ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

ফুটবল বিশ্বকাপ

মেসিই ‘হিরো’

স্পোর্টস ডেস্ক
২০ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবারmzamin

বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের ‘ওম শান্তি ওম’ সিনেমার কথা মনে আছে? ব্লকবাস্টার মুভিটির এক দৃশ্যে ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতার পর ‘হিরো’ বলেন, ‘তোমাকে পেতে এত তুমুল চেষ্টা করেছি যে, সবকিছু আমাকে তোমার সঙ্গে মেলানোর ষড়যন্ত্রে লেগে গেলো।’ সেই সংলাপের যথার্থতা মিলেছে বিশ্বকাপ শিরোপায় লিওনেল মেসির চুমু অঙ্কনে। স্বর্ণের ট্রফিটা যেন বিশ্বের সেরা ফুটবলারের ঠোঁটের স্পর্শ পেতে যুগ যুগ ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল।
আর্জেন্টিনার শহর রোজারিও থেকে ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসিকে খুঁজে বের করেছিল বার্সেলোনা। ব্লাউগ্রানাদের যুব একাডেমি লা মাসিয়ায় খেলার সময় এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেছিলেন, ‘আমার আদর্শ ম্যারাডোনা। আমার স্বপ্ন আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা।’ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেসির স্বপ্নটাও বড় হয়েছে, বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। তার শুরুটা হয়েছিল ২০০৬ বিশ্বকাপে। আসরে গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় ম্যাচে অভিষেক হয় মেসির। সার্বিয়া অ্যান্ড মন্টেনিগ্রোর বিপক্ষে গোল করে অভিষেক রাঙিয়েছিলেন তরুণ মেসি। গড়েছিলেন রেকর্ড। বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ আর্জেন্টাইন হিসেবে গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। ২০০৭ কোপা আমেরিকায় তিনি সেরা যুব খেলোয়াড়ের পুরস্কার কুড়ান। ওই আসরে আর্জেন্টিনা রানার্সআপ হয়। ২০০৮ সালে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হয় মেসি-ডি মারিয়ারা। তরুণ মেসি বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। ২০০৯ সালে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম ব্যালন ডি’অর জেতেন তিনি। এরপর টানা ২০১২ সাল পর্যন্ত আরো তিনটি বর্ষসেরার পুরস্কার জেতেন মেসি। ২০১০ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়ে আর্জেন্টিনা। সেই আসরে কোনো গোল পাননি মেসি। ২০১১ সালের আগস্টে মাত্র ২৪ বছর বয়সে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক হন তিনি। 
ক্লাব ক্যারিয়ারে ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও জাতীয় দলে  নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিলেন মেসি। ছন্দহীনতায় আর্জেন্টাইন সমর্থকদের দুয়ো ধ্বনি শুনতে হয়েছে তাকে। আর্জেন্টিনায় তার ছবি পোড়ানোর ঘটনাও রয়েছে। ২০১১ সালে কোপা আমেরিকায় কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর এক আর্জেন্টিনার এক সমর্থক বলেছিলেন, ‘সে একটা লুজার। বলই পায় না। সে অলস এবং মিথ্যাবাদী।’ আরেকজন বলেছিলেন, ‘মাঠের মধ্যে হাঁটে মেসি। সে কখনোই ম্যারাডোনার সমতুল্য হতে পারে না।’ পরের বছর ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন মেসি। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটিতে ব্রাজিলকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসি ম্যাজিকেই ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল আলবিসেলেস্তেরা। সেবার ৪ গোল করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন মেসি। তবে জার্মানিকে হারিযে শিরোপা জিততে না পারায়র  আক্ষেপ মেসির গোল্ডেন বুটের আনন্দে পানি ঢেলে দেয়। মলিন মুখে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে পঞ্চমবারের মতো বর্ষসেরা হন মেসি। ব্যালন ডি’অর পুরস্কার নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মেসি বলেছিলেন, ‘পাঁচটি ব্যালন ডি’অরের পরিবর্তে হলেও একটি বিশ্বকাপ চান তিনি।’ কিন্তু বিশ্বকাপ তো দূরে; আন্তর্জাতিক শিরোপার দেখাই পাচ্ছিলেন না মেসি। বারবার ফাইনালে উঠে ব্যর্থ হচ্ছিল মেসির আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে টানা দু’টি কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্যর্থ হয় আলবিসেলেস্তেরা। এরপর আচমকা অবসরের ঘোষণা দেন মেসি। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার বলেছিলেন, ‘জাতীয় দলে আমার সময় শেষ। নিজের সর্বোচ্চ লড়াইটা আমি করেছি। আমি চেষ্টা করেছি। এটা আমার চতুর্থ ফাইনাল যেটা আমি জিততে পারিনি। আমি যা পারি করেছি। এই ব্যর্থতা অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি কষ্টদায়ক।’ মেসির অবসরের খবরে ছেয়ে যায় দেশ-বিদেশের পত্রিকা। তবে কয়েক মাস পরেই তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলে পুনরায় জাতীয় দলের ত্রাতা হয়ে ফিরে আসেন। ২০১৮ বিশ্বকাপে বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কায় পড়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে শেষ সুযোগটা কাজে লাগান অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে দলকে এনে দেন রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট। তবে মেসি নির্ভর আর্জেন্টিনা রাশিয়ায় ব্যর্থ হয়। কোনোরকম দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছলেও ফ্রান্সের কাছে পরাস্ত হয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয় আর্জেন্টিনার।

 

 

ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে আরও পড়ুন

ফুটবল বিশ্বকাপ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status