ফুটবল বিশ্বকাপ
এটা নিয়তি নির্ধারিত!
সাজেদুল হক
(২ বছর আগে) ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার, ১:৩৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

আপনি কি নিয়তিতে বিশ্বাস করেন? করতে পারেন, আবার নাও পারেন। তবে গতরাতে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে যা হলো তারপরও ভাগ্যকে বিশ্বাস না করা খুবই কঠিন। ফাইনাল তখনও চলছিল। ঢাকায় এক সিনিয়র সাংবাদিকের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসের অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, সকল ফাইনালের মা। টিভি পর্দায় ১২০ মিনিট খেলা আর টাইব্রেকার দেখার পর কিবোর্ডে আঙ্গুল চলছে না। কিছু লেখা সত্যিই কঠিন! মনে হয় যেন, পরাবাস্তব কোনো সিনেমা দেখে উঠলাম। সবকিছু কেউ একজন ঠিক করে রেখেছেন। দূর থেকে। খুব দূর থেকে। কিংবা কাছ থেকে। এতো কাছে যে আমরা বুঁঝতে পারি না। চিত্রনাট্য লেখা রয়েছে। সে অনুযায়ী চলছে। সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ তা দেখছেন। তাদের কিছুই করার নেই।
খেলা শুরুর আগেই বলা হচ্ছিল এটি মেসি বনাম এমবাপ্পের লড়াই। কিন্তু প্রথমার্ধে খেলা দেখে কেই বা তা বলবে! বরং পুরোটা সময় পায়ের জাদু দেখালেন ডি মারিয়া। এ ফাইনালে তার খেলা নিশ্চিত ছিল না। ২০১৪ সালে ফাইনালে ওঠেও ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি। গতরাতে যেন তার সব হিসাব মেটালেন। নাকি নিয়তি তাকে তার প্রাপ্য ফিরিয়ে দিলো। একটি পেনাল্টি আদায় করলেন। নিজে গোলও করলেন। এতোটা আবেগি হয়ে পড়লেন যে চোখে পানি দেখা গেলো। তবে গল্পটা সেখানে শেষ হয়নি। এমনটা হয়ে গেলে তো আর অলৌকিক জগত থেকে কারও চিত্রনাট্য লেখার প্রয়োজন ছিল না। আর্জেন্টাইন কোচের কি মনে হলো! তিনি ডি মারিয়াকে উঠিয়ে নিলেন। হয়তো বয়স বা ইনজুরি ছিল বিবেচনায়। এটা কেন মেসি বনাম এমবাপ্পের লড়াই বলা হচ্ছিল তা টের পাওয়া গেলো একটু পরেই। পুরো ম্যাচেই খুব একটা বল পাচ্ছিলেন না। কিন্তু প্যারালাল কোনো জগত থেকে এমবাপ্পে হঠাৎ নেমে এলেন। ৭০ সেকেন্ডের মধ্যে দুই গোল করলেন। সবকিছু পাল্টে গেলো মুহূর্তে। মেসির চেহারাও। তবে মহানায়করা এতো সহজে মঞ্চ ছাড়েন না। ছাড়লে তো তারা আমার আর আপনার মতোই হতেন! নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে মেসির একটি জোরালো শট ফিরিয়ে দেন লরিস। তবে ১০৮ মিনিটে আর পারেননি। ফের মেসির গোল। মনে হলো খেলা শেষ। কিন্তু অলৌকিক চিত্রনাট্যের সেখানেই শেষ নয়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল কোটি কোটি মানুষের। নার্ভের এমন পরীক্ষাও নেয় ফুটবল। শেষ মুহূর্তে আবার পেনাল্টি থেকে এমবাপ্পের গোল। অর্ধ শতাব্দির বেশি সময় পর বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক। সহকর্মীদের অনেকে তখনও সংশয়ে। কী হচ্ছে এসব! বাস্তব? নাকি কল্পনা। বলছিলাম, এটা নিয়তি নির্ধারিত। বিশ্বকাপ মেসিই জিতবেন। হলোও তাই! মেসির জন্য জীবন দিতে চেয়েছিলেন মার্টিনেজ। ভাগ্য পরীক্ষায় দুটি শট আর শেষ দিকে প্রায় নিশ্চিত একটি গোল ঠেকিয়ে নায়ক বনে গেলেন।
লিও’র শোকেসে অনেক ট্রফি। কিন্তু বিশ্বকাপের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। মারাকানা তার চোখের পানি দেখেছিল। হিগুয়েইনের সেই অবিশ্বাস্য মিস। কোনোদিনও ভোলা যাবে না। দিনের পর দিন। মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। মেসি আমাদের বিনোদন দিয়ে গেছেন। তার বা পায়ের তৈরি শিল্পের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। সেদিনও তার খেলা দেখে মনে হয়েছিল, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির চিত্রকর্ম, নুসরাত ফতেহ আলীর সংগীত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। না, গতরাতে মেসি পুরোটা ক্লাসিক ছিলেন না। কিন্তু এটিই তার জীবনের সবচেয়ে মহিমাময় রাত। তার হাতে বিশ্বকাপ। ভাষ্যকার বলছিলেন, মেসির ম্যাজিকাল নাইট। এই একটি রাতের বিনিময়ে তিনি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করতে পারেন। অনেক সময় একটি কথা বারবার লিখলেও ক্লিশে লাগে না। সত্যি বলছি, মেসির হাতে বিশ্বকাপ যাবে এটি নিয়তি নির্ধারিত। মানুষের প্রার্থনা কখনও বিফল হয় না। প্রিয়, মেসি আপনাকে অভিনন্দন। আপনার হাতে উঠতে পেরে বিশ্বকাপ নিজেও আনন্দিত!