দেশ বিদেশ
উচ্চ ঝুঁকিতে দেশের ৩২ বীমা কোম্পানি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম জানিয়েছেন, দেশে ব্যবসা করা ৩২টি বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানি এবং ১৭টি সাধারণ বীমা কোম্পানি।
বুধবার আইডিআরএ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান তিনি। কোম্পানিগুলোর ব্যবসা, সম্পদ সহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে এই উচ্চ ঝুঁকিতে থাকার তথ্য বের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বীমা কোম্পানিগুলো সময়মতো গ্রাহকদের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ না করায় এ খাত চরম আস্থাহীনতার মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি। যে কারণে বীমা খাত পিছিয়ে পড়ছে বলে অভিমত আইডিআরএ চেয়ারম্যানের। তিনি বলেন, দেশের ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৬টি ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিপরীতে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫ বীমা কোম্পানি এবং ১৫টি রয়েছে মধ্যম ঝুঁকিতে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, সাধারণ বীমা খাতের ১৭টি বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জীবন ও সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর নাম উল্লেখ করেননি তিনি।
তবে আইডিআরএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা ১৫ জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, সানলাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, এনআরবি ইসলামিক লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, বেস্ট লাইফ, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ এবং স্বদেশ লাইফ।
জানা গেছে, ২০২৪ সাল শেষে এসব কোম্পানির কাছে গ্রাহকের বীমা দাবি রয়েছে ৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো পরিশোধ করেছে মাত্র ৬৩৫ কোটি টাকা। এসব কোম্পানির অপরিশোধিত দাবির পরিমাণ ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এসব জীবন বীমা কোম্পানির ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরের বিশেষ নিরীক্ষা করাচ্ছে আইডিআরএ। বীমা দাবি পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আইডিআরএ’র কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ না করায় এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বেড়েছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ছাড়া আস্থা বাড়বে না। বর্তমানে জীবন বীমা খাতে অপরিশোধিত দাবি আছে ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া সাধারণ বীমা খাতে প্রায় ৪৭ শতাংশ দাবি অপরিশোধিত রয়েছে।
এসব দাবি সময়মতো পরিশোধ, মানুষের আস্থা বাড়াতে বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক রেজ্যুলেশনের আদলে বীমাকারীর রেজ্যুলেশন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আলোকে কেবল বীমা প্রতিষ্ঠান একীভূত হবে তেমন না- অবসায়ন, অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হবে।
ড. এম আসলাম আলম বলেন, জিডিপি অনুপাতে ২০১০ সালে বীমার হার ছিল ০.৯৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা কমে ০.৪১ শতাংশে নেমেছে। ২০২৪ সালে তা আরও কমেছে। শুধু ২০২৪ সালে আইডিআরএ ২৪ হাজার ৮৫২টি অভিযোগ পেয়েছে।
সমপ্রতি বীমা কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন নবায়ন ফি হাজারে এক টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে আইডিআরএ। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়- বর্তমানে বীমা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে নিবন্ধন নবায়ন ফি বাড়ানো হলে কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি হবে কিনা? তাছাড়া বর্তমানে আইডিআরএ’র তহবিলে বড় ধরনের উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে। এর উত্তরে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। লোকবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লোকবল বাড়লে তখন আইডিআরএ’র খরচ বাড়বে। সবকিছু বিবেচনা করেই নিবন্ধন নবায়ন ফি বাড়ানো হচ্ছে।