আপন আলোয় মানবজমিন
মানবজমিন আমার পাঠশালা
সীমান্ত খোকন, বার্তা সম্পাদক, এনটিভি, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, জাতীয় প্রেস ক্লাব
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবে অনার্স শেষ করেছি। অগোছালো এক সময়। থিয়েটার করি। এর বাইরে চলে আড্ডা। ঐ সময়টাতে জানলাম দৈনিক মানবজমিন প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। আমার বন্ধু ইকবাল করিম নিশান একদল প্রতিভাবান, তরুণ সাংবাদিকদের নিয়ে বিনোদন বিভাগ সাজাচ্ছিলো। আমি মাঝেমধ্যে বাংলামোটরের ওয়ালসো টাওয়ারে গিয়ে তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। তাদের চোখই আমার চোখে সাংবাদিকতায় আসার স্বপ্ন এঁকে দেয়।
আমি অত্যন্ত ভাগ্যবানদের একজন যে, মানবজমিনের মধ্যদিয়েই আমার পেশাদারী সাংবাদিকতার শুরু। আর পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। যিনি আমার এক সপ্তাহের লেখার মূল্যায়ন করেই স্টাফ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমার লেখা সম্পর্কে তাঁর ইতিবাচক মন্তব্যই আমাকে সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন বুনার পথ দেখিয়েছিল। আমি মনে করেছিলাম মাস্টার্স শেষ করার পরপরই সোনার হরিণ চাকরি স্থায়ী হবে। শ্রদ্ধেয় মতি ভাই ছাত্রজীবন থাকাকালীনই আমাকে সে সুযোগ দিয়েছিলেন। আমিও মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে উদার কাজের মাঠকে ব্যবহার করেছি। শুরুতেই যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তা ২৬ বছর সাংবাদিকতার জগতে কাজের টনিক হিসেবে চলছে।
মতি ভাইকে নিয়ে মূল্যায়ন করার দুঃসাহস আমার নেই। তবে, তাঁর মধ্যে শতভাগ পেশাদারিত্ব, আচরণ-চিন্তা এমনকি পোশাক আশাকেও স্মার্টনেস বরাবরই আমাকে/আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমি শত চেষ্টা করেও তাঁর সেই গুণগুলো রপ্ত করতে পারিনি। ৯ বছর সময় এমন গুণী একজন মানুষের সান্নিধ্যে থেকে কাজ শেখা সত্যিই যে কারোর জন্য সৌভাগ্যের।
শুরুতেই মানবজমিন যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল- এর সুবিধাভোগী আমরা, তখনকার সব কর্মী। মানবজমিনের পর যত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বাজারে এসেছে এর প্রত্যেকটিতে মানবজমিনের কর্মীরা প্রাধান্য পেয়েছেন। জনাব মতিউর রহমান চৌধুরী তাঁর দক্ষতা ছড়িয়ে দিয়েছেন কর্মীদের মধ্যে। তিনি ছোট-বড় সবার মধ্যেই নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
মানবজমিনে অনেক ভালো ভালো রিপোর্ট করার সুযোগ পেয়েছি আমরা। অনেক রিপোর্ট ব্যাপক সাড়া জাগানোয় এর সুযোগ আমরা পেয়েছি। আর এটি যেহেতু দেশের প্রথম ট্যাবলয়েড দৈনিক পত্রিকা সেজন্য এ নিয়ে মানুষের বাড়তি আগ্রহ, কৌতূহল ছিল। আমি যখন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করা খুবই উপভোগ করছিলাম তখনই আমাকে জেনারেল রিপোর্টিংয়ে নেয়া হলো। আমার মন খুব খারাপ হলো তখন। আমি পত্রিকার সম্পাদক শ্রদ্ধেয় মাহবুবা চৌধুরীর কাছে তদবির করলাম যাতে আমাকে বিনোদন পাতাতেই রাখা হয়। কিন্তু, তিনি সেদিন যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তাই আমার পেশাগত জীবনের গতিপথ তৈরি করে দেয়। শ্রদ্ধেয় মাহবুবা চৌধুরীর (ভাবী) উপস্থাপনায় তখন চ্যানেল আইতে সেলিব্রেটি টকশো ‘কথায় কথায়’ প্রচার হতো ধারাবাহিকভাবে। অনুষ্ঠানটিতে জড়িত থেকে আমি যা কিছু শিখেছি আজ অবধি তা আমার কাজে লাগছে।
মানবজমিনে কাজের পরিবেশ আমরা পেয়েছি। উদারতা, টিম ওয়ার্ক, পরিশ্রম- দক্ষতা, সৃজনশীলতা- এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি মানবজমিনেই। মতি ভাইয়ের কাছ থেকে তালিম পেয়েছি সদাচরণের। কাজের মধ্যেই যে আনন্দ থাকতে পারে সেই শ্রমানন্দের পরিবেশও পেয়েছি মানবজমিনেই।
মানবজমিনের জন্মদিন আমার কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আমার পেশাদার সাংবাদিকতার বয়সও একই। মানবজমিন আমার কাজ শেখার পাঠশালা। মানবজমিন আমার তারুণ্য, যৌবন, সংসার, দেশ-বিদেশ, দেশের আনাচে কানাচে থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করার এক সোনালী স্মৃতির আয়না।
শত শত বছর বেঁচে থাকুক আমার প্রিয় মানবজমিন।