দেশ বিদেশ
ঢাকায় ভুল চিকিৎসায় বিদেশি পাইলটের মৃত্যুর অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবারগাল্ফ এয়ারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোহান্নাদ ইউসুফ আল হিন্দি ঢাকার একটি হাসপাতালে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে দাবি করেছেন তারই বোন। গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তার বোন তালা এলহেনডি এমনটি দাবি করেন। তারা দুজনই যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের দ্বৈত নাগরিক। ইউসুফ গালফ এয়ারের পাইলট ছিলেন। আর তালা এলহেনডি বৃটিশ সরকারের হয়ে কাজ করেন। ভাইয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পর তিনি বাংলাদেশে ছুটে আসেন। খোঁজখবর নিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল ও গালফ এয়ার কর্তৃপক্ষের অবহেলার নানা প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। তালা এলহেন্ডি বলেন, আমার ভাই গত ১৪ই ডিসেম্বর রাতে ঢাকার মেরিডিয়ান হোটেলে ছিলেন। রাত পৌনে ৩টায় উঠে তিনি ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত হন। এরপর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তখন তিনি পড়ে যান। বিমানবন্দরে আমার ভাই প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হন। তখন তিনি পাঁচ মিনিট কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) পেয়েছেন। তার রক্তচাপের অবনতি হতে থাকে। এরপর তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে তিনি পরপর চারবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হন। এরপর ১৫ই ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে মারা যান। তিনি বলেন, চিকিৎসা প্রক্রিয়ার সময় তাকে ওষুধ প্রয়োগ করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, আমার ভাইয়ের চিকিৎসা করেছেন ডা. কায়সার নাসির। কিন্তু আমার ভাইয়ের পরিবারের কাছে চিকিৎসার যে কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে, তাতে তার নাম পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমার ভাইয়ের অ্যাজমা ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা বলেছে যে- ভুল করে এটা বাদ পড়ে গেছে। ফোনে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। তিনি সশরীরে রোগীর কাছে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি আরও বলেন, সকাল পৌনে ৬টায় আমার ভাইকে সিসিএমে স্থানান্তর করা হয়। এটির নাম কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে সেখানে অন্তত একজন কার্ডিওলজিস্ট ও তাৎক্ষণিক বিশেষ সেবা দেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু অদক্ষ চিকিৎসকরা অবহেলা করেছেন। কার্ডিওলজি কেয়ারের জন্য একটি ইউনিট করা হলেও সেখানে কোনো কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন না। সকাল পৌনে ৭টায় দ্বিতীয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় আমার ভাইয়ের। ২০ মিনিট পর তৃতীয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট করেন তিনি। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে আমার ভাইয়ের ৩বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। কোনো কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ঢাকা শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ ইউনিট আবার ব্যর্থ হয়েছে। যা সিসিএম কর্মীদের নিছক ও চরম অবহেলা ছাড়া কিছু না। তারা একমাত্র যে পদক্ষেপটি নিয়েছে, তা হলো আরিএসসি-এর সঙ্গে ১৫ মিনিট সিপিআর করেছে। আমার ভাই তৃতীয়বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট করলে সোয়া দুই ঘণ্টা পর্যন্ত তাকে কোনো চিকিৎসা সেবা ছাড়াই ফেলে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি সঠিক চিকিৎসাবঞ্চিত ছিলেন। গালফ এয়ারও তার ভাইয়ের চিকিৎসায় অবহেলা করেছে বলে দাবি করেছেন তালা এলহেনডি। তিনি বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর আমার ভাই অচেতন হয়ে পড়েন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেই অবস্থায়ই ছিলেন। তিনি গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইটে ওঠার সময় এটা হয়েছে। তিনি এই ফ্লাইটের একজন পাইলট ছিলেন। নিজের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। কাজেই গালফ এয়ার কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল তিনি যাতে সঠিক চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া গালফ এয়ারের কাছে থাকা আমার ভাইয়ের অতীতের চিকিৎসার ইতিহাস ইউনাইটেড হাসপাতালে জমা দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা তা করেননি। পরিবারের অনুপস্থিতিতে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে কোনো কর্মকর্তাকে হাসপাতালে পাঠায়নি গালফ এয়ার। সংবাদ সম্মেলন শেষে কয়েকটি দাবি তুলে তালা এলহেনডি বলেন, আমার ভাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ নির্ভেজাল রিপোর্ট ও সিসিটিভি’র ফুটেজ চাই। ভুক্তভোগীর বোন হিসেবে আমার ভাইয়ের চিকিৎসার আদ্যোপান্ত জানতে চাই। কার মাধ্যমে এসব হয়েছে, তাও জানার অধিকার আমার আছে। হাসপাতাল বলছে, আমার ভাইয়ের চিকিৎসার কাগজপত্র গোপনীয় নথি। তারা চিকিৎসার কাগজপত্রে কারসাজি করেছে। আমার ভাইয়ের নির্ভেজাল কাগজপত্র হাতে পাওয়া অবৈধ কিংবা অনৈতিক কিছু না। এ রকম অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে দৃষ্টান্তমূলক জরিমানা কিংবা ক্ষতিপূরণ চাই।