ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন

তারুণ্যের জয়গান গাইবেন যারা

আরিফুর রহমান, স্পোর্টস রিপোর্টার, মানবজমিন

(১ বছর আগে) ১৪ নভেম্বর ২০২২, সোমবার, ৭:০১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:০০ অপরাহ্ন

mzamin

অচেনা এক বালক মাতিয়ে দিয়েছিল ১৯৫৮ বিশ্বকাপ। তার হাত ধরে ফুটবলের পূণ্যভূমি ব্রাজিলে এলো প্রথম শিরোপা। পেলে নামের সেই তরুণ পরে আরও দুটি বিশ্বকাপ জিতে নিজেকে নিয়ে গেলেন স্বর্গীয় উচ্চতায়। টোটো শিলাচি। কে ভেবেছিল, সাইড বেঞ্চ থেকে ১৯৯০ বিশ্বকাপে ইতালির হিরো বনে যাবেন এই তরুণ? বিশ্বকাপ মঞ্চটাই আসলে এমন। টুর্নামেন্টে কারও শ্রেষ্ঠত্ব হারায়, কারও হয় উত্থান। এভাবেই ২০১৮ বিশ্বকাপে বড় তারকা হয়ে ওঠেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। রাশিয়ায় লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো গ্রেটরা ম্লান হয়ে যান যার কাছে। কাতার বিশ্বকাপে নজর কাড়বেন কোন তরুণেরা? নামের অভাব নেই। তবে বিশেষ নজর থাকবে ১০ জনের ওপর।

বিজ্ঞাপন
নিজের প্রথম বিশ্বকাপে বাজিমাত করতে পারেন যারা।

 

তাকেফুসা কুবো (জাপান)
জন্ম: ২০০১, ক্লাব: রিয়াল সোসিয়েদাদ
বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া যুব একাডেমি থেকে উঠে এসেছেন ‘জাপানিজ মেসি’ নামে খ্যাত তাকেফুসা কুবো। ২০১৯ সালে তাকে কিনে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। তবে মূল টিমে জায়গা হয়নি। ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ধারে খেলেছেন মায়োর্কা, ভিয়ারিয়াল ও গেতাফেতে। সবশেষে চলতি বছর স্থায়ীভাবে তাকে দলে নেয় রিয়াল সোসিয়েদাদ। কুবোর স্কিল, গতি, আর ড্রিবলিং কৈশোরের মেসিকে মনে করিয়ে দেয়। দুই বছর আগে টোকিও অলিম্পিক গেমসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জাপানের জার্সিতে প্রথম গোলটি করেন তিনি। গোল পান পরের দুই ম্যাচেও। দুর্ভাগ্য কুবোর। সেমিফাইনালে স্পেনের কাছে হেরে বিদায় সোনার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় জাপানের। এরপর ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচেও মেক্সিকোর কাছে হেরে যায় জাপান।
পদক না জিতলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে কুবো প্রমাণ করে দিয়েছেন, বড় মঞ্চে আলো ছড়াতে প্রস্তুত তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউং-মিন বর্তমানে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফুটবল তারকা। কাতার বিশ্বকাপের পর সনের সঙ্গে হয়তো কুবোর নামটাও উচ্চারিত হবে।

আলফোনসো ডেভিস (কানাডা)
জন্ম: ২০০০, ক্লাব: বায়ার্ন মিউনিখ
ক্লাব পর্যায়ে এরইমধ্যে নিজেকে জাহির করেছেন আলফোনসো ডেভিস। ২২ বছরের বয়সেই জিতেছেন বুন্দেসলিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। কানাডিয়ান এই ডিফেন্ডারের এবার বিশ্বকাপ মাতানোর পালা। ডেভিসের গল্পের শুরু যুদ্ধ বিধ্বস্ত লাইবেরিয়া থেকে। ২০০৫ সালে ছোট্ট ডেভিসকে নিয়ে শরণার্থী হিসেবে কানাডায় আশ্রয় নেন তার বাবা-মা। পরে তাদের নাগরিকত্ব দেয় দেশটির সরকার। ৩৬ বছর পর কানাডাকে বিশ্বকাপের মূল পর্বে নিয়ে গিয়ে ডেভিস যেন সেই ঋণ চুকিয়েছেন। তবে এতটুকু প্রতিদান দিয়ে থামতে চান না তিনি। বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, মরক্কোর সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কানাডাকে শেষ ষোলোতে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন এই তরুণের। 
কানাডার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতা আলফোনসো ডেভিস একটি প্রজন্মের কাছেই অনুপ্রেরণার নাম। ২০১৭ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ৩৪ ম্যাচে ১২ গোল করেছেন ডেভিস। সাধারণত লেফটব্যাক হলেও সৃজনশীলতা, গতি ও ড্রিবলিং স্কিলের কারণে উইঙ্গারের ভূমিকাও পালন করতে পারেন তিনি।

পাপে মাতার সার (সেনেগাল)
জন্ম: ২০০২, ক্লাব: টটেনহ্যাম হটস্পার
আফ্রিকার দেশ সেনেগাল যেন প্রতিভাবান ফুটবলারের খনি। সেই এল হাদজি দিওফ, পাপা বাউবা দিওপ থেকে শুরু করে হালের সাদিও মানে এবং কালিদু কুলিবালি ইউরোপিয়ান এলিট ফুটবলে সুবাস ছড়িয়েছেন। ‘পাপে মাতার সার’ নামের ফুলটির সুবাস কেবল ছড়াতে শুরু করেছে। ২০ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ইতিমধ্যেই সেনেগালের হয়ে জিতেছেন আফ্রিকান নেশনস কাপ। ২০২০-২১ মৌসুমে ফরাসি লীগ ওয়ানে মেটজের হয়ে মুগ্ধতা ছড়ান মাতার সার। পারফরম্যান্স দেখে এই তরুণকে টটেনহ্যামে নিয়ে গেছেন কোচ আন্তেনিও কন্তে। স্পারসে খেলার পর্যাপ্ত সময় না পেলেও সার তৈরি করছেন বিশ্বকাপের জন্য।

আরেলিয়েন চুয়ামেনি (ফ্রান্স)
জন্ম: ২০০০, ক্লাব: রিয়াল মাদ্রিদ
২২ বছর বয়সী এই ফরাসির মাঝে বিশেষ কিছু আছে বলেই কাসেমিরোর মতো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে বেচে দিতেও দ্বিধা করেনি রিয়াল মাদ্রিদ। বোর্দো, মোনাকো ঘুরে মাদ্রিদ জয় করতে এসেছেন চুয়ামেনি। মনে হচ্ছে, রিয়ালের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড ডিউটি আগামী ১০ বছরের জন্য সুরক্ষিত। 
টেকটিক্যাল সচেতনতা, টেকনিকে দক্ষতা, পজিশনিং সেন্সের সঙ্গে চুয়ামেনির বাড়তি যে গুণ আছে সেটি হলো গোল করার ক্ষুধা। ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপে পল পগবাকে মিস করবে ফ্রান্স। তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আরেলিন চুয়ামেনি আছে না! 

রিকার্ডো পেপি (যুক্তরাষ্ট্র)
জন্ম: ২০০৩, ক্লাব: এফসি গ্রোনিনজেন 
ম্যাগাজিন লোড করাই আছে। ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক, ওয়েস্টন ম্যাককেনি, জিওভানি রেইনারা সঙ্গে ‘ইয়াং গান’ রিকার্ডো পেপির ফায়ারিং ঠিকঠাক হলে কাতারে অভাবনীয় কিছু উপহার দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। 
২০২০-২১ মেজর লীগ সকার (এমএলএস) মৌসুমে এফসি ডালাসের হয়ে ১৬ গোল করেন পেপি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাকে কিনে নেয় জার্মান ক্লাব অগসবুর্গ। বুন্দেসলিগায় টানা ১৫ ম্যাচে গোলহীন থাকার পর পেপিকে ডাচ ক্লাব গ্রোনিনজেনে ধারে খেলতে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে ফের ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন এই ফুটবলার। বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে পেপির স্বরূপে ফেরা যুক্তরাষ্ট্রের ভক্তদের জন্য দারুণ খবরই।

জামাল মুসিয়ালা- জার্মানি
জন্ম: ২০০৩, ক্লাব: বায়ার্ন মিউনিখ
প্রতি বিশ্বকাপে জার্মানির একজন তরুণ এক্স ফ্যাক্টর থাকে। কাতারে সেই এক্স ফ্যাক্টর হতে যাচ্ছেন জামাল মুসিয়ালা। চলতি মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখের প্রথম ৯ ম্যাচে ৫ গোল ও ৪ অ্যাসিস্ট করে হাইপ আরও বাড়িয়ে তুলেছেন জামাল। 
গত সেপ্টেম্বরে উয়েফা নেশনস লীগে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর জামাল বলেন, ‘আমরা সঠিক পথেই আছি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেশনস লীগের ম্যাচ দেখিয়েছে আমরা উন্নতি করছি। আমার মনে হয়, বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডকে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আমরা। কাতারে আমাদের পরাজিত করা সহজ হবে না।’

ভিনিসিউস জুনিয়র- ব্রাজিল
জন্ম: ২০০০, ক্লাব: রিয়াল মাদ্রিদ
ভিনিসিউস জুনিয়রকে নতুন করে পরিচিত করানোর কিছু নেই। ২২ বছর বয়সেই রিয়ালের আক্রমণভাগের অন্যতম সেরা তারকা তিনি। রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ১৪তম শিরোপা এসেছে এই ব্রাজিলিয়ানের গোলে। গত মৌসুমে করিম বেনজেমার পর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক ২২ গোল করেন ভিনিসিউস। জিতেছেন ‘উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইয়াং প্লেয়ার অব দ্য সিজন’ খেতাব। ভিনির এবার ব্রাজিলের জার্সিতে জ¦লে ওঠার পালা। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো মঞ্চ আর কীই বা হতে পারে!

 

 

জুড বেলিংহাম

জন্ম: ২০০৩, ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ড
সুপারস্টার তৈরির আতুরঘর বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ‘নিউ সেনসেশন’ জুড বেলিংহাম। সবচেয়ে কম বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলা ইংলিশ ফুটবলার। আর দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে এই আসরে গোলের কীর্তি তার। 
চলতি চ্যাম্পিয়নস লীগে পাঁচ ম্যাচে ৪ গোল করে আলোচনায় ইংলিশ মিডফিল্ডার বেলিংহাম। পরের দলবদল মৌসুমেই হয়তো ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরাবে প্রিমিয়ার লীগে কোনো জায়ান্ট। চেলসি তো রেডি হয়েই আছে বেলিংহামের জন্য।
২০২০ সালের ১২ই নভেম্বর জাতীয় দলে অভিষেকের পর ১৭ ম্যাচ খেলেছেন বেলিংহাম। তাকে বিশেষায়িত  করতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড কোচ এডিন তারদিচের একটা কথাই যথেষ্ট, ‘বেলিংহাম কতোটা ভালো আমরা এখনো জানি না। তার সীমা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তানিরূপণ করার চেষ্টা করছি।’

গাভি (স্পেন)
জন্ম: ২০০৪, ক্লাব: বার্সেলোনা
বার্সেলোনায় কোচ জাভির মধ্যমণি গাভি। তার ট্যালেন্ট নিয়ে আকাশসমান প্রত্যাশা কিউলদের। তবে জাতীয় দলেও এরইমধ্যে একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন ১৮ বছর বসয়ী এই মিডফিল্ডার। ২১ বছরের নিচে এমন ফুটবলারদের নিয়ে বিচারকদের ভোটে চলতি বছরের সেরা উদীয়মান ফুটবলার গাভি। স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যালন ডি’অর গালায় জিতেছেন ‘কোপা ট্রফি’। গত সেপ্টেম্বরে সেভিয়ার বিপক্ষে একটি ম্যাচে ৩-০ গোলে জয়ের পর গাভিকে নিয়ে জাভি বলেছিলেন, ‘ইনটেনসিটি, ফাইট, পাসিং, হাই প্রেসিং-এর কারণে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ছিল সে। ওর পায়ের ভেতরেও হৃদয় আছে।’ 

জুলিয়ান আলভারেজ (আর্জেন্টিনা)
জন্ম: ২০০০, ক্লাব: ম্যানচেস্টার সিটি
আর্জেন্টিনা মানেই প্রতিভার ছড়াছড়ি। বরাবরের মতোই আলবিসেলেস্তেরা বিশ্বকাপে যাচ্ছে শক্তিশালী আক্রমণভাগ নিয়ে। সেখানে অভিজ্ঞ লিওনেল মেসি-অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার সঙ্গে আছেন লাওতারো মার্টিনেজের মতো পরীক্ষিত তরুণরা। তবে একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি জুলিয়ান আলভারেজ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই ফুটবলার ‘এল আরানা’ ডাকনামে পরিচিত। এল আরানার অর্থ মাকড়সা। ফরোয়ার্ড হিসেবে খেললেও উইঙ্গারের ভূমিকাও পালন করতে পারেন আলভারেজ। এ বছরের ২৫শে মে রিভার প্লেটের জার্সিতে এক ম্যাচে ৬ গোল করে হৈ চৈ ফেলে দেন আলভারেজ। ম্যান সিটিতে চলতি মৌসুমে ১৭ ম্যাচে ৫ গোল করেছেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। জাতীয় দলে অভিষেকের পর ১১ ম্যাচে আলভারেজ করেন দুই গোল।  

বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন থেকে আরও পড়ুন

   

বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status