দেশ বিদেশ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউ ও বৃটেনের নিষেধাজ্ঞা
মানবজমিন ডেস্ক
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপেক্ষায় না থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও বৃটেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনালাপের একদিন পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। ওই ফোনালাপে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রতিশ্রুতি আদায় করা যায়নি পুতিনের কাছ থেকে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। লন্ডন ও ব্রাসেলস জানায়, নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত রাশিয়ার ‘ছায়া তেল বহর’ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। যারা রাশিয়াকে আগের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে তারা এর আওতায় পড়বে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি টেলিগ্রামে লিখেছেন, নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব রয়েছে এবং আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি যারা যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে এসবকে (নিষেধাজ্ঞা) বাস্তব করে তুলছেন। এই নতুন নিষেধাজ্ঞার সময় যুক্তরাষ্ট্র সমমানের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যদিও ইউরোপীয় নেতারা প্রকাশ্যে হোয়াইট হাউসকে এই উদ্যোগে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বলেন, আমরা বারবার রাশিয়ার কাছে একটাই প্রত্যাশা জানিয়েছি। তাহলো শর্তহীন যুদ্ধবিরতি। যেহেতু রাশিয়া তা মানেনি, আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাতেই হবে। আমরা আশা করি আমাদের মার্কিন মিত্ররাও রাশিয়ার এ কর্মকাণ্ড সহ্য করবেন না। ট্রাম্পের অনুরোধে রাশিয়া ও ইউক্রেন গত শুক্রবার তিন বছরের মধ্যে প্রথমবার সরাসরি আলোচনা করলেও, সেখানে কোনো যুদ্ধবিরতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। ইউক্রেন বলেছে, তারা ট্রাম্প প্রস্তাবিত তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত, তবে রাশিয়া আগে শর্ত সাপেক্ষে আলোচনার কথা বলেছে। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াস মন্তব্য করেন, পুতিন সময় নষ্ট করছেন এবং শান্তিতে সত্যিই আগ্রহী নন তিনি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, রাশিয়া কোনো আল্টিমেটাম মেনে নেবে না। পুতিন জানান, তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে একটি ভবিষ্যৎ শান্তি স্মারক নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। জাখারোভা বলেন, এখন বল কিয়েভের কোর্টে। ওদিকে ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞায় যুক্ত করতে সম্প্রতি প্রকাশ্যে তৎপরতা চালিয়েছেন। বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা কিয়েভে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন এবং জেলেনস্কিকে সঙ্গে রাখেন। ব্রাসেলস ও লন্ডন উভয়েই জানিয়েছে, তারা আরও নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা করছে এবং এখনো আশা ছাড়েনি যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো বলেন, চলুন পুতিনকে তার সাম্রাজ্যবাদী কল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য করি। বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, যুদ্ধবিরতির বিলম্ব আমাদের সংকল্পকে আরও দৃঢ় করবে।
ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস বলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু সবার অংশগ্রহণ জরুরি। তিনি জানান, যদি শর্তহীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি না হয় রাশিয়া, তাহলে শক্ত পদক্ষেপই একমাত্র পথ। এবং এটি সকল পক্ষের কাছ থেকেই আশা করি। নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রধান লক্ষ্য হলো রাশিয়ার ‘ছায়া জাহাজ বহর’, যারা ৬০ ডলারের ব্যারেল মূল্যসীমা এড়িয়ে তেল রপ্তানি করছে। এটি এ৭-এর মূল্যসীমা নীতিকে অকার্যকর করে দিচ্ছে। ইইউ ও বৃটেন জানিয়েছে, তারা মূল্যসীমা আরও নিচে নামাতে কাজ করবে, কারণ বিশ্ববাজারে তেলের দাম বর্তমানে কম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। পুতিনও বলেছেন, এই প্রক্রিয়া সময় নেবে। তবে ইউরোপের বিশ্লেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কূটনৈতিক চাপ বজায় রাখাই এখন মূল কৌশল, যাতে পুতিনকে আলোচনায় বাস্তব সমাধানের পথে আনা যায়।