টি-২০ বিশ্বকাপ
১৯৯২’র সাফল্য বড় প্রেরণা বাবরদের
স্পোর্টস ডেস্ক
১২ নভেম্বর ২০২২, শনিবারমাত্র একটি জয় দরকার। তাহলেই ১৯৯২-এর পুনরাবৃত্তি ঘটাবে বাবর আজমের দল। ৩০ বছর আগে মেলবোর্নে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান। ইমরান খান-ওয়াসিম আকরামদের বিশ্বজয় দেশটির ক্রিকেটে এনে দিয়েছিল এক নবজোয়ার। ’৯২ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য রমিজ রাজা এখন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান। রোববারের ফাইনালের আগে আফ্রিদি-বাবরদের মেলবোর্নের সেই কীর্তিগাথা শুনিয়েছেন ’৯২ বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকানো রমিজ রাজা। আর পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ব্যাটিং পরামর্শক ম্যাথু হেইডেন বলেছেন, ’৯২ থেকে প্রেরণা খুঁজছেন বাবররা। হেইডেন বলেন, ‘তিনি (রমিজ) ১৯৯২ বিশ্বকাপের কিছু গল্প বলেছেন খেলোয়াড়দের। আমি মনে করি, এটা দারুণ ব্যাপার। এ কারণেই তো আপনি খেলেন।
বিজ্ঞাপন
রমিজরা যেভাবে এখন বাবরদের গল্প শোনাচ্ছেন, একদিন বাবররাও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শোনাবেন ২০২২-এর স্মরণীয় মুহূর্তগুলো। হেইডেন বলেন, ‘নিজেদের গ্রামে রাতের আড্ডায় আগুনের চারপাশে বসে উষ্ণতা নিতে নিতে তারা এসব গল্প শোনাবে। আমাদের একজনের মতোই মিডিয়া কনফারেন্সে এসে কীর্তিগাথা বলে যাবে তারা। ‘৯২ বিশ্বকাপ’ যেমন পাকিস্তান ক্রিকেট অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল, এই টুর্নামেন্টও তেমনটি একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে।’
১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান সেমিফাইনালে ওঠেছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এরপর সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড এবং ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ট্রফি জিতে নেয় ইমরান খানরা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভাগ্যের জোরে সেমিতে জায়গা পায় পাকিস্তান। প্রতিপক্ষ সেই নিউজিল্যান্ড। কিউইদের হারিয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির দ্বারপ্রান্তে পাকিস্তান। ৯২-এর ধারা বজায় রাখতেই যেন ফাইনালে উঠলো ইংল্যান্ড। তবে সেমিফাইনালে ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে ইতিহাস পাল্টানোর বার্তা দিয়ে রেখেছে জস বাটলারের দল।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গেছে তারা। যদিও শুরুতে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা ধুঁকছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টিকে থাকার লড়াইয়ে ছন্দে ফিরতে শুরু করেন বাটলার-হেলসরা। ভারতের বিপক্ষে তো রেকর্ডই গড়ে বসলেন এ দু’জন। ১৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ইংল্যান্ডকে নিয়ে গেছেন তৃতীয় ফাইনালে। ২০১০ সালে পল কলিংউডের নেতৃত্বে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে ইংল্যান্ড। সেবার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয় তারা। ২০১৬তে শিরোপার খুব কাছ থেকে ফিরতে হয় ইংল্যান্ডকে। শেষ ওভারে কার্লোস ব্রাথওয়েটের তাণ্ডবে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের স্বাদ নেওয়া থেকে বঞ্চিত হন মরগানরা। গত আসরে সেমিফাইনালে তাদের যাত্রা থামিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। নতুন অধিনায়ক বাটলার আরেকবার হৃদয় ভাঙার বেদনায় পুড়তে চান না।
বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানে গিয়ে সাত ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। ব্যাটে-বলে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে সমীহ করছেন হেইডেন। পাকিস্তান ব্যাটিং কোচ বলেন, ‘টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড আমাদের জন্য বড় হুমকি হবে। তাদের বিপক্ষেই আমরা ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে। আমার মনে হয় দুটি দলের খুব একটা পার্থক্য নেই, প্রায় সমান-সমান।’
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং গভীরতা পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। এক থেকে এগারো পর্যন্ত সবাই মারতে জানেন। ভারতের বিপক্ষে দাপুটে জয়ের পর বাটলার বলেন, ‘লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের কারণে আমরা স্বাধীনভাবে খেলতে পারি। সব সময়ই একটা বিধ্বংসী ও আক্রমণাত্মক ইনিংস শুরুর লক্ষ্য থাকে।’
তবে বাটলারদের থামানোর মতো অস্ত্র পাকিস্তানের রয়েছে। টুর্নামেন্ট যত সামনে এগিয়েছে পাকিস্তানের পেসাররা ততই বিকশিত হয়ে উঠেছেন। সেমিফাইনালে প্রথম ওভারে ব্রেকথ্রু এনে দেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। ফাইনালেও ইংলিশ ব্যাটারদের জন্য বড় হুমকি হবেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ইনজুরির কারণে ছিলেন না আফ্রিদি। বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন এ বাঁহাতি পেসার। আফ্রিদি ছাড়াও মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ ও হারিস রউফ ভালো বল করছেন। স্পিনে শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজ বরাবরই কার্যকর। নিজেদের দিনে হিরো হতে পারেন যে কেউই।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের বোলিং অ্যাটাকও দারুণ। ভারতের ম্যাচ বাদ দিয়ে আগের ম্যাচগুলোতে ডেথ ওভারে সবচেয়ে ভালো বোলিং করেছেন ইংল্যান্ডের পেসাররা। আদিল রশিদের স্পিন ট্রামকার্ডের কাজ করতে পারে ফাইনালে। ভারতের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২০ রানে তিনি তুলে নেন ‘বিগ ফিশ’ সূর্যকুমার যাদবের উইকেট। মার্ক উডের জায়গায় খেলতে নামা ক্রিস জর্ডান ৩ উইকেট নেন ম্যাচে। সবমিলিয়ে ইংল্যান্ডের এই দলটার দুর্বলতা কমই। গ্রাহাম গুচ, ইয়ান বোথাম, অ্যালান ল্যাম্ব, গ্রায়েম হিক, ডেরেক প্রিঙ্গল, ফিলিপ ডিফ্রিটাসদের নিয়ে গড়া ৯২-এর ইংল্যান্ড দলও তেমনই ছিল। কিন্তু তাদের হারিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। দেখা যাক, বাবর আজম ‘ইমরান খান’ শাহীন শাহ আফ্রিদি ‘ওয়াসিম আকরাম’ হয়ে উঠতে পারেন কিনা।