দেশ বিদেশ
অধিকৃত নদীর পানি না দেয়ার হুমকি মোদির, জবাব দিয়েছে পাক সেনাবাহিনী
মানবজমিন ডেস্ক
২৪ মে ২০২৫, শনিবার
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য এবং সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিতে তাদের একতরফা সিদ্ধান্ত ভারত-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এপ্রিল মাসে ভারত শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তারা ছোটখাটো একটি যুদ্ধ করে ফেলেছে। বলা হচ্ছে বিদেশি হস্তক্ষেপে তা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছে। তবে ভারত তা অস্বীকার করে। ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে বার বার বলা হচ্ছে- যুদ্ধ শেষ হয়নি। পাকিস্তান এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে নালিশ জানাচ্ছে। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভারতের রাজস্থানে এক জনসভায় মোদি বলেন, ভারতের অধিকারে থাকা নদীর পানি আর পাবে না পাকিস্তান। প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে বড় মাশুল দিতে হবে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেবে, পাকিস্তানের অর্থনীতিও দেবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট করে দেন যে, ভারতের দৃষ্টিতে পানি চুক্তি আর অব্যাহত থাকবে না এবং এটি পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল হিসেবেই ব্যবহার করা হবে। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই হুমকিকে পাগলামি বলে অভিহিত করেছেন পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী। বলেছেন, ভারত পাকিস্তানের পানি সরবরাহ বন্ধ করতে পারে- এমন চিন্তা করা পাগলামি। আল জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় এ হুমকি দেন তিনি। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু নদের পানি চুক্তি ছিল দুই দেশের মধ্যে অন্যতম টেকসই ও সফল চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পূর্বদিকের তিনটি নদীর (রবি, বিয়াস, ও শতদ্রু) পানি ব্যবহারের অধিকার রাখে এবং পশ্চিমের তিনটি নদী (সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলাম) প্রধানত পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত। এই পানির উৎস পাকিস্তানের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাকিস্তানের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ কৃষিজমি এই নদীগুলোর পানির ওপর নির্ভরশীল। তবে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, আপাতত এই সিদ্ধান্তে ‘তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব’ পড়বে না। ২২শে এপ্রিলের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করেই পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এ নিয়ে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ১০ই মে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও পরিস্থিতি এখনো অস্থির। এ অবস্থায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, যদি পাকিস্তান থেকে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়, তাহলে আমরা জবাব দেবো, সন্ত্রাসীরা যেখানে থাকবে, আমরা সেখানেই আঘাত করবো। এ বক্তব্যের পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উভয় দেশ একে অপরের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ, সীমান্ত বন্ধ এবং ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করার মতো একাধিক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ ক্রমাগত সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান সংকট শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই অশনি সংকেত। পানির মতো মৌলিক ও মানবিক বিষয়ে চুক্তি বাতিল করে এটিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ, উভয় দেশকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন না করলে পরিস্থিতি যেকোনো
সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। পাক সেনাবাহিনীর জবাব: পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ভারত পাকিস্তানের পানি সরবরাহ বন্ধ করতে পারে- এমন চিন্তা করা ‘পাগলামি’। আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর ওই মুখপাত্র বলেন, শুধুমাত্র কোনো পাগলই এটি ভাবতে পারে যে, ভারত পাকিস্তানের পানি বন্ধ করতে পারবে। ২৪ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশের পানি বন্ধ করা সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, যেসব নদীর ওপর ভারতের অধিকার আছে পাকিস্তান ওইসব নদীর পানি পাবে না। পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিল করে ভারত। নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ছয়টি নদী কাশ্মীর থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং জাতিসংঘের রেজ্যুলেশন অনুযায়ী কাশ্মীর এখনো একটি বিতর্কিত অঞ্চল। কাশ্মীরের জনগণ যদি পাকিস্তানের সঙ্গে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ওই সব নদী আমাদের হবে। ওই সময় পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে ওই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব থাকবে পাকিস্তানের ওপর।
আইএসপিআর মহাপরিচালক পাকিস্তানের মানুষের ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, আপনি যদি পাকিস্তানের সড়কগুলো দেখেন তাহলে আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ কেবল রাজনৈতিক বা সামরিক নয় বরং এটি সত্য ও নীতির যুদ্ধ। পাকিস্তানের মার্কা-ই-হাক’কে একটি ন্যায্য সংগ্রাম হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ভারতের আগ্রাসন, প্রতারণা ও মিথ্যাচার প্রকাশ করে দিয়েছে পাকিস্তান। পেহেলগাম হামলার পরের ঘটনাবলী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত একটি বানোয়াট আখ্যান তৈরি করেছে।