ফুটবল বিশ্বকাপ
কথা রাখলেন মার্টিনেজ
স্পোর্টস ডেস্ক
১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার
বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখার আগেই মেসিকে ট্রফি উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কোপা জয়ের পর এই গোলরক্ষক বলেছিলেন মেসির জন্য জীবনও দিতে পারি আমরা। মার্টিনেজকে জীবন দিতে হয়নি। মাঠে অনবদ নৈপুণ্যেই মেসির হাতে সোনালি ট্রফি তুলে দিতে পেরেছেন এই গোলরক্ষক। ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে এক গোল বাঁচান মার্টিনেজ। শেষে কোম্যানের পেনাল্টি ঠেকিয়ে নায়ক বনে যান। ম্যাচ শেষে অশ্রুসিক্ত চোখে এই বিশ্বকাপ তার পরিবারকে উৎসর্গ করে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই দরিদ্র জায়গা থেকে এসেছি। যখন আমি তরুণ, ইংল্যান্ডে চলে যাই। আমি এই জয় আমার পরিবারকে উৎসর্গ করতে চাই।’
পুরো ম্যাচটা যেন এক রোলার কোস্টার! ম্যাচের গতি-প্রকৃতিই বোঝা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একবার আর্জেন্টিনা গোল করে তো আরেকবার শোধ করে ফ্রান্স। কিলিয়ান এমবাপ্পে ফাইনালের ট্র্যাজিক হিরো। হ্যাটট্রিক করেও হারলেন। ম্যাচটা গড়ালো টাইব্রেকারে। সেখানেই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর নায়কে পরিণত হলেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কিংসলে কোম্যানের পেনাল্টিটি ঠেকিয়েই তিনি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসেন। এরপর অরিলিয়েন চুয়ামেনি যে শটটি নিয়েছিলেন মার্টিনেজকে ঠেকানোর জন্য সেটি হয়ে গেল মিস। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো ফাইনালেও শেষ মুহূর্তের নায়কে মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের আক্ষেপ কাটানোর পর মার্টিনেজ বলেন, ‘পেনাল্টি শুটআউট জুড়ে আমি শান্ত ছিলাম। তারা আমাকে তিনটি গোল দিয়েছে। তবে আমার মনে হয়, এরপরও আমি সবকিছু ঠিকঠাক করেছি। শুট আউটেও তাই।’
প্রতিটি নায়কের উত্থানের পিছনে থাকে অনেক বঞ্চনা, অনেক ঘাম ঝরানোর গল্প। এমিলিয়ানো মার্টিনেজেরও তাই। ২০১১ সালে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। শিরোনাম হতে নিলেন দশ বছর। চিলির বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অভিষেক ঘটে তার। এরপর কোপা আমেরিকায় মার্টিনেজের উপরেই আস্থা রাখেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে তিনটি শট বাঁচিয়ে ফাইনালে তোলেন আর্জেন্টিনাকে। কোপায় সেরা গোলরক্ষকের সম্মান পান মার্টিনেজ। এবার বিশ্বকাপেও পেলেন সেরা গোলরক্ষকের স্বীকৃতি।
ক্লাব ফুটবলেও মার্টিনেজ কখনওই প্রথম পছন্দ ছিলেন না। কোনো গোলরক্ষক চোট পেলে তবেই সুযোগ পেতেন তিনি। গয়কোচিয়াও প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক ছিলেন না ইতালি বিশ্বকাপে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে ম্যাচে চোট পান দলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক নেরি পুম্পিদু। তার পর থেকে দলের একনম্বর গোলরক্ষক হন গয়কোচিয়া। পেনাল্টি শুটআউটে গোল বাঁচিয়ে গয়কোচিয়া বনে যান নায়ক। মার্টিনেজও তাই। দেশে তিনি এখন নায়ক।
