আপন আলোয় মানবজমিন
টয়লেটে খাওয়া-দাওয়া
কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, এটিএন বাংলা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
২০০২ সালে মানবজমিনের রিপোর্টার। সচিবালয় বিটে কাজ করি। সরকারি চাকুরেদের মতন সকাল ৯টায় সেখানে যাই। সারাদিন এ মন্ত্রণালয় সে মন্ত্রণালয় ঘুরে, ৫টায় ফিরি ওয়ালসো টাওয়ারের পত্রিকা অফিসে। দেশের প্রথম ট্যাবলয়েড পত্রিকা হিসেবে তখন প্রতিদিনই অফিসের তাড়া- ‘স্কুপ নিউজ চাই’, ‘এক্সক্লুসিভ আইটেম দেন’- এসব বলে। খবরের আইটেমে সহকর্মীদের একে অন্যকে টেক্কা দেয়ার প্রতিযোগিতাও তখন তীব্র। কিন্তু চাইলেই তো আর এসব খবর মেলে না। তাই কঠিন চেষ্টা প্রতিদিন। মন্ত্রণালয়ের ফাইলে ঘাপলা, বিদেশ সফরের নামে মন্ত্রী-সচিবদের টাকা চুরি, পোড়ানোর কথা বলে সরকারি গোপন নথি সের দরে বিক্রি- এসব খবরকেও স্কুপ আইটেম হিসেবে গুনেন না মতি ভাই (মানবজমিন সম্পাদক, শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান চৌধুরী)। তার চাই আরও ভিন্ন, আরও গরম কিছু।
নভেম্বর মাস।
ফলাফল: খবরের প্রকাশের দিন সকালে সচিবালয়ে ঢুকতে বাধা দিলো পুলিশ। সহকর্মী সাংবাদিকরা হৈ চৈ করে ভেতরে নিলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মন্ত্রীর দপ্তরের সামনেই মারতে এলেন। ধাক্কাধাক্কি করলেন। পরদিন টয়লেটের ভেতরে গিয়ে দেখি চান মিয়ার টি-স্টল উধাও। বাইরে তালা। দরজায় লেখা ‘সংস্কার কাজ চলছে’। খবর পেয়ে মন্ত্রী ডাকলেন। ধন্যবাদ দিলেন। এও বললেন ‘এটা খবর না করলেও পারতেন। প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ক্ষেপেছেন, লালফোনে ধমক দিয়েছেন।’ মানবজমিনের এই খবরটি প্রকাশের পরদিন দেশের অনেক পত্রিকায় কপি করে ছাপা হয়েছিল। উদ্ধৃতি দিয়ে ওই খবরটি প্রচার করেছিলো নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ব গণমাধ্যমও। পরে জেনেছি, মন্ত্রী-সচিবদের সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ‘চা রুম’ থাকলেও তাতে ঢোকা বা খাওয়ার সুযোগ ছিল না সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সচিবালয়ের ভেতরেও তখন ক্যান্টিন বলতে একটা। তাও অনেক দূরে। তাই সময় বাঁচিয়ে নিজেদের প্রয়োজনে অনেকেই বাধ্য হয়ে যেতেন ওই টয়লেট টি-স্টলে। খবর প্রচারের ২ সপ্তাহের মধ্যে অবশ্য ৭ নম্বর ভবনের নিচতলায় একটি বড়সড় সরকারি ক্যান্টিন খোলা হয়। যা এখনো চালু আছে।
লেখক: এটিএন বাংলার কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর ও সিনিয়র সাংবাদিক।