দেশ বিদেশ
সহিংসতা বন্ধ এবং সংখ্যালঘু সমপ্রদায়সহ আক্রান্তদের রক্ষা করা ও তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান সুজন’র
স্টাফ রিপোর্টার
৭ আগস্ট ২০২৪, বুধবারসহিংসতা, লুটপাট বা ধ্বংসযজ্ঞ না করা, নিজের হাতে আইন তুলে না নেয়া এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সমপ্রদায়সহ দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্তদের রক্ষা করা ও তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক। একইসঙ্গে প্রাণহানিসহ রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত সমপদ ধ্বংসের যে কোনো উদ্যোগ রুখে দাঁড়ানো ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। গতকাল সুজন কেন্দ্রীয় সচিবালয়, মোহাম্মদপুর, ঢাকায়, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুজন-এর আহ্বান’- শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সমপাদক জুবাইরুল হক নাহিদ প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন- সুজন’র কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সোমবার আমাদের একটি অভূতপূর্ব, অভাবনীয় ও অকল্পনীয় বিজয় অর্জিত হয়েছে। অনেকের মতে এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এ প্রেক্ষিতে মানুষের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা স্বাভাবিক। কারণ বিগত ১৫ বছর আমরা অনেকটা কারাগারের মধ্যে ছিলাম। এ সময় আমরা আমাদের বাক-স্বাধীনতা ও অন্যান্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম। আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে আমরা এই বিজয় অর্জন করেছি। আমরা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমাদের তরুণরা হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য উত্তরসূরি। যারা প্রাণ বিজর্সন দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। তারা আমাদের জাতীয় বীর। তিনি বলেন, এই বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের সামনে একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, রাষ্ট্রকে নতুন করে মেরামতের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত ও বাসযোগ্য রাষ্ট্র নির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি দায়িত্মশীলতার পরিচয় দিতে না পারি, তাহলে এই সম্ভাবনা রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিজয় উদ্যাপনের নামে সোমবার এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। আমরা হামলা ও ভাঙচুরের নিন্দা জানাই। আমরা এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদেরকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে হবে, যাতে কর্তৃত্ববাদী শাসন ফিরে না আসে এবং একটি গণতান্ত্রিক ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। ড. শাহদীন মালিক বলেন, যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ কারও কাম্য নয়। আজকে ছাত্ররা রাস্তা পরিষ্কার করছেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। অনেকে লুট করা মাল ফেরত দিচ্ছেন। তাই আমি আশাবাদী হতে চাই। অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ক্ষমতার একটি বৈশিষ্ট্য হলো- কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা। সেজন্য নজরদারিত্বের কাঠামো ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স’- প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ব্যক্তিগত শাসনের পরিবর্তে জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে হবে। ব্যক্তি হাসিনার শাসনের হয়তো অবসান হয়েছে, কিন্তু কর্তৃত্ববাদী শাসন যাতে আর ফিরে না আসে, সেজন্য সরকারকে প্রতিনিয়ত পাহারা দিতে হবে, নজরদারিত্বের আওতায় আনতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ই আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়েছে। এজন্য আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ জনগণকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, সংবাদ সম্মেলন শেষে ‘ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিজয় উদ্যাপন ও শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার’ আহ্বানে বিকাল ৪টায় আসাদ গেট সংলগ্ন মিরপুর রোডের পাশে সুজন’র উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।