কাতার থেকে
বিতর্কিত VAR রেফারি, সোশ্যাল মিডিয়ার নানা কারসাজি
মতিউর রহমান চৌধুরী, কাতার
(২ বছর আগে) ৩ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার, ২:২০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:২৫ পূর্বাহ্ন

ফুটবল নিষ্ঠুর। হাসি, কান্নার। এরমধ্যে রেফারির সিদ্ধান্ত যদি বিতর্কিত হয় তাহলে তো কথাই নেই। তখন এটা রূপ নেয় খেলার মাঠ ছাড়িয়ে তামাম দুনিয়ায়। নানা যুক্তি হাজির করে পরাজয়ের শোধ নিতে চান অনেকেই। আগে রেফারির সিদ্ধান্ত ছিল একক, একতরফা। কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন না। কিন্তু সমালোচনা হতো, তবে তাতে কাজ হতো না। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি চালু হওয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। আবার সমালোচনারও জন্ম দেয়। ২০১৮ সনে এই VAR পদ্ধতি চালু হয়। নেদারল্যান্ডস ফুটবল এসোসিয়েশন এই ঐতিহাসিক পদ্ধতিটি প্রথম কার্যকর করেছিল। বলে রাখা ভালো, ইচ্ছা করলে রেফারি VAR-এর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারেন। আবার রেফারির সিদ্ধান্ত VAR-ও বাতিল করতে পারে। অফসাইড, হ্যান্ডবল, ফাউল এসবই মূলত চেক করে থাকে VAR। ২০১৯ এবং ’২০-এ ২৪০০ ঘটনার ফয়সালা হয়েছে। VAR নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক জারি রয়েছে। স্পেন-জাপানের খেলা ঘিরেই এখন যতসব বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়া এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে। সরাসরি বলা হচ্ছে, তানাকার দেয়া গোলটি লাইনের বাইরে চলে গিয়েছিল। যদিও এ নিয়ে হরেকরকম যুক্তিতর্ক। এর মধ্যে টেম্পারিংয়ের অভিযোগও উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া এমনভাবে বলের স্থানটি উপস্থাপন করছে তাতে মনে হয়, বলটি পুরোপুরি বাইরে ছিল। যা সত্য নয়। ভিডিও রেফারি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন গোলের। রেফারি এখানে দায় এড়াবেন কীভাবে। আল বাইত স্টেডিয়ামে তখন জার্মানি- কোস্টারিকার খেলা হচ্ছে। খেলার চাবি ছিল জার্মানির হাতে। খেলায় তারা এগিয়ে ছিল ৪-২ গোলে। কিন্তু স্পেন-জাপানের খেলার ফলাফল যদি ড্র হতো তাহলে চারবারের বিশ্বকাপজয়ী জার্মানির ভাগ্য খুলে যেত। এ কারণেই এই গোলটি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বিতর্কের মধ্যেই শুক্রবার ফিফা ভিডিও ম্যাচের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের গোল লাইনের ক্যামেরার ছবি ব্যবহার করে বলটি আংশিকভাবেও লাইনে আছে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে। তাদের মতে, অন্য ক্যামেরাগুলো বিভ্রান্তিকর ছবি দিতে পারে। পুরো বলটি বাইরে ছিল কি-না তা জানা অবশ্যই দরকার। জেনে আর কী লাভ হবে! যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। জার্মানির কপাল পুড়েছে। জাপানের তো আনন্দের সীমা নেই। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের একটি স্মৃতি মনে পড়লো। শেষ ১৬তে জার্মানির বিপক্ষে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের একটি গোল নিয়ে। ল্যাম্পার্ডের শটে বল গোল লাইন অতিক্রম করলেও তা রেফারির নজর এড়িয়ে যায়। ওই ম্যাচে জার্মানির কাছে হেরে যায় ইংল্যান্ড। তখনো বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু সে বিতর্ক বেশিদূর গড়ায়নি। তখন অবশ্য VAR চালু হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়াও অনুপস্থিত ছিল। তা না হলে রোমাঞ্চ ছড়াতে মোটেই কোনো কার্পণ্য হতো না। মিতোমার পাস থেকে তানাকার গোল নিয়ে জার্মানির টমাস মুলার বলেছেন, রাতটি তার কাছে ছিল চরম বিপর্যয়ের। তার সতীর্থ হাভার্টজ বলেছেন, এটা ছিল একটি হরর মুভি। বিবিসি স্পোর্টসের ক্রিস বেভান দেখছেন অন্যভাবে। তিনি বলছেন, খেলা দেখে তার চারপাশে জাপানি ভক্তদের চোখেও এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ফুটবলে এরকম অনেক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয় এবং হচ্ছে। যে কারণে অনেক সময় খেলার ফলাফল পাল্টে যায়। থেমে যায় গতি। ১৯৩০ সনে বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্স- মেক্সিকোর প্রথম খেলায় রেফারি হাস্যকর এক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। ব্রাজিলিয়ান রেফারি আলমেদিয়া রেগো খেলা শেষ হওয়ার ছয় মিনিট আগেই ফাইনাল বাঁশি বাজিয়ে দেন। ফরাসিরা প্রতিবাদ জানান। হাজার হাজার দর্শক মাঠে ঢুকে যান। পুলিশও মাঠে এসে হাজির। রেফারি ভুল বুঝতে পারেন। ফের খেলা শুরু হয়। এরকম ঘটনা বিশ্বকাপে এমন আর ঘটেনি। যাই হোক, জার্মানির গণমাধ্যম রেফারির এই সিদ্ধান্তকে চরম ভুল বলে আখ্যায়িত করছে। তারা বলছে, জার্মানির তো এখানে থামার কথা নয়। রেফারি যদি এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত দেন তাহলে ফুটবলে এই কলঙ্ক থাকবেই।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, VAR -এর দায়িত্বে যে রেফারি থাকেন তার তো কোনো বদ মতলব থাকলেও থাকতে পারে। ফিফা যদিও এসব অভিযোগ নাকচ করেছে বারবার। ইউরোপীয় লীগে এসব অভিযোগ হরহামেশাই করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে রেফারি নিজেও ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নেন। তাই ভিডিও রেফারিকে একতরফাভাবে দায়ী করা চলে না।