আপন আলোয় মানবজমিন
মানবজমিন আমার প্রথম প্রেম
সামন হোসেন, বিভাগীয় প্রধান, ক্রীড়া বিভাগ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস, আমি তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। একদিন সহপাঠী আনন্দ নতুন এক পত্রিকা নিয়ে স্কুলে হাজির। ছোট্ট পত্রিকা। এমন সাইজের পত্রিকা আমি কেন, সম্ভবত আমাদের ক্লাসের অন্যরাও কোনো দিন দেখেনি। পশ্চিমা ধাঁচের ট্যাবলয়েড। আকর্ষণীয় লেগেছে তৃতীয় পাতার নতুন মুখ। সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ গেটআপ-মেকআপ। তখন এতকিছু না বুঝলেও প্রথম দর্শনে পত্রিকাটির প্রেমে পড়ে যাই। তারপর থেকে যখনই সুযোগ হয়েছে পত্রিকাটি দেখেছি। তবে শিক্ষার আলাদা কোনো পাতা না থাকায় আব্বু কখনই পত্রিকাটি কিনতে দিতেন না।
হিসাব বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার কারণে কখনো কল্পনা করিনি আমি সাংবাদিক হবো। তবে আমার বন্ধু তালিকায় ছিলেন বেশকিছু সাংবাদিক। মাস্টার্স শেষে অলস সময় কাটাচ্ছি। এমন সময় রোমান ভাই (বাংলাদেশ প্রতিদিনের নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রতিনিধি) বললেন সাংবাদিকতা করবেন, করলে কালই কবিরের সঙ্গে ঢাকা দেখা করেন। নতুন একটি পত্রিকা আসছে ‘আজকালের খবর’ সেখানে কবির জয়েন করেছে। কোনো কিছু না ভেবেই পরদিন কবির ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় দেখা করি। যুক্ত হয়ে যাই পত্রিকাটির সঙ্গে। আগে লেখালেখির অভ্যাস না থাকলেও পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিল। প্রচুর বইও পড়তাম তখন। শুরুর দিকে যা আমাকে সহায়তা করেছে লেখালেখিতে। আর আজকালের খবরের স্পোর্টস ইনচার্জ কাজী শহীদ ভাইয়ের সাপোর্ট ও কবির ভাইয়ের সহযোগিতা তো ছিলই। মূলত এদের কল্যাণেই তিন মাসের মধ্যেই পত্রিকাটিতে স্থায়ী নিয়োগ পাই। সেখানে এক বছর কাটিয়ে আনন্দ (দেশ রূপান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার) ভাইয়ের সহায়তায় ২০১০ সালে যোগ দেই প্রিয় মানবজমিনে। যে ব্যক্তিকে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি টিভির পর্দায় সেই মতিউর রহমান চৌধুরীর পত্রিকাতে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় প্রথম দিন থেকেই ছিলাম রোমাঞ্চিত। শুরুর দিন থেকে তালহা ভাইয়ের (তৎকালীন ক্রীড়া সম্পাদক) দিকনির্দেশনায় আমার আসল সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার শুরু হয়। টানা আট বছর কাজ করেছি তালহা ভাইয়ের অধীনে। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি পিন্টু ভাই ও ইশতিয়াকের মতো সহকর্মী।
এই দু’জন এখনো আমার সহকর্মী। সঙ্গে আছে আতিক। এ ছাড়া ক্রীড়া বিভাগে যাদের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি বিশেষ করে শান্ত, শিহাব, রাহাত, আমিনুল, রাসেল, আরিফ, মুশফিক এরা প্রত্যেকেই ছিল অনন্য। নানা ভাবে নানা সময়ে এদের মিস করি। ২০১৮ সালে হঠাৎ করে তালহা ভাই চাকরি ছাড়লে মানবজমিনের স্পোর্টস বিভাগের দায়িত্ব ওঠে আমার কাঁধে। সীমিত সামর্থ্য দিয়ে আমি চেষ্টা করছি দায়িত্ব পালনে। দীর্ঘ এই সময়ে মানবজমিন আমাকে নিজস্ব একটা পরিচিতি দিয়েছে। মানুষ আমাকে চেনে মানবজমিনের সামন হিসেবে। এই মানবজমিনের কল্যাণেই সুযোগ পেয়েছি বিশ্ব দেখার। পত্রিকাটির সুযোগ্য প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর কল্যাণে কাভার করেছি ফুটবল বিশ^কাপ। পত্রিকাটিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই দেখে আসছি মানবজমিন একটি পরিবার। এ পরিবারের সুখ-দুঃখ একে অপরে ভাগ করে নেন। এভাবেই পত্রিকার ২৫ বছরের মধ্যে এখানে কাটিয়েছি ১২টি বছর। কোনো দল বা গোষ্ঠী নয়, সত্যকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারীদের সাহস বাড়িয়েছে। আর তাই তো নানা চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে আজ অনলাইন এবং প্রিন্ট আকারে মানবজমিন জাতীয়, আন্তর্জাতিক বাংলাভাষী পাঠক সমাজে অন্যতম জনপ্রিয় শীর্ষ দৈনিক। এই পত্রিকাটির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারাটাই আমার জীবনের বড় এক সার্থকতা।