দেশ বিদেশ
২৩শে মে ২৩ নিয়োগ পরীক্ষা, বিপাকে লাখো চাকরিপ্রার্থী
আরিফুল ইসলাম
২৪ মে ২০২৫, শনিবারএকই দিনে ২৩টি নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করায় বিপাকে পড়েছেন লাখো চাকরিপ্রার্থী। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষার সময়সূচি থাকায় বিপাকে পড়েন তারা। একাধিক আবেদনের পর এমন সিদ্ধান্তে সব পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ মিলছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, এভাবে পরীক্ষা হতে থাকলে চাকরিপ্রার্থীরা সরকারি চাকরি বিমুখ হবে। এমনিতেই দেশের বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছেন এবং অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ সরকারি চাকরির এই জটিল প্রক্রিয়ায় দিনের পর দিন বেকার বসে থাকতে হয়। তারমধ্যে যদি একদিনে এতগুলো পরীক্ষা পড়ে কীভাবে সবগুলোতে একজন পরীক্ষার্থী এটেন্ড করবেন?
তারা আরও বলেন, একই সঙ্গে এতগুলো পরীক্ষা বেকারদের সঙ্গে প্রহসনের শামিল। সরকারি চাকরির আশায় অনেকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। আমরা চাকরির জন্য আবেদন করি যে একেকটা পরীক্ষা একেকদিন হবে। কিন্তু একসঙ্গে পরীক্ষাগুলো হওয়ায় কারও সবগুলো পরীক্ষায় বসা সম্ভব নয়। যার কারণে সবাই বেছে বেছে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। সেই পরীক্ষাগুলোতেই বসেছেন। এভাবে পরীক্ষা নিলে সরকার লাভবান হয়। কেননা, টাকাটা পরীক্ষার আবেদনে আগেই দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয় না। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সমন্বয়ের মাধ্যমে পরীক্ষার সময়সূচি ঠিক করতো, তাহলে এধরনের দুর্ভোগ হতো না। তারা ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সচেতন হবেন।
সিদ্ধান্তহীনতায় চাকরিপ্রার্থীরা: জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (ঘঝও) নিয়োগ পরীক্ষা সহ একই দিনে আরও ২২টি নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত ছিল শুক্রবার। এতে একজন চাকরিপ্রার্থীকে একাধিক পরীক্ষার ফরম পূরণ করলেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কোন পরীক্ষায় অংশ নেবেন আর কোনটি বাদ দিবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহ আলম বলেন, কয়েকটি পরীক্ষায় রিটেন ও ভাইভা দিয়ে বাদ পড়েছি। এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তারপর একসঙ্গে এতগুলো পরীক্ষা। কীভাবে কি করবো কোনোটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে পুরো বিষয়টি সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিয়ে এনএসআই আর পল্লী বিদ্যুতের চাকরিতে পরীক্ষা দিয়েছি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান রাব্বি বলেন, আমি তিনটি নিয়োগে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু দুটো একসঙ্গে পড়ায় আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোনটাতে উপস্থিত হবো। এভাবে পরীক্ষা নিলে দেশের বেকারদের সঙ্গে প্রহসন করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি একটা পরীক্ষাতেই অংশ নিতে পেরেছি শুধু।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রার্থী ফয়সাল হাবিব বলেন, আমাদের সঙ্গে নাটক করার মতো একটা অবস্থা করা হয়েছে শুক্রবার এতগুলো পরীক্ষা একসঙ্গে রেখে। আমি এর আগে এসআই পরীক্ষায় ভাইভা দিয়ে বাদ পড়েছি। একটি পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত যেতে কতো ঘাম ঝরাতে হয়। তা কেবল যে ফেইস করেন তিনিই বুঝতে পারেন। মানসিক অবস্থা এখন এমনিতেই ভালো নেই। তার উপরে আবার আবেদন করে রেখেছিলাম অনেকগুলো নিয়োগে। আজকে দেখি ৬টা পরীক্ষা একসঙ্গে। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কোনটাতে যাবো। তাই শুধু এনএসআইয়ের পরীক্ষাটাই দিয়ে বাসায় চলে আসছি। বাকিগুলো আর দেইনি।
সিরাজগঞ্জ থেকে আগত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, আমি পাঁচটি নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলাম। সবগুলো একদিনে হওয়ায় শুধু একটি দিতে পেরেছি। এত প্রস্তুতি ও টাকা খরচ করে শেষে এই পরিস্থিতি মেনে নেয়া কষ্টকর।
শাহিন আলম নামে আরেক চাকরিপ্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুটি পরীক্ষার কেন্দ্র দুই প্রান্তে হওয়ায় যানজটের কারণে একটিতে পৌঁছাতেই পারিনি। এমন সিদ্ধান্ত শুধু হয়রানিই নয়, তরুণদের হতাশার দিকে ঠেলে দেয়।
শুধু চাকরিপ্রার্থীরাই নন, অভিভাবকরাও এই পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত তরুণদের সঙ্গে অন্যায়।
উল্লেখ্য, চাকরিপ্রার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফরম ‘পিএসসি সংস্কার আন্দোলন’ এই পরিস্থিতিকে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে ‘চরম তামাশা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক আওরঙ্গজেবের স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতে গত ১৯শে মে বলা হয়, একদিনে ২৩টি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত মূলত হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর স্বপ্ন ও শ্রমকে অবমূল্যায়ন করার নামান্তর। এটি চরম অবিচার ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা। তারা একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন এবং নিয়োগ পরীক্ষার সময়সূচি একাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে নির্ধারণ করারও আহ্বান জানিয়েছে, যাতে চাকরিপ্রার্থীরা তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে একাধিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান।