ফুটবল বিশ্বকাপ
‘মরক্কো দেখিয়েছে আফ্রিকানরাও পারে’
স্পোর্টস ডেস্ক
১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের পর টকস্পোর্টের উপস্থাপক আদ্রিয়ান ডারহাম বলেন, ‘ফ্রান্স জিতেছে ম্যাচ, আর মরক্কো জিতেছে হৃদয়।’ সত্যিই তাই। বিশ্বকাপ শুরুর আগে সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। মরক্কোর ফাইনাল খেলার পক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ০.০১ শতাংশ। তবে আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বমঞ্চে সেমিফাইনালে লড়েছে মরোক্কানরা। অসামান্য সাফল্যের পর মরক্কো কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি বললেন, ‘মরক্কো একদিন বিশ্বকাপ জিতবে।’ কাতার বিশ্বকাপের সেরা চমক মরক্কো। গ্রুপপর্ব থেকে কোয়ার্র্টার ফাইনাল- বেলজিয়াম, স্পেন এবং পর্তুগালের মতো বড় দলকে হারিয়ে দেয় মরক্কো। পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি গোল হজম করেছিল দলটি। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারলেও পায়ে পায়ে লড়াই করেছে জিয়াশ-হাকিমিরা। তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মরক্কোকে হারাতে বেগ পেতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে। ম্যাচ শেষে মরক্কো কোচ রেগরাগি বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগেও আমাদের সম্ভাবনা ০.০১ শতাংশ ছিল। কিন্তু আমরা চতুর্থ হয়েছি। এখন আমরা বিশ্বের সেরা চার দলের একটি। বিশ্বকাপের আগেও আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমি এটিই বলতাম।’ রেগরাগি বলেন, ‘ক্রোয়েশিয়া বিশ্বসেরা তিন দলের একটি। তারা আমাদের চেয়ে কিছুটা শক্তিশালী, যেমনটা ফ্রান্স ছিল। এটা আমাদের জন্য অসম্মানজনক নয়। এই পর্যায়ে পৌঁছতে ১০ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেছি আমরা। আমরা বেলজিয়াম, স্পেন এবং পর্তুগাল ম্যাচ দিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। আমরা দেখিয়েছি, বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে পায়ে পায়ে লড়াই করতে পারি।’ রেগরাগি মনে করেন, মরক্কোর সাফল্য অন্যান্য আফ্রিকান দলগুলোকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন ‘এটা আফ্রিকান দেশগুলোকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। ইউরোপিয়ান দলগুলোর ডিএনএতে বিশ্বকাপের লাস্ট স্টেজে পৌঁছানোর গুণ রয়েছে। আমাদেরও উন্নতি করতে হবে। একদিন বিশ্বকাপ জিতবো আমরা।’ কাতারে অসামান্য অর্জন করে বিশ্বের ফুটবল-প্রেমীদের মন কেড়ে নিয়েছে মরক্কো। দেশ-বিদেশের ফুটবল ভক্তদের অকুণ্ঠ সমর্থনে মুগ্ধ রেগরাগি। তিনি বলেন, ‘কিছু ছবি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমি দেখেছি রাস্তায় শিশু থেকে বৃদ্ধরা আমাদের জয় উদ্যাপন করেছে। ফুটবল আপনাকে স্বপ্ন দেখাতে পারে। আর আমরা সেই স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি, যা অমূল্য। আমার কাছে এটা বিশ্বকাপ জয়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন না হয়েও মরক্কো যে বিশ্ব জয় করেছে, তা বোঝা যায় নাইজেরিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক ওলুওয়াশিনা ওকেলেজির কথায়। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি গোটা বিশ্ব মরক্কোর পাশে রয়েছে। যুগ যুগ ধরে আফ্রিকান দলগুলো সমালোচিত হয়ে আসছে। তবে এই টুর্নামেন্টে মরক্কো দেখিয়েছে আফ্রিকাও পারে।’ ওকেলেজি বলেন, ‘অ্যাটলাস লায়ানরা সাফল্যের গর্জন করেছে। বিশ্বকাপে নিজেদের মহাদেশকে গর্বিত করেছে। এতে সকলেই আনন্দিত। মরক্কোর সাফল্য গোটা আফ্রিকা মহাদেশের।’ বিশ্বকাপে প্রত্যেক গোল কিংবা জয়ের পর সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়েছেন মরোক্কান ফুটবলাররা। ম্যাচ শুরুর আগে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে দেখা গেছে মরক্কোর মুসলিম খেলোয়াড়দের। নির্যাতিত মুসলিম জাতি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সম্প্রীতি দেখাতে তাদের পতাকা উড়িয়েছেন হাকিমি-জিয়াশরা। দোনিয়া নামের এক ইতালিয়ান নারী আল- জাজিরাকে বলেন, ‘তারা অবিশ্বাস্য একটি দল। তাদের একসঙ্গে প্রার্থনা করার ছবি, তাদের একতা... সবকিছু দেখে মনে হয়েছে যেন তারা একই পরিবারের সদস্য।’ হাকিম জিয়াশদের জয় উদ্যাপনে মরক্কোর সঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক বৈরিতার কথা চিন্তা করেননি দুই আলজেরিয়ান সেনা সদস্য। যে কারণে শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছে তাদের। শুধু তারাই না, বিশ্বের নানা প্রান্তে মরক্কোর জয় উদ্যাপন করা হয়েছে। দোনিয়া বলেন, ‘আমি ছবি এবং ভিডিওতে দেখেছি যে, গাজা, কায়রোসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মরক্কোর জয় উদ্যাপন করেছেন। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারি না।’