ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

যে বক্তব্যের জেরে পালাতে হলো শেখ হাসিনাকে

স্টাফ রিপোর্টার
৬ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

কোটা সংস্কার নিয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসেই শুরু হয় আন্দোলন। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন। তবে মধ্য জুলাইয়ে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। আন্দোলন দমাতে শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নামানো হয় পুলিশ বিজিবি ও সেনাবাহিনী। চারশ’র বেশি মানুষকে বাহিনীগুলো নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৪ই জুলাই শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে মর্মাহত ও অপমাণিত বোধ করায় স্লোগানে স্লোগানে প্রতিক্রিয়া দেখান শিক্ষার্থীরা। এদিন রাত ১০টার পর প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ভেতরে জড়ো হয়ে স্লোগান আর বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তারা। রাত ১১টার পর থেকে ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে এসে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে। কোটার বিরোধিতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতায় তারা টিএসসি ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। মাঝেমধ্যেই স্লোগানে উচ্চকিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রীরাও বিভিন্ন হল থেকে বেরিয়ে যোগ দেন মধ্যরাতের এ বিক্ষোভে। 

শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়েও অবস্থান নেন। ঘণ্টা দেড়েক অবস্থান করে রাত ১টার পর ফিরে যেতে দেখা যায় তাদের। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি নও, আমি নই, রাজাকার, রাজাকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। তাদের ক্ষোভ কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ঘিরে। তবে পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্যের জবাব দেবে ছাত্রলীগ’। সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ১৬ই জুলাই সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়। সেদিন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিতে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। ১৭ই জুলাই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে। 

পরের দিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা, রামপুরা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। পরের তিন চার দিন ধরে চলে সংঘর্ষ। সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১৫০ জন হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৩শ’র কাছাকাছি। কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। সরকার পতনের দাবিও সামনে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় আলোচনার জন্য ডাকলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। শনিবার থেকে পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেন। জনসমুদ্রে পরিণত হয় এ বিক্ষোভ সমাবেশ। এদিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের কর্মসূচিতে রোববার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

 ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে মঙ্গলবারের পরিবর্তে সোমবার পালনের ঘোষণা দেয় তারা। এতে সারা দেশ থেকে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়। এসব ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরের জন্য কার্যকর হবে বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে কারফিউ মানেনি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। বেরিয়ে আসেন রাস্তায়। এরপর গতকাল উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবেশ করেন হাজারো ছাত্রজনতা।

পাঠকের মতামত

biplob, zillar, harun, papiya, kader koi?

mustak
৬ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

প্রশ্নকারির নামটা বলার প্রয়োজন।

arafien
৬ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ৪:০৩ অপরাহ্ন

হেফাজত ইসলাম ও যত গুম খুন হয়েছে যতো পুলিশ অফিসার জড়িত ছিল। সবাই বুঝিয়ে শাস্তি মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য এরা মশা মাছি না।

Abdul
৬ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ২:৩৩ অপরাহ্ন

প্রশ্নকারির নামটা বলার প্রয়োজন।

আবদুল নাইম
৬ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:০৬ পূর্বাহ্ন

She thinks Bangladesh is her family property.

nurul choudhury
৬ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ২:১৬ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status