোদন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন রুমী ভাই। সিনেমা  জগতের দাপুটে সাংবাদিক মোহাম্মদ আওলাদ ভাইকে পেয়ে যাই সহকর্মী হিসেবে। আর ছিল হাবিবুল্লাহ মামুন।
আওলাদ ভাই প্রচ- সাহস দিতেন। ভালোবাসতেন। নায়ক রাজ রাজ্জাক, রোজিনা আপার বাসায় আওলাদ ভাই আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই স্মৃতি আজও মনে আছে। পরীবাগে মানবজমিন অফিসের নিচে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান ছিল। জাহাঙ্গীর ভাই দোকান চালাতেন, কোথায় আছেন তাও জানি না। 
পরীবাগে দুপুরবেলা আমি ও মানজুর খেতে যেতাম। কখনো কখনো ইন্দ্রজিত সরকার, কাফি কামাল খেতে যেতো। সাড়ে তিন বছর ছিলাম পত্রিকাটির সঙ্গে। এতবছর পর পেছনে ফিরে দেখি আওলাদ ভাই নেই, রুমী ভাই নেই, আবু বকর ছিল, কম্পিউটারে কাজ করতো, সেও নেই, ফটোগ্রাফার স্বপন ভাই নেই। আহারে জীবন! 
আমার ঠিকানা এখন দ্য ডেইলি স্টার। ১২ বছর ধরে স্টাফ রিপোর্টার  হিসেবে এখানেই আছি। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে কিংবা রিপোর্টার হিসেবে আমার জন্য মানবজমিন বড় ভূমিকা রেখেছে। যা আজও মনে পড়ে। আনন্দ বেদনা আছে। সুখ দুঃখ আছে। কিন্তু এখনো প্রতিদিন একাধিক রিপোর্ট করার যে শক্তিটা  পাই তার ভিত গড়ে দিয়েছিল মানবজমিন।
জয়তু মানবজমিন। ভালোবাসা, মানবজমিন। একদিন শত বছরে পা দেবে মানবজমিন- এই প্রত্যাশায় রইলাম।

আপন আলোয় মানবজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

আপন আলোয় মানবজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status