দেশ বিদেশ
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার দাবিতে ব্লিনকেনকে চিঠি মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যানের
মানবজমিন ডেস্ক
১২ আগস্ট ২০২৪, সোমবারপদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দু’জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলিনের কাছে চিঠি লিখেছেন ৬ কংগ্রেসম্যান। এর মধ্যে সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির ডেমোক্রেট দলীয় সদস্য সিনেটর ভ্যান হোলেন বলেন, বাংলাদেশে যেসব ব্যক্তি নৃশংস দমনপীড়ন চালিয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতায় আনতে হবে। যেহেতু আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করছি, তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন, কংগ্রেস সদস্য লয়েড ডোগেট, সিনেটর এডওয়ার্ড জে. মারকি, কংগ্রেস সদস্য জেমস পি ম্যাকগর্ভার্ন, কংগ্রেস সদস্য উইলিয়াম আর কেটিং ও কংগ্রেস সদস্য আল গ্রিন। কংগ্রেস সদস্য লয়েড ডোগেটের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে ওই চিঠি। লয়েড বলেছেন, এখন সময় বড় অ্যাকশন নেয়ার। এখন শুধু মুখের ভাষায় উদ্বেগ জানানোর সময় নয়। যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, যাদের সঙ্গে নেই- তাদের সবার বিষয়েই মৌলিক মানবাধিকার প্রয়োগে সমর্থন করতে হবে আমাদের। আমরা শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎসাহিত করি। একই সঙ্গে সম্প্রতি যেসব নিষ্পেষণ চালানো হয়েছে এবং এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিত। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জন্য শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস শক্তিপ্রয়োগ মানবাধিকারের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।
যৌথ চিঠিতে আইনপ্রণেতারা লিখেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভকারী ছাত্রদের দমন করতে ১৫ই জুলাই তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করে। পরের সপ্তাহ জুড়ে বৈষম্যমূলক, বেআইনি শক্তি, রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস এবং সরাসরি গুলি করা হয় ছাত্রদের বিরুদ্ধে। ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যে ব্যাপক দমনপীড়ন চালায় তার অংশ ছিল এটা। এ দলটির নেতারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার বাইরে থেকেছেন। যদিও শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তবে জবাবদিহিতা প্রয়োজন আছে। গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবলিটি অ্যাক্ট সহ প্রযোজ্য সব কর্তৃপক্ষের আওতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাই আমরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, সম্প্রতি পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে চলে গিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার একটি অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য এশিয়ার এ দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।
সরকারি চাকরিতে একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের জন্য উচ্চ মাত্রায় কোটা সংরক্ষিত রাখার বিরুদ্ধে গত মাসে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেই প্রতিবাদ ও সহিংসতা গ্রাস করে বাংলাদেশকে। এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর আগে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের জন্য নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তবে এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে জানিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভে কমপক্ষে ৩০০ মানুষকে হত্যার পর ক্ষমতা ছাড়েন শেখ হাসিনা। নিহতদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে ভ্যান হোলেন ও অন্য ৫ জন ডেমোক্রেট দলীয় কংগ্রেসম্যান চিঠি লিখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন ও অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেনকে। তবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়নি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলাদাভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেছেন, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়াকে স্বাগত জানাই আমি। সবাইকে শান্ত থাকার এবং শান্তি বজায় রাখার যে আহ্বান তিনি (ড. ইউনূস) রেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করে।
প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। তবে তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শেখ হাসিনার বিদায়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা তাদের দাবি আরও প্রসারিত করেছে। তারা বলেছে, শেখ হাসিনার সময়ে যেসব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের অনেককে বিদায় নিতে হবে। ১৫ বছর শাসনের পর বাংলাদেশ ছেড়ে নয়াদিল্লি চলে গেছেন শেখ হাসিনা। তার পতনে মানুষ উল্লাস করেছে। সহিংসতাও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে হামলা হয়েছে। তার পিতার মূর্তি ভাঙা হয়েছে।