ষোলো আনা
নির্ভৃতচারী এক সাদা মনের মানুষ খায়রুল বাকের
রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
(১ বছর আগে) ১৮ জুলাই ২০২২, সোমবার, ৯:০২ অপরাহ্ন
একজন সাদা মনের মানুষ নরসিংদীর বেলাব উপজেলার কৃতি সন্তান লাল সবুজ চেতনা সংসদ-এর প্রধান উপদেষ্টা প্রকৌশলী খায়রুল বাকের। সমাজ সেবায় অগ্রদূত হিসেবে তিনি এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৯শে নভেম্বর নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সররাবাদ গ্রামে জন্ম বাকেরের। মিন্নত আলী- ফজিলাতুন নেছা দম্পতির ৯ সন্তানের মধ্যে তিনি সপ্তম। বাকের একজন মানবিক মানুষ হিসেবে ইতিমধ্যে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বিশেষ করে নিজ এলাকা নরসিংদীর বেলাবতে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখা আর নতুন প্রজন্মের কাছে তা ছড়িয়ে দেয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত।
নিভৃতচারী খায়রুল বাকের নিজ এলাকায় আলোকবর্তিকা ছড়াচ্ছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা হিসেবে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ১৭টি সড়কের নামকরণ হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, সমাজসেবায় কী কী করেছেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কতগুলো লেখা বা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে- সব জানা না হলেও আগরতলা মামলার ২৯নং অভিযুক্ত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট জলিলের ২০২২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তিতে তার যে আন্তরিক কর্মতৎপরতা, সেই গল্প শুনে প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হওয়া যায় খুব সহজেই।
সার্জেন্ট জলিলকে নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘একটি গ্রেনেড, আগরতলা মামলা ও সার্জেন্ট জলিল,’ যা অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২১ এ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি সমাদৃতও হয়েছে বেশ। বহু তথ্য, ছবিসমৃদ্ধ গ্রন্থটি নি:সন্দেহে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য দলিল। গ্রন্থটি রচনার সময়ই বাকেরের অন্তর কেঁদে উঠেছিল- সেই আগরতলা মামলা থেকে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের এত বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও সার্জেন্ট জলিল কোনো জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হননি! তড়িঘড়ি করে সার্জেন্ট জলিলকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের জন্য আবেদন করে বসলেন।
ছোট্টবেলা থেকেই প্রখর মেধাবী খায়রুল বাকের ১৯৮৪ সালে ৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় নরসিংদী মহকুমার মধ্যে ১ম হয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এছাড়া কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেই বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েও মন মতো বিষয় না পেয়ে চুয়েটে পড়াশোনা করেন। তখনকার সময়ে ক্লাস নাইনের ভালো ছাত্ররা স্কুলের যেকোনো প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দিতেন। সেই সময়ে ক্লাসের ফার্স্ট বয় হিসেবে ছাত্ররাজনীতির সব প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দিতেন এই খায়রুল বাকের। ১৯৮৯ হতে ১৯৯৫ পর্যন্ত চুয়েটে তিনি শহীদ তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং চুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তখন ছাত্রশিবির ও এনডিপির বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তার শরীরে সেসবের চিহ্ন এখনও বিদ্যমান। চুয়েটে থার্ড ইয়ার পর্যন্ত প্লেসধারী ছাত্র হলেও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ঘনিষ্ঠতার কারণে পরীক্ষার পূর্বে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় তার প্লেস ছুটে যায়। তারপরও সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ১ম বিভাগ পেয়ে পাশ করেন এবং পরে উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপ পেয়েও চাকরি করা জরুরি হয়ে পড়ায় বিদেশে পড়তে যাননি। প্রকৌশলী খায়রুল বাকের দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে ঢাকার বেলাব সমিতির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০২০ সালে নরসিংদীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন এবং এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব সবার সামনে তুলে ধরছেন। এছাড়া এলাকায় শিক্ষা প্রসারের কাজে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। এমনকি নিজ এলাকার নরসিংদী বেলাবতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলিত কবর সংরক্ষণ ও পাকাকরণের ব্যবস্থাও করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু লায়েছ ও আবদুস সালামের কবর। এছাড়া অনেক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠকদের নামে বিভিন্ন রাস্তার নামকরণ করেছেন খায়রুল বাকের। সেগুলো হচ্ছে- শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক নূরু সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহন সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট (অব.) জলিল সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য রাজনৈতিক বাবর আলী সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক সার্জেন্ট কাদির সড়ক, সংগঠক সামসুল ইসলাম (সুরুজ ফকির) সড়ক, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক, সংগ্রামী কৃষক নেতা ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ ফজলুল হক খোন্দকার সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক কমরেড আবদুল হাই সড়ক, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক, কৃষক নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল হক ভূঞা (মাহতাব) সড়ক। এছাড়া প্রস্তাবিত আছে আরও ৮টি সড়কের নামকরণ।
এসব বিষয়ে প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, তার শিক্ষাগুরু আবদুল হামিদ এমএসসি সাহেবও এলাকায় কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। আমার বেলায়ও হবে- এ কথা জেনে-বুঝেই কাজ করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও করব।
নরসিংদী প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ জয়নুল আবেদীন বলেন, দেশের সব শিক্ষিত সচেতন জনসাধারণ প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি এলাকায় যদি খায়রুল বাকেরের মতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতেন, সমাজ উন্নয়নে আনাচে-কানাচে কাজ করতেন তাহলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যেতো।