বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন
নবাব ‘স্পোর্টিং’ ক্লাব
অপু শহীদ
(১০ মাস আগে) ১৪ নভেম্বর ২০২২, সোমবার, ৪:৫০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:০০ অপরাহ্ন

বাদল গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে। সামনের দিকে হাঁটতে গিয়ে পিছনে চলে যায়। পিছাতে পিছাতে চল্লিশ বছর পিছিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা আগেই চার লেনের হাইওয়ে ধরে গাড়ি প্রায় একশ’ কিলোমিটার বেগে চলছিল। ভাবনার গতিও এগিয়ে যাচ্ছিল। আগামী বছরের ভাবনার পরতের উপর পাঁচ বছর পরের ভাবনা প্রলেপ দিয়ে যায়। পাঁচ বছরের উপর দিয়ে দশ বছর বিশ বছরের পরের ভাবনা উপচে পড়ে। রাস্তার দু’পাশের ধানক্ষেত। সারি সারি গাছ। একটু পর পর জলাশয়।
বাদল ফিরছিল পার্বত্য অঞ্চল থেকে। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা কাপটি এবার ছিনিয়ে এনেছে আমাদের মেয়েদের দলটি। ফুটবল নিয়ে একসময় আমাদের বড় আশা ছিল। উচ্ছ্বাস ছিল। আনন্দ ছিল। উত্তেজনা ছিল। গ্রিসের এপিসকিরো রোমে এসে নাম পাল্টায় হারপাস্টাম। ইতালিতে এসে হয় ক্যালিসিও। আর সাম্র্রাজ্যবাদের সুবাদে আমরা পাই ফুটবল। ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা না হতে পারি, আমরাও দু’-একবার খালি পায়ে খেলেই সাহেবদের দলকে হারিয়ে ছিলাম। তারপর যত দিন গেছে তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ফুটবল ততটাই হতাশ করেছে। নানান প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মেয়েদের ফুটবল টিম জয় করল দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ-খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। সে দলের ফুটবল সম্রাজ্ঞীদের একজনের বাড়ি যেতে হয়েছিল। প্রায় বস্তিসদৃশ কিংবা ভেঙে পড়া অথবা অর্ধ খোলা সেইসব উদোম বাড়ি ঠিকঠাক না করে দিলে দেশের আর ইজ্জত থাকে না। নেট দুনিয়ায় ছবিটবি কোথায় কোথায় ভাইরাল হবে বলা যায় না। সেই মহতী কাজে যোগ দিতেই বান্দরবানে গিয়েছিল বাদল। টিভি ফুটেজ আর ফটোসেশন শেষ করেই চলে এসেছে। ফেডারেশনের কর্মকর্তা হিসেবে নানান প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সাংবাদিকগুলো নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে।

বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম এসে একটা ব্রেক নেয়। তারপর কুমিল্লা সোনারগাঁ পর্যন্ত ভালোই আসা গেছে। ঢাকায় ঢোকার মুখেই জ্যাম শুরু। প্রথমে ভাবছিল জ্যামটা টুকটুক করে পার হয়ে ব্রিজে উঠতে পারলেই ব্যস হয়ে গেল। ব্রিজের ওপর পুরোটাই জ্যাম দেখে নিজেই চালককে বলেছিল নিচ দিয়ে যেতে। যাত্রাবাড়ীর মোড়ে এসে মনে হলো কোনোভাবেই আর বড় রাস্তা দিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। মিছিলের পর মিছিল যাচ্ছে পল্টনের দিকে। পুরো দেশটাই আবার কেমন তেতিয়ে উঠছে। বছরখানেক আগে ভূমিকম্পের চেয়ে একটা বড় ডলা দিয়ে গেছে করোনা মহামারি। তারপর শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ডিজেল সংকট। খাদ্য সংকট। উন্নয়ন। লুটপাট। অব্যবস্থাপনা। শৃঙ্খলা ভেঙে যাওয়া। চিনির দাম কমলে তেলের দাম বাড়ে। পিয়াজের দাম কমলে চালের দাম বাড়ে। মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। গাড়ি বড় রাস্তায় না গিয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট রাস্তা ধরে চালাতে বলে। দয়াগঞ্জের রাস্তায় রেললাইনের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় কেমন একটা স্মৃতির দমকা এসে ফেলে আসা দিনের আভাস দিয়ে যায়। যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে এই রাস্তাটি ছিল একটা খাল। সোজা আরও পশ্চিমে গিয়ে বাঁদিকে বাঁকিয়ে কাঠের পুলের নিচ দিয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিশেছে। সুতিখাল আর দোলাইখালের সংযোগ খাল এটা। দু’পাশে আগে ছিল আখক্ষেত, ভাট্টিখানা, নর্দমা। এখন ব্যাংকের বুথ, ফাস্টফুড, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বাঁশপট্টি নাই। সাঁকো নেই। নৌকা নেই। বাঁশঝাড়ের নিচে কামারের দোকানটি নাই। সাধনা ঔষধালয়ের একাংশের ছাদের টিন নেই। বৃষ্টির দিনে কানাই কুণ্ডু দোকানের ভিতর ছাতা মাথায় বসে থাকে। শরিকানা মামলায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় মেরামত করার অধিকার নাই। ওষুধপত্র বলতেও তেমন কিছু নেই। কয়েকটা শিশি কৌটা তাকের ওপর রাখা। আরেকপাশে জমিয়ে বসেছে বিশ্বকৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের ইসকন।

বাউলির মাঠার দোকানটা উঠে গেছে। কিছুদল ধূপখোলা মাঠ থেকে। কিছুদল মিতালির মাঠ থেকে স্বামীবাগের ভিতর দিয়ে। আরেকদল বাগানবাড়ি থেকে ফুটবল অনুশীলন শেষ করে বাউলির দোকানে এসে হাত বাড়িয়ে দিত। সাদা লুঙ্গি আর কোড়া গেঞ্জি গায়ে বাউলি বসে থাকতো পিঁড়ির চেয়ে একটু উঁচু একটা টুলের ওপর। সবসময় কাঁধে থাকতো লাল রঙের ভিজা গামছা। প্রথমে হাতের তালুতে দিত কবুতরের ডিমের সমান একগোল্লা মাখন। মুহূর্তের মধ্যে মাখন থ্রো হয়ে যেত মুখে। সে মাখন মোগল আভিজাত্য নিয়ে চালান হয়ে যেত পেটে। তারপর দিত স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে ছানা মিশ্রিত মাঠা। বাউলির দোকান নেই। সেখানে এখন জুস আর কফির দোকান।
ডিভিশনে খেলার আগে বাদল ক্লাব মাঠে খেলতো। সূর্য ওঠার আগেই তখন হাজির হতে হতো মাঠে। কে কার আগে মাঠে যাবে একটা প্রতিযোগিতা ছিল। মিতালী মাঠে যেতে হতো জোড়া কবরস্থানের মাঝখান দিয়ে। কেমন গা ছমছম করতো। ধূপখোলা মাঠে যেতে একবাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। নয়তো ঘুর পথে রেললাইনের ওপর দিয়ে। হায়ারে খেলতে যেত বিভিন্ন মাঠে। গোল্লার টিমের হয়েই বেশি খেলা হয়েছে। গোল্লা তখন এই অঞ্চলের ফুটবলের একচ্ছত্র অধিপতি। গোলাপবাগ মাঠে একবার সে কী কাণ্ড! বল নিয়ে ডি-বক্সের মধ্যে ঢুকলেই বিপক্ষ দলের সমর্থক ছুরি হাতে হুঙ্কার দেয়। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। শেষ পর্যন্ত দুই দল সমর্থকের মধ্যে তুমুল মারামারি। সেই খেলায় অনেকে অনেক টাকার বাজি ধরেছিল। সেবার জীবন হাতে নিয়ে ফিরতে হয়েছিল। নিজেদের দল নবাব স্পোর্টিং ক্লাবে। এই ক্লাবের প্রধান ছিল নবাব চাঁদ। ডাকা হতো নবচাঁন। খেলায় হেরে গেলে গম্ভীর হয়ে চাবুক হাতে বসে থাকতো।

বাদল হাঁটতে হাঁটতে ভাবে বহুবছর আগে এটাই ছিল তার চলাচলের রাস্তা। তখন রাস্তাটা অনেক বড় মনে হতো। এখন দু’পাশ থেকে কেমন চেপে এসেছে। দু’পাশে ধাক্কা দিয়ে বাড়িঘরগুলো সরিয়ে দিলে রাস্তাটা বড় হতো। সবকিছুই কেমন চেনা চেনা আবার অচেনা মনে হচ্ছে বাদলের। ‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের বাড়িটা অনেকটা আগের মতোই আছে। সামনের দিকে বোগেনভেলিয়ার ঝোপটা এখন আর নেই। শহীদ বলেছিল ওই ঝোপের নিচে সাপ থাকে। পাগলা শহীদ। পাগলা শহীদের নামটাই এতক্ষণ মনে পড়ছিল না। এদিকটাতেই ওরা থাকতো। কাউকে জিজ্ঞেস করলে হয়।
বেগমগঞ্জ লেনের মুখে এসে সে দাঁড়ায়। সোজা দেখা যায় হলুদ মসজিদ। এখানে একটা চালের দোকান ছিল। কানা ইয়াসিন মেম্বারের দোকান। মহল্লার একমাত্র টিঅ্যান্ডটি’র টেলিফোনটি এখানে চালের খালি বস্তা দিয়ে ঢাকা থাকতো। তারপাশে সাইকেল ঠিক করতো। আর ওপাশে ছিল একটা সেলুন। সেলুনের উল্টাপাশে হোমিওপ্যাথের দোকান। এখানে সন্ধ্যা বেলা আড্ডা দিত একাত্তরে হায়েনার খাঁচা ফেরত মন্টু খান। এসবের আর অস্তিত্ব নেই। একটা প্রাইমারি স্কুলের স্মৃতি মনে আছে। সে মাঠেও ছোট ছোট অনেক টুর্নামেন্ট খেলা হতো। ভ্যানগাড়ির সবজিওয়ালাকে জিজ্ঞেস করতেই স্কুলটা পাওয়া গেল। স্কুলের চারদিকে এখন উঁচু দেয়াল। বাইরে থেকে ভিতরটা আর দেখা যায় না। আগে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই লোকে খেলা দেখতো। এখন আর মাঠ নেই। মাঠের মাঝখানে পাকা দালান। শিক্ষার উন্নয়ন।

এই মাঠেই শহীদ ফুটবলের যাদু দেখাত। শহীদের মাথায় একবার বল গেলে হেড দিতে দিতে সারা মাঠ চক্কর দিতো। দর্শক সমস্বরে সেই হেড গুনতো। দুই চার দশ বিশ সত্তর একশ’ তিনশ’ চারশ’ পাঁচশ’ ছাড়িয়ে যেত। বিপক্ষ দলের পেনাল্টি বক্সের ভিতর থেকেও বল নিয়ে আবার মাঝমাঠে ফিরে আসতো। গোল করার কোনো চেষ্টাই নেই। গোল করাটা যেন মুখ্য বিষয় নয়। টেকনিকটাই আসল কথা। হেড গুনতে গুনতে দর্শক ক্লান্ত হয়ে পড়তো। শহীদের ক্লান্তি নেই। দর্শক নাম দিলো পাগলা শহীদ। খেলার বেশির ভাগ সময় জিভ কামড়ে ধরে রাখত। ফাউল করা ছাড়া ওর মাথা থেকে বল নেয়া কঠিন ছিল। এই অসাধারণ দক্ষতার জন্য শহীদ সহজেই ফার্স্ট ডিভিশনে সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু এক বছরের বেশি সে আর খেলতে পারে না। বুঁট পরে খেলাটা কিছুতেই আয়ত্তে আসে না।
পাগলা শহীদের কথা কেউ মনে রাখেনি। কেউ বলতেও পারছে না। বৃদ্ধ আচারওয়ালা পাঠিয়ে দিলো চায়ের দোকানে। চায়ের দোকানদার বললো ভাঙ্গারির দোকানে খোঁজ নিতে। ভাঙ্গারির দোকানদার চোখ বন্ধ করে রাখলো। অবশেষে চোখ খুলে বললো।
: ফুটবল খেলেউলে পাগলা শহীদ আমগো মহল্লায়- না চিনবার পারলাম
না। দেখলে চিনা পারবেন?
: তা হয়তো পারবো। এতদিনের কথা।
: আমগো মহল্লায় অহন সেরা খেলোয়াড় একজনই।
: কে? কি নাম?
: মেসি
: সে তো আর্জেন্টিনার মেসি। বার্সেলোনার
: না না এই মহল্লায় একটা মেসি আছে। ছোট মেসি।
ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে লোকটা উঠে গেল লোহালক্কড় ডিঙিয়ে দোকানের পিছন দিকে। বুকের ওঠানামা বলে দেয় শ্বাসকষ্ট আছে। দুই আঙ্গুলে চেপে রাখা জলন্ত সিগারেট। গালগুলো মুখের ভিতর ঢুকে গেছে। দাঁতের অংশবিশেষ নিরুদ্দেশ। তবে চোখগুলো গর্তে গেলেও ঘোলা হয়ে যায়নি। অন্ধকারের মার্বেলের মতো জ্বলজ্বল করে।
স্মৃতি হারিয়ে যায় না। গভীর তল থেকে উপরের তলে ভেসে ওঠে। সময় মাঝে মাঝে ঘটে যাওয়া দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। পুরনো কাগজের স্তূপ, বাতিল তার, ভাঙা টেলিভিশন, ঝাঁঝরা টিনÑ এ সবের পিছনে একটা রঙ উঠে যাওয়া শিল্ড। বোঝাই যায় বহু বছরের পুরনো। তার গায়ে হেলান দেয়া একটা সাদাকালো গ্রুপ ছবি। ছবিটা হাতে নিয়ে টুকরো গামছার ন্যাকড়া দিয়ে মুছে নিয়ে বাদলকে দেয়।

-দেখ তো কেউরে চিনবার পারোনি।
ছবির কোথাও কোথাও নষ্ট হয়ে গেছে। তবু অনেককেই চেনা যায়। দুই সারিতে দাঁড়িয়ে আছে মোট সতেরো জন। মাঝখানেরটা জর্জমিয়া। নিশ্চিত। আলাদা জার্সি। তখন আমরা খেলার প্যান্ট বানাতাম সিরাজ টেইলার্স থেকে। স্টেডিয়ামের দুইতলায় সিরাজ মিয়ার কাছে লাইন দিতে হতো। দুই-তিনবার তাগাদা না দিয়ে সহজে পাওয়া যেত না। এই খেলায় জর্জ ছিল গোলকিপার। বাঁদিকের কর্নারে সবচেয়ে শর্ট এটা গুলমাজন। দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। আটাত্তরের বিশ্বকাপের পর ও হয়ে গেল সিএমপি’র মাঠের পাওলো রসি। ক্লাব টিমে ওকে নিয়ে টানাটানি হতো। ডিভিশনে খেলতে গিয়ে ভালো করতে পারেনি। এখান থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিল দু’জন। বাদল আর সাবু। সাবুর ভালো নাম ছিল সাহাবুদ্দিন। বন্ধুরা ডাকতো পুইট্টা। যেমন শ্যামলের নাম ছিল ডণ্ডি। শহীদকে ডাকতো পাগলা। পাগলা শহীদ। এই তো সামনের সারিতে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
-চিনবার পারছেন?
-এই যে, জাভেদের পাশে। জিহ্বায় কামড় দেয়া এটাই তো শহীদ।
-ওই নামে কেউই তো আর চিনে না। কইতে হইব মেসির বাপ।
- মেসি কে?
-আমার পোলা। ভালা খেলে দেইখা মহল্লার সবতে অরে আদর কইরা মেসি ডাকে।
বাদল চিৎকার করতে গিয়েও থমকে যায়। শহীদ। পাগলা শহীদ। সবকিছু বদলে গেলেও জিভ কামড়ানিটা ঠিক আছে। জিভ কামড়ানো একটা সংকেত। চিহ্ন। সতর্কীকরণের চিহ্ন। এ মানুষ চার-পাঁচশ’ হেড দিতো সারা মাঠ ঘুরে এ যেন এক অবিশ্বাস্য গল্প।
-এ কী অবস্থা বন্ধু!
-বাঁইচা রইছি এইটাই বেশি না? করোনার সময় না মইরা কী গোয়ামারাটা যে খাইছি।
-যতদূর মনে পড়ে তোমাদের অবস্থা তো ভালোই ছিল। তোমাদের না বড় একটা বাড়ি ছিল। বিরাট একটা জামরুল গাছ। আমরা ছাদে উঠছিলাম। দুনিয়ার জামরুল ধরছিল।
- তা অখন টুকরা টুকরা। খেলা ছাড়ার পর টান বাজারের নেশায় ধরলো। এক ছেমড়িরে লইয়া আইলাম বিয়া কইরা। বাপে বাড়িততে বাইর কইরা দিলো। এহেনে থাকি ওহনে থাকি। নয় ক্লাস পাশ দিয়াতো আর ভালা কাম করণ যায় না। বাপে মরণের পর ভাইরা একটা ঘর দিছে। আধা বস্তির রহম বউ পোলাপান লইয়া থাকি। পোলাটারে লেদের কামে দিছি। মর্জিনা সেলাই কাম শিখছে। মিলাঝিলা ভালাই আছি। খারাপ কী।
- তোমরা তো খেলার থেকে একে একে আউটে গেলা। আমি তখন জাতীয় দলে লাখ ছাড়িয়ে দাম উঠছে। ফর্মে থাকতে থাকতেই ব্যবসায় ইনভেস্ট করে দেই। এখন তো পুরোদমে ব্যবসায়ী। সেইসাথে ক্রীড়া সংগঠকের দায়িত্বটাও পালন করতে হয়।
-তা এই দিকে আইছ ক্যালা। রাস্তা হারাইয়া ফালাইছ নিহি?
-বলতে পার অনেকটা তাই। বিশ্বরোডের রাস্তাটা জ্যাম বলে ড্রাইভারকে বললাম দয়াগঞ্জের এই রাস্তা ধরে আগাতে। শরৎগুপ্ত রোডে ঢুকে এমন অবস্থা। না সামনে যাওয়া যায় না পিছনে। গাড়ি ঘুরানো যায় না। ড্রাইভারকে বললাম ব্যাকে গিয়ে মেথরপট্টির রাস্তায় উঠে আমাকে কল দিও। ততক্ষণে আমি এই এলাকায় একজন পুরনো বন্ধুকে খুঁজি।
- আমগো গাড়িতো বহুত আগেরতেই ঘুররা। সামনে যাওনের কোনো চেষ্টাই আর করি না।
-এটা কোনো ভালো কথা হলো না। ছেলেটাকে ভালো করে প্র্যাকটিস করাও। ওর মধ্যে জেনেটিক্যালি খেলার ঝোঁক আছে। হয়তো ভালো একটা কিছু হবে।
-কী আর ভালো হবে। দেখলাম তো। কোর্টপ্যান্ট পরা ভদ্রলোক সব। কলমের মাথা ভাইঙ্গা খায়। জীবনে ফুটবলে একটা লাথি মারছে কি না সন্দেহ। সেই আহাম্মকগুলার হাত থিকা ট্রফি নিতে হয়। সারা দেশে একটা খেলোয়াড় ভি খুঁইজা পাইলো না। মেয়েগুলারে ইজ্জদ দিলো না বেইজ্জদ করল বুজা পারলাম না। যাউগগা আমগো কথা কই। এই ছবিটার দিনের কথা মনে আছে? কোন খেলাটা-
-একটুও ভুলি নাই। ঋজু তখন বিপরীত দলে। আমার পায়ে পায়ে থাকে। ওর মতো ডিফেন্স আমি আর দেখিনি। বল দিলাম তোমার মাথায়। ডি-বক্সের ভিতর। ফাউল করলেই প্যানাল্টি। মাথা থেকে বল পায়ে নিয়ে উল্টো ড্রিবলিং করে বল সোজা জালে। গোলকিপারের তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। সারা মাঠ চিৎকারে ফেটে পড়লো। খেলা শেষ হতে আর দশ সেকেন্ড বাকি ছিল। সেই গোলেই চ্যাম্পিয়ন শিল্ড পায় নবাব স্পোর্টিং ক্লাব।
-নবচাঁন ভাইয়ের কথা মনে আছে?
-থাকব না। নবাব স্পোর্টিং ক্লাব। ঐখানেই তো আমাগো জন্ম।
- সে এখন আছে কোথায়?
-কোথায় আছে জানি না। বহুবছর আগেই কতল।
-কতল মানে?
-টার্মিনালের দখলদারি নিয়া ক্যাচাল হয়। ছুরি দিয়া খালাস কইরা দেয়।
বাদলের ফোনে রিং হয়। আবার সময় করে একদিন আসার আশ্বাস দিয়ে বাদল বিদায় নেয়।
জিভ কামড়াতে থাকে মেসির বাবা ওরফে পাগলা শহীদ।
(অপু শহীদ লিখে দিলো পাগলা শহীদের গল্প
সত্য আছে যৎসামান্য মিথ্যা আছে অল্প)
মন্তব্য করুন
বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন থেকে আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ম্যাগাজিন সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]