ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আপন আলোয় মানবজমিন

প্রতিকূলতায়ও অপ্রতিরোধ্য

তালহা বিন নজরুল, সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
mzamin

দৈনিক মানবজমিন বাংলাদেশেরই কেবল নয়, বাংলায় প্রথম ট্যাবলয়েড পত্রিকা। আর এই পত্রিকাটি এবার ২৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। হ্যাঁ, অবশ্যই এটি সাড়ম্বরে উদ্যাপন করার বিষয়ই। যেকোনো প্রতিষ্ঠানেরই এত দীর্ঘ সময় টিকে থাকাটা বিরাট সাফল্যের পরিচয় বহন করে। আর সেটি যদি হয় নানা প্রতিকূলতায়, স্রোতের বিপরীতে পথ চলা কোনো প্রতিষ্ঠান তবে তা অবশ্যই আরও বেশি কৃতিত্বের, আরও বেশি প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলাদেশের মতো দেশে একটি সংবাদ মাধ্যমের স্বমহিমায় টিকে থাকা যেখানে পর্বতসংকুল পথ অতিক্রম করার মতো সেখানে মানবজমিন অবশ্যই একটি স্মরণীয় মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছে। এ পথ কখনো মসৃণ ছিল না, এখনো নেই। দেশীয় এবং বৈশ্বিক নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মানবজমিন তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। কতোদিন এ ধারা বহমান থাকবে তা ভবিতব্য।

কেবল ট্যাবলয়েড বলে নয়, মানবজমিন পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সামাজিক বৈরিতা। বাংলাদেশের প্রথমসারির সবক’টি পত্রিকাই চলে কোনো না কোনো শিল্পগেষ্ঠির পৃষ্ঠপোষকতায়।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু মানবজমিন ব্যতিক্রম। এর পেছনে যিনি কাণ্ডারি হয়ে আছেন তিনি শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান চৌধুরী। একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে একটি পত্রিকা চালিয়ে নেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। মফস্বল সাংবাদিকতা দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে সম্পাদক-প্রধান সম্পাদক হওয়া মতি ভাই সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত কারিশমায় মানবজমিনের ঝাণ্ডা উঁচিয়ে রেখেছেন। পেছন থেকে সাহস, উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে তার মনোবল চাঙ্গা রেখেছেন প্রকাশক-সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী।

আমি অবশ্যই গর্ব বোধ করি এবং আমৃত্য করতেই থাকবো যে, এই ব্যাতিক্রমী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আমিও। আমার সাংবাদিক জীবনের বিরাট একটা সময় কেটেছে এই মানবজমিনের ছায়াতলে। ১৩টি বছর নিশ্চয় কম নয়। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেই ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে। ২০০৪-এর সেপ্টেম্বরে ক্রীড়া সম্পাদক এমএম কায়সার বিদায় নিয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় যোগ দিলে দায়িত্ব বর্তায় আমার ওপর। এরপর চিফ রিপোর্টার সারোয়ার হোসেন বিদায় নিলে ২০০৯ এর আগস্টে মতি ভাই আমাকে ওই পদে দায়িত্ব দেন। ঠিক ওই মাসেই পত্রিকার অফিস ওয়ালসো টাওয়ার থেকে স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমান ভবনে আসে এবং শুরু হয় রমজান মাস। এ রকম নানা কারণে, বিশেষ করে পারিবারিক কিছু সমস্যা এবং রাজনৈতিক ও মানবজমিনের অন্যান্য কিছু পরিবর্তনে আমি ওই সময় দায়িত্ব পালনের জন্য উপযুক্ত ছিলাম বলে প্রমাণ দিতে পারছিলাম না। ফলে অক্টোবরে আমি অব্যাহতি নিয়ে মানবজমিন ছেড়ে আমার দেশ পত্রিকায় যোগ দেই। মতি ভাই আমার ওপর পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও আস্থা হারাননি বলে মনে হয়। আর তাই ২০১১ এর শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা সামনে রেখে আমাকে আবার ফিরিয়ে নেন ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে। এরপর টানা কয়েক বছর কাটিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ব্যক্তিগত কিছু সমস্যায় ফের সরে দাঁড়াই মানবজমিন, এমনকি পেশা থেকেই।

ব্রডশিট থেকে ট্যাবলয়েডে এসে অনেক কিছু শিখেছি কোনো সন্দেহ নেই। আর মতিউর রহমান চৌধুরীর সংস্পর্শে এসে যদি কেউ কিছু শিখতে না পারে তবে তা ব্যর্থতাই বলতে হবে। আলোচিত সংবাদ তৈরির ক্ষেত্রে মতি ভাইয়ের জুড়ি মেলা ভার। তিনি অনেক অখ্যাত রিপোর্টারকে খ্যাতি এনে দিয়েছেন নতুন নতুন ধারণা দিয়ে রিপোর্ট করিয়ে। পুরো রিপোর্ট ঘষে মেজে নতুন করে লিখে রিপোর্টারের নামে ছাপিয়ে দেয়ার ঘটনা নিত্যদিনের। মানবজমিন অনেক রিপোর্টার তৈরি করলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের ধরে রাখা যায়নি। বাস্তবতা অনেক কঠিন। তাই সীমাবদ্ধতা ডিঙিয়ে চাওয়া পাওয়ার হিসাব মেলানো কঠিনই। তবে এটি ঠিক সংবাদমাধ্যম জগতে অনেক ভালো ভালো অবস্থানে উপবিষ্ট আছেন মানবজমিনে কাজ করে যাওয়া অনেকেই। তারা আজও মতি ভাইয়ের অবদান স্মরণ করে কৃতজ্ঞচিত্তে। এক ছাদের নিচে বসবাস করতে গেলেও ছোটবড় নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আর সংবাদপত্রের কাজের বেলায় তা আরও বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটুকু বের করে আনাটা সবসময়ই কষ্টসাধ্য। যে কাজ করে আর যে কাজ আদায় করে দুজনকেই থাকতে হয় চাপে। ফলে ধৈর্যের বাঁধ যে কখনো ভাঙবে না তার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। আর বাঁধ ভেঙে গেলেই তৈরি হয় নানা সমস্যা। এর একটি হলো ব্যক্তিগত তিক্ততা যা অনেক সময় বৈরিতায় রূপ নেয়, নষ্ট হয় কাজের পরিবেশ। চলতে থাকে মান অভিমান, রেষারেষি। 
এক যুগের বেশি সময় কাজের ফলে এমন অনেক অমø-মধুর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে আছি। নানা স্মৃতি বয়ে বেড়াবো আমৃত্য। মানবজমিন ছাড়লেও সহকর্মীদের মধ্যে ভালোবাসা আজও অনুভব করি। রাগ-অনুরাগ সবসময়ই আপেক্ষিক এবং সাময়িক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় অনেক কিছু। মানবজীবনের মতো মানবজমিনও তার শুরুর অনেক রূপ-লাবণ্য ধরে রাখতে পারেনি। সামাজিক-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এখন টিকে থাকাটাই বড় ব্যাপার। এই মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কামনা করি মানবজমিন একদিন ৫০ বছর পূর্তিও পালন করবে।
পরিশেষে আবারো মতি ভাই ও মাহবুবা ভাবীর জন্য অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সবার জন্য নিরন্তর শুভ কামনা। জয়তু মানবজমিন।

 

আপন আলোয় মানবজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

আপন আলোয় মানবজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status