আপন আলোয় মানবজমিন
বাংলাদেশ, নান্নু আর মানবজমিনের জয়!
শামছুল ইসলাম কবির, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
‘ওই যে কবির ভাই, আপনার বিমান টিকিটটা ওনাকে দিয়ে দিন’-আমাকে দেখিয়ে তারকা নান্নুর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললেন ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। স্মিত হেসে মিনহাজুল আবেদিন মাথা ঝাঁকালেন। অস্ফুটস্বরে বললেন, ‘আসলেই! আহ! কী যে ভালো লেগেছিল সেদিন।’ লাগবে নাই-বা কেন? নান্নুর বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার প্রায় পুরো কৃতিত্ব যে দেশের প্রথম ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিনের!
কথাবার্তায় সবসময় কিছুটা লাগামছাড়া ছিলেন আজকের প্রধান নির্বাচক নান্নু। দেশের প্রথম বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিসিবি’র তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক, কোচ গর্ডন গ্রিনিজের ‘সুনজর’ থেকে কাটা পড়ে নান্নুর নাম। বাদ যান চূড়ান্ত স্কোয়াড থেকে। এ নিয়ে নিশ্চুপ দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলো। কোনো কোনো সাংবাদিক তার রিফ্লেক্স নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। হাসাহাসি করলেন। আড়ালে নান্নুর বিপক্ষে কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারও। অথচ, ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফুলঝুরি ছুটাচ্ছিলেন। একের পর এক সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরিও নির্বাচকদের মন গলাতে পারেননি। যা ভালো লাগেনি মানবজমিনের। ক্রীড়া বিভাগের প্রধান শহিদুল আজম বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। কথা বললেন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে। সায় দিলেন তিনিও।
ব্যাস, শুরু হলো নান্নুকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেয়ার মানবজমিনের লড়াই। আজম ভাই, এমএম কায়সার ভাই, আমি, আজাদ মজুমদার, মাহফুজুর রহমান, জাভেদ খসরুর দৌড়ঝাঁপ! নান্নু যেখানে, আমরা সেখানে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তার পাশেই থাকলেন সাবেক তারকারা। তাতে বিসিবি’র বয়েই গেছে! নান্নুকে ছাড়াই চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে বিসিবি। অথচ, আগের দিনই সেঞ্চুরি করেন তিনি। ফুঁসে উঠেন সারা দেশের ক্রীড়ামোদিরা। প্রচণ্ড সমালোনায় টলানো গেল না কর্তাদের। সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী নিশ্চুপ। চাপের মুখে আশরাফুল হক জানিয়ে দিলেন, ‘আইসিসি’র কাছে চূড়ান্ত দল পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা বদলানোর আর সুযোগ নেই।’
নান্নুর প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। দুর্ভাগ্য তার-সবার এসব ভাবনায় ছেদ ঘটালো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। মূল স্কোয়াড পরিবর্তন করে। ইনজুরির কারণে আগে বাদ পড়া টম মুডিকে নেয়া হয় দলে। ব্যাস, তুরুপের তাস হিসেবে এটাকেই ইস্যু বানায় মানবজমিন। সৃষ্টি হয় নান্নুকে দলে নেয়ার আন্দোলন। তৈরি হয় জনমত। শেষতক মিডিয়া, সরকার আর জনমতের কাছে হার মানে বিসিবি। বলির পাঠা হন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাহাঙ্গীর আলম। ঠাঁই হয় দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর। মানবজমিনের মাধ্যমে গড়া আন্দোলন যে ভুল ছিল না, ভালোভাবেই প্রমাণ করেন তিনি। নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টানা হার। তৃতীয় ম্যাচেই জ্বলে উঠলেন নান্নু। দেশকে আনন্দে ভাসিয়ে করলেন হার না মানা ৬৮ রান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পেলো ২২ রানের অবিস্মরণীয় জয়, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।ম্যাচ শেষ। বিসিবি অফিস ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। মিষ্টিমুখ আর অভিনন্দন জানিয়ে জড়িয়ে ধরলেন অনেকেই। বাংলাদেশ, নান্নুর সঙ্গে এ জয় মানবজমিনেরও জানাতে ভুললেন না অনেকেই। আহ! কী দারুণ অনুভূতি!
জন্মের আগ থেকে ২০০১’র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বপ্নের মতো সময় কাটিয়েছি রিপোর্টার হিসেবে। যেখানেই অনিয়ম, মানবজমিন টিমের কোনো না কোনো সদস্য উপস্থিত সেখানে। স্কুপ, এক্সক্লুসিভের নেশা ভালোভাবেই ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন আজম ভাই। পরে কায়সার ভাইও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন ভালোভাবেই। কতো অসাধারণ, আলোচিত সব রিপোর্টের জন্ম দেয়া মানবজমিন ক্রীড়া বিভাগের অংশ হতে পারা ছিল গর্বের, সম্মানের!