আপন আলোয় মানবজমিন
মানবজমিনে নেই কিন্তু পাঠে আছি
মাহমুদ কামাল, কবি ও লেখক
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
মানবজমিনে থাকলে কখনো বুড়ো হবো না- এই কথাটি বলেছিলাম একুশ বছর আগে পত্রিকার প্রতিনিধি সম্মেলনে।
মানবজমিনের সঙ্গে আমার আত্মীয়তা হঠাৎ করে। চিরসবুজ এই পত্রিকার সঙ্গে প্রাথমিক সম্পর্ক ছিল পাঠক হিসেবেই। সাংবাদিকতায় এসেছিলাম পরিণত বয়সে। মানবজমিন দিয়েই শুরু মানবজমিন দিয়েই শেষ। সাহিত্যে সমর্পিত হলেও সাংবাদিকতা করবো কখনো ভাবিনি। অগ্রজ সাংবাদিকদের খুব কাছে থেকে দেখেছি। অনুজেরাও ছিল চোখের নজরে। সাংবদিকতা নিয়ে তাদের দৌড়ঝাঁপ দেখে বিস্মিত হয়েছি। কখনো ইচ্ছে হয়নি এই কঠিন বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে। কলেজে অধ্যাপনা এবং সাহিত্যচর্চার পরও কিছু অলস সময় নির্বিবাদে খরচ হতে থাকে।
বিজ্ঞাপন
১৯৮৮ সালের অক্টোবরের কোনো একদিন ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা যাই। সঙ্গে জনকণ্ঠ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ফিরোজ মান্না। মান্না কিছুদিন মানবজমিনে এবং দীর্ঘদিন জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে যেতে অমরা স্কুটারে চেপেছি। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে ভালো একটি জায়গায় আমরা থেমে যাই। বেরিয়ে দেখি মানবজমিন পত্রিকার অফিস। ভালোই তো হলো! ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা হয় রাজু আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনের সাহিত্য পাতা দেখেন। আমাদের দেখে শান্ত মানুষটি স্বভাব-বিরুদ্ধ হৈচৈ করে ওঠেন। নানান আলাপে যখন বলি মানবজমিনে আমার সিবি জমা আছে তখুনি রাজু বলেন মতি ভাই অফিসে আছেন এখনই দেখা করুন। সাহস নিয়েই প্রধান সম্পাদকের কক্ষে প্রবেশ করি। ফিরোজ মান্না মতি ভাইয়ের পূর্ব পরিচিত। প্রথম দেখাতেই তিনি আমাকে আপন করে নিলেন। মতি ভাই অনেক সাংবাদিক সৃষ্টি করেছেন। তিনি যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত পরবর্তীতে প্রতি পদে পদে বুঝেছি। দ্রুতই তিনি বের করতে পারেন এক্সক্লুসিভ নানা বিষয়। তিনি যখন ইত্তেফাকের কূটনৈতিক রিপোর্টার তখন থেকেই তার তুখোড় সাংবাদিকতার সঙ্গে পাঠক হিসেবে আমার পরিচয়। তার একটি কখা মনের মধ্যে গেঁথে রেখে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকতার প্রথম শর্ত কলম এবং সাহসের সমন্বয়।’ শুরু হয়ে গেল জীবনের নতুন অধ্যায়। দ্রুতই নিয়েগ পেয়ে যাই। এর পর স্টাফ রিপোর্টারে পদোন্নতি। বেশ কয়েকবার সেরা দশ।
শুরুতে বলেছি, মানবজমিনে থাকলে কখনো বুড়ো হবো না। এখন আমি মানবজমিনে নেই কিন্তু পাঠে আছি। তবে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি খুব দ্রুতই।