আপন আলোয় মানবজমিন
ব্যতিক্রমী অবস্থানে মানবজমিনের সচল থাকাটাই স্বস্তির
কাজী হাফিজ, নগর সম্পাদক, দৈনিক কালেরকণ্ঠ
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে আমার সাংবাদিকতা আর মানবজমিনের বয়স প্রায় এক। ‘প্রায়’ এই কারণে যে, আমার সাংবাদিকতা শুরু হয় সাপ্তাহিক মানবজমিনে, ১৯৯৭ সালে। পরের বছর ১৯৯৮ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক মানবজমিন দৈনিক মানবজমিন পরিচয়ে প্রকাশ হয়। এ কারণে আমি মানবজমিনে থাকার সময় রিপোর্টার্স মিটিংয়ে মতি ভাই (শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান চৌধুরী) প্রসঙ্গক্রমে আমাকে খুশি করার জন্যই হয়তো বলতেন, ‘মানবজমিনে আপনাদের সবার মধ্যে কাজী হাফিজ সিনিয়র। কারণ, সে দৈনিক মানবজমিন প্রকাশের এক বছর আগে থেকেই এ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত।’ তবে আমি কখনই বিস্মৃত হইনি যে, তখন বাংলাবাজার পত্রিকা ছেড়ে এসে যারা দৈনিক মানবজমিনে যোগ দিয়েছিলেন তাদের বেশির ভাগই মতি ভাইয়ের দীর্ঘদিনের সহকর্মী এবং সাংবাদিকতায় আমার অগ্রজ। বলতে গর্ব অনুভব করি, সাংবাদিকতার ২৬ বছরে কর্মক্ষেত্রে আমার হাতে-কলমে শিক্ষা ও স্বীকৃতির সবচাইতে ঊজ্জ্বল অর্জনগুলো মানবজমিন থেকেই পাওয়া। ২০০২ স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল পুরস্কার; নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির জহুর হোসেন স্মৃতি পুরস্কার; দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য টিআইবি পুরস্কার এবং ২০০৩ সালে শিশু নির্যাতন বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য পিআইবি-ইউনিসেফ পুরস্কার প্রাপ্তি ঘটে মানবজমিন থেকেই। প্রায় সাত বছর মানবজমিনে আমার অবস্থান ছিল একধরনের ঘোরের মধ্যে। বন্ধের দিনেও ভুলে অফিসে এসে প্রবেশপথ তালাবন্ধ দেখে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি। ওয়ালসো টাওয়ারের সেই অফিস ছাড়া অন্য কোথাও সময় দেয়ার কথা তখন ভাবতেও পারতাম না।
নানা প্রতিকূলতায় দেশে অনেক সংবাদপত্র টিকতে পারেনি। মানবজমিন আজও সচল তার ব্যতিক্রমী ও সাহসী অবস্থান বজায় রেখে, এটা স্বস্তির। না হলে আমার এবং অনেকের সাংবাদিকতার ভিত্তি নিয়ে গর্বের জায়গাটিই ঝাপসা হয়ে আসতো।
মানবজমিনে আমার পুরনো সহকর্মীরা অনেকেরই কর্মক্ষেত্র বদল হয়েছে। যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে দেখা হয় খুব কম। তারপরও সেসব পুরনো সহকর্মীরা আমার সবচাইতে প্রিয়জন। দেখা হলেই স্মৃতিকাতরতা পেয়ে বসে। মানবজমিনে এখন যারা নতুন তাদেরও একই পরিবারের সদস্য বলেই মনে হয়।