ঢাকা, ২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাবান ১৪৪৪ হিঃ

দেশ বিদেশ

চসিকে এমন ঘটনা ঘটেনি আর

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার

রোববার বিকাল পৌনে ৪টা। নগরের টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীর ৪১০ নম্বর কক্ষের সামনে আসেন ১৫-২০ জন ঠিকাদার। এ সময় তাদের হাতে ছিল লোহার রড ও অন্যান্য দেশি অস্ত্রশস্ত্র। তারা রুমের ভেতর প্রবেশ করতে চাইলে অফিস সহায়ক তিলক বলেন, ‘স্যার ভাত খাবেন’। কিন্তু এই বিক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা তাকে ধাক্কা দিয়ে রুমে প্রবেশ করেন। প্রথমে তারা গোলাম ইয়াজদানীর সামনের চেয়ারে বসে বলেন, ‘আপনি সৎ, ভালো লোক’- এগুলো বলে কটাক্ষ করেন। তারা সবাই মিলে বলতে থাকেন, সব টেন্ডার আমাদেরকে দিতে হবে। আমাদের বাইরে কেউ টেন্ডার পেলে ভালো হবে না। আর যদি আমরা সব টেন্ডার না পায় তাহলে তাকে জানে মেরে ফেলবো। এরপর হঠাৎ ঠিকাদার কঙ্কন, ফেরদৌস, সুভাষ ও আলমগীর গোলাম ইয়াজদানীর শার্টের কলার ধরে টেনে ঘুষি মারেন।

বিজ্ঞাপন
তারা সবাই মিলে তার শার্ট টেনে ছিঁড়ে ফেলে ও প্যান্টের বেল্ট খুলে ফেলেন। একপর্যায়ে অফিসের অন্য স্টাফরা এলে হামলাকারীরা বের হয়ে চলে যায়। তবে এই হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের আটকানোর চেষ্টা করেনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীর ওপর ঠিকাদারদের হামলার ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। চসিক’র ইতিহাসে এ রকম ঘটনা আর ঘটেনি। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে একটা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার ভিত্তিতে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এছাড়া হামলায় বিএনপি সমর্থক এক ঠিকাদারও জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার রাতে খুলশী থানার পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সঞ্জয় কুমার ভৌমিক ওরফে কঙ্কন (৩৫), সুভাষ মজুমদার (৩২), নাজমুল হাসান ফিরোজ (৫০) ও মাহমুদ উল্লাহ (৪০)। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় রাতে চসিক’র নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- শাহ আমানত ট্রেডার্সের মালিক সঞ্জয় কুমার ভৌমিক ওরফে কঙ্কন, এসজে ট্রেডার্সের মালিক সাহাব উদ্দিন, মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস, শাহ আমানত ট্রেডার্সের সুভাষ মল্লিক, মেসার্স খান করপোরেশনের হাবিব উল্ল্যাহ খান, নাজিম এন্ড ব্রাদার্সের নাজিম, মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজের নাজমুল হাসান ফিরোজ, ইফতেখার এন্ড ট্রেডার্সের ইউসুফ ও জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিষ বাবু ও অজ্ঞাত ঠিকানার ফরহাদ। এদের মধ্যে সঞ্জয় কুমার ভৌমিক  নগর ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক ও এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি। জানা যায়, হামলায় নেতৃত্ব দেয়া শাহ আমানত ট্রেডার্সের সঞ্জয় ভৌমিক কঙ্কন এক সময় এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে নগর ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে পরিচিত কঙ্কন নগর যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। সূত্রমতে, চসিক’র নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে পার্টনারে সিটি করপোরেশনের বেশকিছু ঠিকাদারি কাজ করেছেন কঙ্কন। বর্তমানে তিনি সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর অনুসারী বলে নিজেকে পরিচয় দেন। রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় ছবি তুলে তাকে ফেসবুকে প্রচার করতে দেখা যায়। শাহ আমানত ট্রেডার্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সুভাষ। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী তিনিও প্রকল্প পরিচালকের উপর হামলার সাথে জড়িত। সুভাষ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছাকাছি থাকার কারণে ঠিকাদারিতে জড়িয়ে পড়েন। ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে গিয়ে ককটেল বিস্ফোরণে তার একটি হাত ঝলকে যাওয়ার কারণে সিটি করপোরেশনের বর্তমানে মেয়র রেজাউল করিমের সহানুভূতি পেয়েছেন তিনি। জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের আশীষ বাবু যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে। চসিকের বিভিন্ন প্রকল্প কাজ করার কারণে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে- এমন তথ্য দিয়েছে চসিক’র প্রকৌশল বিভাগের একাধিক সূত্র। এদিকে হামলার ঘটনায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার ঠিকাদার সাহাবুদ্দিনের নাম উল্লেখ করেন। তাদের দাবি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। তারা সাহাবুদ্দিনকে সাবেক বিএনপি ক্যাডার বলেও উল্লেখ করেন। তবে মানবজমিন-এর হাতে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঠিকাদার সঞ্জয় কুমার ভৌমিক ও সুভাষ মজুমদারের নেতৃত্বে এই হামলা চালায় ১৫-২০জন ঠিকাদার। সিসিটিভি ফুটেজে কোথাও সাহাবুদ্দিনের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়নি।  এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার সঞ্জয় ভৌমিক কঙ্কন গণমাধ্যমকে জানান, তিনি করপোরেশনে গিয়েছিলেন। প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গেও দেখা করেছেন। কাজ না পেলে দরপত্র জমা দেওয়ার সময় যে পে-অর্ডার দিয়েছিলেন, তা ফেরত দিচ্ছেন না। কেন ফেরত দিচ্ছেন না, তা জানতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো হামলা বা মারধরের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।  এদিকে হামলার ঘটনায় প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।  এই বিষয়ে চসিক’র রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ মানবজমিনকে বলেন,  রোববার প্রকল্প পরিচালকের কক্ষে হামলার ঘটনায় আমাকে প্রধান করে একটি করা হয়েছে। এতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ, আইন কর্মকর্তা মনীষা মহাজনকে সদস্য করা হয়েছে। আমাদেরকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, রোববার বিকাল পৌনে চারটার দিকে চসিক ভবনের চতুর্থ তলার ২৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীর ওপর হামলা করে ১৫-২০জন ঠিকাদার। এ সময় তারা প্রকল্প পরিচালক ইয়াজদানীকে মারধরের পাশাপাশি তার রুমের নামফলক, টেবিলের কাঁচ ভেঙে ফেলেন।

পাঠকের মতামত

এগুলো নতুন কিছু না । বিগত 14 বছর ধরে সব প্রকল্প এভাবেই চলছে । চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি সহ নানা অপকর্ম করে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতা, পাতি নেতারা অঢেল টাকার মালিক হয়েছে । লক্ষ কোটি টাকা পাচার তো আর এমনি এমনি হয়নি। এই লুটেরার দল কোন দিন চাইবেনা ক্ষমতা হারাতে ।

abir
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৯:৫৫ অপরাহ্ন

এরা প্রভাবশালী!! এই প্রভাবের খুটি কোথায় তা প্রকাশ করার দায়িত্ব সাংবাদিকদের।

ইয়াসীন খান
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৯:১৭ অপরাহ্ন

এদের প্রকল্পের ঠিকাদারি দিলে রডের পরিবর্তে বাঁশ দিবে । ২,৫০০ কোটি টাকাই সমুদ্রের জলে ফেলা হবে । আওয়ামীলীগ এদের কন্ট্রোল না করার জন্য একদিন জবাবদিহি করতে হবে । তখন শেখ হাসিনাকে দোষারোপ করা হবে এদের অন্যায়ের জন্য। তাই সময় থাকতে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে ।

Kazi
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৫:৫৮ অপরাহ্ন

এগুলো নতুন কিছু না আমরা এগুলো দেখতে দেখতে আর এসব নিয়ে আলাপ করিনা বিস্তারিত বলতে গিয়ে জীবনে ঝুকি নিতে চাই না এখানে সমাপ্ত করলাম

Dasdotto
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ১:২৩ অপরাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status