দেশ বিদেশ
জয়নগর সীমান্তে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভিসা বন্ধ
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
৪ অক্টোবর ২০২২, মঙ্গলবার দর্শনার জয়নগর চেকপোস্টে প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়েছে প্রায় ৩ বছর। এই রুটে আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভিসা রয়েছে বন্ধ। গোটা বিশ্ব মহামারি করোনার প্রভাব প্রায় শূন্যের কোটায় দাঁড়ালেও সে দোহায়ে ভারত দূতাবাসের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় ২২টি জেলার মানুষ এ রুটে যেতে পারছে না ভারতে। শুধুমাত্র ভারতীয় পাসপোর্টধারী গুটিকয়েক যাত্রীর জন্যই জয়নগর চেকপোস্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হচ্ছে। ইমিগ্রেশন-কাস্টমসসহ বিভিন্ন বিভাগে লোকবল আগের মতোই থাকলেও সরকারের খাতায় জমা হচ্ছে না কোনো রাজস্ব। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবারো চালু হয়। এ সময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেঁটে পাসপোর্ট যাত্রীরা চলাচল করতো। তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হতো দর্শনা স্টেশনের ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস্ চেকপোস্ট স্থানান্তরের মধ্যদিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। তখন রেললাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেঁটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছাতে হতো। সেকেলে অবস্থায় এখন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস নেই। সর্বক্ষেত্রেই লেখেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তাই আধুনিক পদ্ধতিতেই ইমিগ্রেশন-কাস্টমসসহ সকল বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বর্তমানে রেল লাইনের পাশ দিয়ে পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি বিজিবি’র উদ্যোগে রাস্তার দু’ধার দিয়ে লাগানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান, তা যেন আগতদের সর্বদা অভিবাদন জানাচ্ছে। অপর দিকে ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। বাংলাদেশের যেকোনো সীমান্ত রুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়ক পথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই রুটে যাত্রীদের চলাচল ছিল ব্যাপকভাবে। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত অন্য রুটের মত দর্শনাÑগেদে কাস্টমস রুটও বন্ধ করে দেয়া হয়। করোনায় বন্ধ থাকার পর স্থল পথে ভিসা প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হলেও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও ভারতের গেদে রুটে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান আড়াই বছর যাবৎ স্থগিত রয়েছে। অপর দিকে ভারতের নাগরিকদের যেকোনো ভিসায় এ রুট ব্যবহারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রুট দিয়ে যাতায়াত করা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে তাদেরকে বেনাপোল কাস্টমস চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দর্শনা কাস্টমস ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৬শে মার্চ বন্ধ হয় দর্শনা চেকপোস্টের কার্যক্রম। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুধুমাত্র মেডিকেল ও বিজনেস ভিসায় দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াতের অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৫ই ডিসেম্বর তাও বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াতের অনুমতি দেয়া হয়নি। এ কারণে দেশের প্রথম ব্যস্ততম দর্শনা কাস্টমস চেকপোস্টের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের দর্শনা এবং ভারতের গেদে স্থল রুটটি দু’দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় নিম্নÑমধ্যবিত্তরা এই রুটটি ব্যবহার করে থাকে। এতে যাত্রীদের খরচ-সময় উভয়েই সাশ্রয় হয়। তাছাড়া দর্শনা চেকপোস্ট রুটে ভিসা প্রদান স্থগিত থাকার কারণে বেনাপোল কাস্টমস চেকপোস্টে যাত্রীর চাপ মারাত্মক বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দর্শনা সিঅ্যান্ড এফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার বহমান হাবু জানান, দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে স্থল পথে বাংলাদেশিদের সব ধরনের ভিসা চালু করা হলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে, অপর দিকে বেনাপোল স্থল বন্দরের ওপর যাত্রীদের চাপ কমবে। সেই সঙ্গে দর্শনা কাস্টমস চেকপোস্টটি আবারো কর্ম তৎপর হয়ে উঠবে। দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক আরিফ বলেন, এ অঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ অতি সহজে, স্বল্প খরচে ভারতে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত এক প্রকার বৈষম্যের শামিল মনে হচ্ছে। এ রুটে ভারতের সবধরনের ভিসা যাত্রীরা যাতায়াতের সুযোগ পেলেও বাংলাদেশি নাগরিকের ক্ষেত্রে জুটছে না ভিসা। এ রুটের প্রাণচাঞ্চল্য ফেরাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের সুদৃষ্টি কামনা করা হচ্ছে।
এ দিকে দর্শনা জয়নগর সীমান্ত পথে ভিসা চালু করণের দাবিতে সামাজিক সংগঠন চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দর্শনা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে করা হয়েছে বৈঠক।