বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন
বাশারের কাতার অভিযান
ইশতিয়াক পারভেজ, স্পোর্টস রিপোর্টার, মানবজমিন
(১০ মাস আগে) ১৪ নভেম্বর ২০২২, সোমবার, ৬:১০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:০০ অপরাহ্ন

হাবিবুল বাশার সুমন। যার ধ্যানজ্ঞান শুধুই ক্রিকেট। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। বর্তমানে আছেন নির্বাচকের ভূমিকায়। কিন্তু ক্রিকেটের মানুষটার মনের বড় একটি জায়গা দখল করে রেখেছে ফুটবল। ছোটবেলায় তার ফুটবলার হওয়ারই স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বড় হতে হতে বদলে গেছে তা। কিন্তু তাতে তিনি ফুটবলকে লালন করে গেছেন মনের ময়দানে। এবার জীবনের বড় একটি স্বপ্নপূরণ করতে যাচ্ছেন তিনি। হ্যাঁ, এবার বাশার নামছেন কাতার অভিযানে।
ফুটবল নিয়ে একটা সময় বাংলাদেশ ছিল উত্তাল। ফুটবল ম্যাচ হলেই মাঠে থাকতো হাজার হাজার দর্শক। ক্রিকেট তখন অনেকটাই পিছিয়ে। তার ওপর হাবিবুল বাশারের সেজো ভাই খেলতেন মোহামেডান ফুটবল দলে। তাই ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই শুরু করেছিলেন। প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন ১৯৮৬ তে। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ দেখার অভিজ্ঞতাও ছিল স্বপ্নের মতো। বাশার জানালেন, ‘ছোট বেলায় যখন স্কুলে পড়ি তখন তো ছিল সব ফুটবলই। আমার প্রথম বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ হয় ১৯৮৬ তে। তখন আমরা তো মফস্বলে থাকি। টিভিও তেমন বাসায় বাসায় ছিল না। খেলাও দেখা হতো না। কিন্তু যখন বিশ্বকাপ হতো তখন একটা মাস আমাদের গোটা শহরে উৎসবের মতোই হতো। আমরা সেই মাসটা সারাদিন ফুটবল খেলেই কাটাতাম। সবাই আর্জেটিনা-ব্রাজিল-ইংল্যান্ড এমন সব দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলে রাতের অপেক্ষায় থাকতাম। অনেক রাতে খেলা শুরু হতো তখন। ছাদের মধ্যে সবাই মিলে খেলা দেখার আয়োজন হতো। খাবার থাকতো, চা মুড়ি কতো আয়োজন নিয়ে যে খেলা দেখতে বসতাম। একটা পুরোপুরি উৎসবের আয়োজন থাকতো। এই আসরটা কেন্দ্র করেই যেন একটা মাস ঘরেই থাকার চেষ্টা করতাম। আমিও তখন ফুটবলই খেলতাম। তখন আমি কিন্তু ক্রিকেট খেলতাম না। আর ১৯৮৯ সালে যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করি তখনো ফুটবলটা মনে অন্য একটা জায়গা করে থাকতো। বিশ্বকাপ যখনই হতো আমি চেষ্টা করতাম ক্রিকেট ভুলে ফুটবল দেখেই কাটাতে। এখনো কিন্তু সেটাই করি।’
১৯৮৬ তে যখন বাশার ফুটবল বিশ্বকাপ দেখা শুরু করেন সেবার আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতে নেয়। দিয়েগো ম্যারাডোনা তখন ফুটবল বিশে^র অন্যতম সেরা তারকা। কিন্তু বাশারের মনে যে হলুদ জার্সি জায়গা করে নিয়েছে। মানে তিনি ব্রাজিলের অন্ধভক্ত। এখনো তাই, প্রিয় দলের খেলা হলে জার্সিটা গায়ে পরেই বসেন। সংগ্রহও করেন হলুদ জার্সি। নিজের প্রিয় দল নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যেবার ফুটবল বিশ্বকাপ দেখা শুরু করলাম সেবার চ্যাম্পিয়ন হলো আর্জেন্টিনা। কিন্তু আমি আসলে ব্রাজিল সমর্থক। হ্যাঁ, এটা নিয়েই এখন পর্যন্ত আছি। এই দলটিতে সেই সময় এত নামিদামি ফুটবলার ছিল যে কার নাম বলবো!’ অন্যদিকে ব্রাজিল সমর্থক হলেও ম্যারাডোনা আর মেসির দারুণ ভক্ত বাশার। তিনি বলেন, ‘আমি ব্রাজিলের কড়া সমর্থক হলেও ম্যারাডোনা ও মেসি আমার প্রিয় ফুটবলারের তালিকাতে আছে। কারণ আমি যে সময় বিশ্বকাপ দেখা শুরু করি তখন সবচেয়ে আলোচিত নাম ম্যারাডোনা। আর এখন যখন খেলাটা বুঝে দেখি তখন বিশ্বসেরা মেসি। দু’জনকেই আমার ভালো লাগে তাদের খেলার ধরনের কারণে। আর্জেন্টিনার খেলা খুব একটা ভালো না লাগলেও তাদের দু’জনের খেলা আমার দারুণ লাগতো।

তবে ব্রাজিলের প্লেয়াররা আমার কাছে সেরা। রোনাল্ডো, রোমারিও, রিভালদো, নেইমার আর কতো নাম বলবো সবাই আমার প্রিয় কারণ ব্রাজিলের তো অসংখ্য নাম। অন্য দলের একজন দু’জন প্লেয়ার থাকে সেরা তাই চোখে পড়ে বেশি। কিন্তু ব্রাজিল দলে এত সেরা ফুটবলার যে কাকে রেখে কার কথা বলবো!’
টাইগারদের জার্সি নিয়ে সমর্থকদের দারুণ উত্তেজনা। কে কার আগে জার্সি কিনে লাল-সবুজ গায়ে চড়াতে পারে তা নিয়ে চলে যেন প্রতিযোগিতা। বাশার যখন দেশের ক্রিকেট তারকা তার নামের জার্সি নিয়েও দর্শক-সমর্থকদের কতো উত্তেজনা। ফুটবল বিশ্বকাপ এলে বাশারও বনে যান ব্রাজিলের তেমনই এক সমর্থক। জার্সি কিনে অপেক্ষায় থাকেন খেলা শুরু হওয়ার। যেদিন ব্রাজিলের খেলা থাকে জার্সিটা পরেই বসেন। নিজের এমন ফুটবল ভক্তের রূপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘জার্সি আমার আছে। আমি সবসময় আগেই সেটা সংগ্রহ করে রাখি। তবে একবার খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। সেটি ছিল ৭-১ গোলে হারের ম্যাচ। সেবার একটা লাউঞ্জে খেলা দেখার কথা ছিল আমাদের চার বন্ধুর। কিন্তু সব আয়োজন বৃথা হয়ে যায়। খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল মুহূর্তের মধ্যে। আমরা ভেবেছিলাম লাউঞ্জে বসে খেলা দেখবো আর সেহ্রি করে রাতে বাসায় ফিরবো। কিন্তু হয়নি দুঃখ নিয়ে ফিরতে হয়েছে। আর সেই হারের জন্য তো এখনো আর্জেন্টিনা সমর্থকদের খোঁচা শুনতে হয়।’
মন্তব্য করুন
বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন থেকে আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]