দেশ বিদেশ
চট্টগ্রাম বন্দরকে আমাদের জঞ্জালমুক্ত করতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৯ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এখানে (চট্টগ্রাম বন্দরে) অনেক অনিয়ম হয়েছে। সেটা বলতে গেলে সারাদিন লাগবে। অনেককে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তারা কারও চাচা, ভাই বা মামা। এ সবই কিন্তু আমাদের নজরে আছে। এই বন্দরকে আমাদের জঞ্জালমুক্ত করতে হবে। তবে জঞ্জালগুলোকে দূর করতে একটু তো সময় লাগবে। মাত্র দু’মাসের মাথায় ২২ বছরের পড়ে থাকা কাজ দূর করা অনেক কঠিন। যেসব যন্ত্র পড়ে আছে সেগুলোর ব্যবহার ঠিকমতো করা হবে। ২২ বছর ধৈর্য ধরেছেন। অন্তত ২২ মাস ধরেন। পরিবর্তন হয় কিনা দেখেন। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৩ জেটিতে বন্দর সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এসব কথা বলেন। এর আগে নৌ উপদেষ্টা সকাল ৯টা থেকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়ার চর, বে-টার্মিনালের প্রকল্প এলাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম পোর্ট হচ্ছে বাংলাদেশের লাইফলাইন। এ পোর্ট যদি না চলে এবং যে অব্যবস্থপনা ছিল সেটা যদি দূর না হয় আমাদের অর্থনীতির লাইফলাইনে অসুবিধা হবে। সে কারণে আমি গত তিনদিন ধরেই এ পোর্টে ঘোরাঘুরি করছি। আমরা ম্যানুয়ালি থেকে যদি অটোমেশন করতে পারি তাহলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সময় আরও কমে যাবে। আগে একটি জাহাজ আসলে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতো পণ্য খালাস করতে। এখন সেটা অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই বলে আমরা যে সন্তুষ্ট, তা একদম নয়। অটোমেশন হলে কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিং এর সময় আরও কমবে।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বন্দরের অব্যবস্থাপনার জন্য সে একা দায়ী নয়। এখানে ২০ বছর আগের কনটেইনার পড়ে আছে। ১২ থেকে ১৪ বছর ধরে গাড়ি পড়ে আছে। এগুলো নিলাম করার কাজ এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)। আমি এখনো ওদের সঙ্গে কথা বলিনি। জানি না তাদের সমস্যা কি। বন্দরের জায়গা যদি এভাবে ভর্তি হয়ে থাকে তাহলে কার্যক্রম কীভাবে বাড়বে। পোর্টের জায়গা যদি খালি না করে এত কনটেইনার আছে এগুলো আমরা রাখবো কোথায়। ফিরে গেলে আমি এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবো। শুধুমাত্র বন্দর নয়, আরও যেসব সংস্থা আছে তাদেরকেও কাজ করতে হবে। যদি কাজ না করে তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজগুলো করতে পারবে না। আমাদের কাছে বিনিয়োগকারী আছে। তারা অটোমেশনে কাজ করতে চায়। দুর্নীতি থাকলে অবশ্যই বলবেন। বন্দরের অনিয়ম ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলনে, এখানে অনেক অনিয়ম হয়েছে। সেটা বলতে গেলে সারাদিন লাগবে। অনেককে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তারা কারও চাচা, ভাই বা মামা। এসবই কিন্তু আমাদের নজরে আছে। এ বন্দরকে আমাদের জঞ্জালমুক্ত করতে হবে। আর এটা যাতে কুইক রেসপন্স করতে পারে সেটার জন্য কাজ করতে হবে। আমি বে-টার্মিনালের জায়গাগুলোও দেখে আসছি। আমি এ মুহূর্তে সেটা নিয়ে খারাপ-ভালো বলবো না। আমি আপাতদৃষ্টিতে বে-টার্মিনালে কোনো সমস্যা দেখছি না। এখানে বিনিয়োগ করার জন্য অনেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী বসে আছে। আগামী বেশকিছু বছর পরে এ টার্মিনালের যে সম্ভাবনা সেটা দেখতে পাবো। আমাদের দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। সেগুলোও লোড-আনলোড করতে সমস্যা হবে না। এখানে সৌদি আরব, নেদারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ বিনিয়োগ করেছে। বিনিয়োগকে যদি আমরা নিরুৎসাহিত করি তাহলে আমাদের এখানে কিন্তু বাইরের কেউ আসবে না।
শাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিঙ্গাপুরের পোর্ট আর আমাদের বন্দরের মধ্যে কিন্তু তফাৎ আছে। তারা উম্মুক্ত। তারা অনেক এগিয়ে। বন্দরগুলোকে আমরা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি, বন্দরের ভেতরে যে অরাজকতা ও চোরাচালান আছে সেগুলো যদি বন্ধ করতে পারি তাহলে আমরা অনেক টাকা আয় করতে পারবো। বন্দরের দুর্নীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ব্যবস্থা বা তদন্ত করবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে নৌ উপদেষ্টা বলেন, আমি তো দেখতে আসলাম ও বুঝতে আসলাম। আমি তো পোর্ট বিশেষজ্ঞ নই। আর আপনি যেটা বলেছেন ২২ বছর আগের ঘটনা। ২২ মিনিটের দূর করা সম্ভব না। আমরা ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিয়ে আগাচ্ছি। আমরা চাই না আর কিছু ইন্টারেস্টড লোক পোর্ট অচল করে। সারাদিন তিন পোর্টের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। আপনারা জানেন স্থলবন্দর কতোগুলো, সেগুলোতে এখন আরও বেশি দুর্নীতি।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলের শেষদিকে বিদেশি বার্থ অপারেটর নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, যদি আমাদের স্বার্থরক্ষা করে বন্দরের মুনাফা বেশি হয় এবং যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে তাদের কোনো সমস্যা না হয় তাহলে আমরা এটা চিন্তা করতে পারি। রাতারাতি এটা হবে না। প্রত্যেক স্টেপ আপনারা জানতে পারবেন। এটা নিয়ে একটি কমিটি হবে। পোর্টের জন্য যেটা ভালো হবে সেটা করা হবে।