ঢাকা, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ রজব ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

রেড অ্যালার্ট জারি

যেভাবে থানা থেকে পালিয়ে গেলেন ওসি

সুদীপ অধিকারী
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার

মো. শাহ আলম। জুলাই বিপ্লবের সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ই আগস্টের পর শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর সবশেষ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পরিদর্শক হয়ে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। ছাত্র-আন্দোলনের সময় নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে গত ২রা সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় গত বুধবার বিকালে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর ওসি শাহ আলমকে নিয়ে ওইদিন রাত ১২টার দিকে উত্তরা পূর্ব থানায় পৌঁছান এসআই লিটন শরীফ, এএসআই আ. জব্বার, কনস্টেবল বিল্লাল ও সোহেল। প্রথমে শাহ আলমকে রাখা হয় থানার ওসির রুমে। পরে তাকে ঢোকানো হয় হাজতে। রাতভর থানায় অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার সকালের আলো ফুটতেই শাহ আলমকে আদালতে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। সবকিছু ঠিকঠাক। গাড়িও রেডি। এরইমধ্যে সকাল সাড়ে ১১টার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এএসআই সাজ্জাদকে শাহ আলম বলেন, আদালতে অনেক সময় পার হবে আমি একটু টয়লেটে যাবো। এসআই সাজ্জাদ তখন তাকে নিয়ে যান থানার পরিদর্শক (অপারেশন)-এর খালি রুমের বাথরুমে। তখন শাহ আলমের হাতে কোনো হাতকড়াও পরানো ছিল না। আসামিকে খালি রুমের বাথরুমে একা রেখেই আইও সাজ্জাদ থানার মুন্সির রুমে চলে যায়। তারপর রিমান্ড চাওয়া হবে কিনা তাই জানতে ওসির রুমে যান। কিন্তু এর মধ্যেই সকলের সামনে দিয়ে নিরিবিলি হেঁটে দুপুর ১২টা ০৮ মিনিটে থানা ত্যাগ করেন সাবেক ওসি শাহ আলম। একই থানায় আগে কর্মরত থাকায় সহজেই রাস্তায় বের হয়ে মানুষের সঙ্গে মিশে যান তিনি।

বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তেজনা চললেও থানা থেকে গণঅভ্যুত্থানের হত্যা মামলার আসামি পালিয়ে যাওয়ার পুরোটা বিষয় চেপে রাখে পুলিশ। উত্তরা পূর্ব থানার ওসি, উত্তরা জোনের ডিসি, এডিসি, ডিএমপি’র মিডিয়া কেউই প্রথমে স্বীকার করেনি পুলিশ হেফাজত থেকে ওসি শাহ আলম পালিয়ে গিয়েছেন। চলে নানা নাটকীয়তা। তবে সন্ধ্যার পর আস্তে আস্তে সব প্রকাশ পেতে থাকে। থানা থেকে জুলাই বিপ্লবের হত্যা মামলার আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। শাহ আলমকে পুনরায় গ্রেপ্তার করতে সময় বেঁধে দেয় তারা। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। ওসি শাহ আলম পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানার সামনে আন্দোলন করা জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ যারা আছেন, তাদের কেউ সহযোগিতা না করলে ওসি শাহ আলম পালাতে পারতেন না। পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, বাথরুম করার নাম করে পালিয়েছেন, এসব গল্প বিশ্বাস করি না। হাজতখানার মধ্যেই বাথরুম করার ব্যবস্থা আছে। আসলে টাকা খেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য আমরা চাই, কে এই সুযোগ করে দিলো কতো টাকার বিনিময়ে করে দিলো তা বের করা হোক। ওসি শাহ আলমকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হোক। এই উত্তরা থানার সামনেই আমাদের ভাইয়েরা পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। আমরা তাদের বিচার নিয়ে ছিনিমিনি দেখে ঘরে বসে থাকতে পারি না। এ বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় গত ২রা সেপ্টেম্বর শাহ আলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই মামলায় বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করার জন্য তাকে উত্তরা পূর্ব থানায় আনা হলেও ওইদিন দুপুরে তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। আমরা সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছি- দুপুর ১২টা দিকে আদালতে নেয়ার পথে গ্রেপ্তার শাহ আলম থানার ওসি অপারেশনের খালি রুমের টয়লেটে যান। এ সময় তার দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন এএসআই সাজ্জাদ হোসেন। তাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান শাহ আলম। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে এএসআই সাজ্জাদ ও ঘটনার সময় দায়িত্ব পালন করা উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিবউল্লাহকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমি নতুন ভারপ্রাপ্ত ওসির দায়িত্ব পালন করছি। তিনি বলেন, শাহ আলম যাতে বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ যেকোনো সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেজন্য আমরা সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছি। সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের সবক’টি ইউনিট কাজ করছে। এ ছাড়াও শাহ আলমকে ধরতে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। দেশে প্রবেশ ও প্রস্থানের সমস্ত পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাও নেয়া হচ্ছে। আশাকরি, দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবো। একইসঙ্গে শাহ আলম কীভাবে পালিয়ে গেলেন তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। পলাতক সাবেক ওসি শাহ আলমের বিষয়ে ডিএমপি’র উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আহম্মদ আলী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে সাবেক ওসি শাহ আলমকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছিল। এর মধ্যেই থানা-পুলিশের হেফাজত থেকে কৌশলে পালিয়ে যান তিনি। উত্তরা পূর্ব থানার দায়িত্বে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে হয়রানি, মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। গত ২রা সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া একটি হত্যার মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে। সবশেষ থানা হেফাজত থেকে পালানোর ঘটনায় শাহ আলমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের তৎপরতা ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালিয়ে ছাত্র ও জনতা হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত পলাতক সাবেক ওসি শাহ আলমকে পুনরায় গ্রেপ্তার ও তাকে পালাতে সহায়তাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। শুক্রবার দুপুরে উত্তরা বিএনএস সেন্টার থেকে মিছিল শুরু করে হাউজ বিল্ডিং হয়ে আজমপুর পূর্ব থানার পাশে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার রওনক জাহান বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ছাত্র-জনতা সবসময় দেশের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, এবারো তাদের সহযোগিতায় পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করবো। তদন্ত চলছে এবং খুব দ্রুত আপনাদের ভালো খবর দেয়া হবে। তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এ সময় ডিসি রওনক জাহান জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করার আশ্বাস দেন এবং জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন। তবে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে এবং বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

পাঠকের মতামত

শাহআলম জেনেশুনে পালিয়েছে, কেউ তাকে সহায়তা করুক আর নাই করুক সে পালিয়েছে তাকে গ্রেফতার করা জরুরি সে বর্ডার পার হতে পারবে বা কাহারো সহযোগিতায় পালাবে নিশ্চিৎ। কাউয়া পালিয়েগেছে সেও পারবে।

Faiz Ahmed
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১২:২৯ অপরাহ্ন

জুলাই বিপ্লবের খুনীরা তো পালাবেই।সকল সেক্টরেই খুনীদের অবাদ বিচরণ -অবস্থান। ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জুলাই-আগষ্ট গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার উপর গুলির হুকুম দেয়া সকল খুনী ম্যাজিষ্ট্রট ও তাদের সহযোগী কর্মকতা-কর্মচারী বহাল তবিয়তে। এখন তাদের একটাই কাজ দূর্নীতি, লুটপাট ম্যাজিষ্ট্রেটদের আদেশের প্রমাণাদি গুম করা।বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকও চারপাশে ঘিরে থাকা তাদের কাছে অসহায়।

ইকবাল কবির
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

তার মানে ছাত্র-জনতাকেই এখন এসব দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে; দায়িত্বরতরা এখন ও দূর্নীতিগ্রস্থ........

জনতার আদালত
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

ওই এএসআইকে আগে গ্রেফতার করুন ।

N Islam
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Bangladesh Army

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status