দেশ বিদেশ
বিশ্বের সবচেয়ে সিক্রেট জাদুঘর
মানবজমিন ডেস্ক
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবারজাদুঘর। তাতো থাকে সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে পরিদর্শন করতে পারেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র একটি জাদুঘর আছে। একে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে সিক্রেট বা গোপনীয় জাদুঘর। কথাটা শুনতেই কেমন অস্বাভাবিক লাগে। আসলেই সম্ভবত এটা সবচেয়ে অস্বাভাবিক এবং এক্সক্লুসিভ এক জাদুঘর। এতে আছে এমন সব ঐতিহাসিক সংগ্রহ, যার ওপর গড়ে উঠেছে ইতিহাস। সিআইএ’র এই জাদুঘর কালেভদ্রে সাধারণ মানুষের জন্য তার দরজা খোলে। আল কায়েদার প্রয়াত প্রধান ওসামা বিন লাদেন একটি বন্দুক ব্যবহার করতেন।
এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে ৬০০ সংগ্রহ। এর মধ্যে আছে শীতল যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত স্পাই গ্যাজেট। তাকে বলা হয় একটি ‘ডেড ড্রপ র্যাট’। এর ভেতর লুকানো থাকতো বার্তা। সিগারেটের একটি প্যাকেটের ভেতরে লুকানো থাকতো ক্যামেরা। একটি ঘুঘু- যার সঙ্গে থাকতো একটি স্পাই ক্যামেরা। আছে সম্প্রতি সিআইএ’র অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত বিষয়গুলোর বিবরণ। আছে সাম্প্রতিক অপারেশনগুলো। এর মধ্যে আছে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের ব্যবহৃত বাসভবনের আদলে একটি ছোট আকারের মডেল। ২০১১ সালে লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলরা। সেই অপারেশন চালানোর আগে ওই মডেল ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে পরিস্থিতি বোঝানো হয়েছিল।
সাংবাদিকদেরকে ওই জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ করে দেন জাদুঘরের পরিচালক রবার্ট জেড বায়ার। তিনি বলেন, কোনো কিছুকে থ্রিডি মডেল নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। কীভাবে অপারেশন পরিকল্পনা করা হবে, তা বুঝাতেও সহায়ক। এ বছর ৩০শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র আরেকটি ভবনে আঘাত করে। এবার এই হামলা করা হয় আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি বাসায়। সেখানে আল কায়েদার নতুন নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে টার্গেট করা হয়। একেবারে নতুন একটি মডেল সেখানে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ বছর ১লা জুলাই আফগানিস্তানে ওই মিশন চালানোর আগে এই মডেল ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ব্রিফ করা হয়েছিল। ওই বাসভবনের ব্যালকনিতে যখন অবস্থান করছিলেন জাওয়াহিরি, তখনই সেখানে আঘাত করে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায় তার চলাফেরা নিয়ে কয়েক মাস অনুসন্ধান করে। বায়ার বলেন, টার্গেট করা ব্যক্তির জীবন নিতে কীভাবে সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকর্তারা কাজ করেন, এগুলো তারই কথা বলে। গোপন এই জাদুঘরের প্রথম অর্ধেকটাই ১৯৪৭ সালে সিআইএ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কালানুক্রমে সাজানো হয়েছে। এই জাদুঘরের দর্শক বা শ্রোতারা হলেন সিআইএ’র নিজস্ব অফিসার এবং সফরে যাওয়া কর্মকর্তারা। এর মাধ্যমে সফলতাকে বড় করে দেখানো হয় না।
এতে দেখানো হয়েছে যখন কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সিআইএ অভিযান চালিয়েছিল, তা ভয়াবহভাবে ভুল প্রমাণ হয়েছিল। এ বিষয়টিও সেখানে আছে। ইরাক যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্রের মজুত খুঁজে পেতে ব্যর্থতার প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়েছে। বায়ার বলেন, এটা ইতিহাসের দিক থেকেই শুধু একটি জাদুঘর নয়। এটা হলো অপারেশনাল জাদুঘর। আমরা এসব নিয়ে সিআইএ’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। আমাদের ইতিহাস ঘুরে দেখি। দেখি তা কতোটা ভালো বা মন্দ ছিল। আমাদের কর্মকর্তারা যেন তাদের ইতিহাস বুঝতে পারেন, তা নিশ্চিত করি আমরা, যাতে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে পারেন। আমাদের সফলতা থেকে শিক্ষা নিতে হয়। ব্যর্থতা বলে দেয় ভবিষ্যৎ আরও ভালো হতে হবে। সিআইএ’র বেশি বিতর্কিত বিষয় কমই দেখা যায়। ১৯৫৩ সালে এমআই-৬ এর সঙ্গে যৌথভাবে ইরানে তখনকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা হয়। ২০০১ সালের পর সন্ত্রাসী সন্দেহে নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে।
গোপন এই জাদুঘরের দ্বিতীয় অর্ধেকাংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু অপারেশন। ১৯৬০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি সাবমেরিন সমুদ্রের তলায় কোথাও হারিয়ে যায়। সমুদ্রের তলায় তা শনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। বিলিয়নিয়ার হাওয়ার্ড হিউয়ের সঙ্গে ওই সাবমেরিনটির অবশিষ্টাংশ এবং তাতে কী প্রযুক্তি আছে, তা জানার জন্য সাবমেরিনটি উদ্ধারে কাজ করে সিআইএ। বলা হয়, গ্লোমার এক্সপ্লোরার নামের একটি জাহাজ ব্যবহার করে সমুদ্রতলায় খনির সন্ধান করবেন হাওয়ার্ড হিউ। ফলে সোভিয়েত ওই সাবমেরিনের একটি মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে ওই জাদুঘরে। এতে আছে পোশাক, অ্যাশ ট্রে, মেইলব্যাগ। সিআইএ’র ওই মিশন আংশিক সফল হয়েছিল। কারণ, গ্লোমারের স্টিলের হাতলগুলো সাবমেরিনের অংশগুলো তুলে আনতে চেষ্টা করে। এতে কিছু অংশ উদ্ধারে সক্ষম হয় তারা। সাবমেরিনটির বাকি অংশ উদ্ধারের জন্য প্রজেক্ট অ্যজোরিয়ানের খবর বেরিয়ে পড়ে। কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে কর্মকর্তারা তখন নিশ্চয়তাও দেননি, আবার প্রত্যাখ্যানও করেননি।