দেশ বিদেশ
রাজধানীতে ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচি পালন
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবারগাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপন করে রাজধানীতে ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচি পালন করেছে সুন্নিপন্থিরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পেয়ে গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্যমঞ্চ’- এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এর আগে ‘বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’- এর ডাকে গতকাল সকাল থেকেই হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, কালিমা খচিত পতাকা, গায়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে নানা রকমের প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাজধানীর পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পরে তারা একে একে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে জড়ো হয়। এ সময় তারা ফিলিস্তিনির ওপর ইসরাইলের বর্বর হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানান। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের চরম বর্বরতা ও নৃশংসতা আর সহ্য করা যায় না। যতোদিন প্রাণ থাকবে, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে কথা বলা আমরা বন্ধ করবো না। তারা বলেন, ইসরাইলের আধিপত্য এখন আর শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও এর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে। বক্তারা বলেন, ভারতের মোদি সরকারও দক্ষিণ এশিয়ায় ইসরাইলি ধাঁচের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় মুসলিম-বিরোধী ও অসাংবিধানিক ওয়াক্ফ বিল পাস হয়েছে। এ ঘটনাকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান তারা। তারা বলেন, বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিক হিসেবে ভারতীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানি দায়িত্ব। ভবিষ্যতেও এ দায়িত্ব পালনে পিছপা হবেন না তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র মাজারে হামলা প্রসঙ্গে তারা বলেন, ৫ই আগস্ট থেকে দেশে অসংখ্য মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, যা সুস্পষ্টভাবে জুলুম ও অমানবিক। বক্তারা সতর্ক করেন, ভবিষ্যতে যদি কোনো মাজারে হামলা হয়, তাহলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিরোধ করা হবে। একইসঙ্গে, ভারতে মুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং ঘোষণা দেয়া হয়, সেখানে হামলা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ সময় আয়োজিত সমাবেশ থেকে ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, ইসরাইলের হামলায় ফিলিস্তিনের যতো কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সকল কিছুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইতিমধ্যে যতো হত্যা হয়েছে সকল হত্যাকাণ্ড ও হামলার তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে, ইন্ডিয়ার লোকসভায় পাস হ?ওয়া অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াক্ফ বিল লোকসভায় বাতিল ঘোষণা করতে হবে, ৫ই আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজারে যতো হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে- সবগুলো ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়াও সমাবেশ থেকে আরও তিনটি অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়। সেগুলো হলো- ইসরাইল ও ইন্ডিয়াসহ সকল প্রকার বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখা, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগসহ সকল প্রকার দেশীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রাখা এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠী স্বার্থে যেকোনো সময় যেকোনো মূল্যে আমরা ময়দানে নামতে প্রস্তুত থাকা। এদিকে, তাদের এই কর্মসূচিকে ঘিরে পুরো প্রেস ক্লাব, পল্টন, সচিবালয় এলাকায় ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতি দেখা যায়। এদিকে, এই ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করতে দেখা গেছে।