ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

আল জাজিরার রিপোর্ট

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে করুণ দৃশ্য

মানবজমিন ডেস্ক
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

জীবাণুমুক্ত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভেতরে এক করুণ দৃশ্য। তার ভেতরে কয়েক ডজন যুবকের মুখে গভীর হতাশা ও অনিশ্চয়তা। তারা নীরব বসে আছেন। চোখের ক্ষত ঢাকতে সানগ্লাস পরেছেন কেউ কেউ। অন্যরা তাদের একচোখে বা দুই  চোখেই পরেছেন ব্যান্ডেজ। তাদের মাঝে একটিই প্রশ্ন তারা কি আর কখনো এই সুন্দর পৃথিবী দেখতে পাবেন? এসব মানুষ ছররা গুলির শিকার। তারা গুলি থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছে তারই শিকার তারা। এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে মাদারীপুরের ২৪ বছর বয়সী একজন সেলসপারসন মোহাম্মদ অনিক। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের একজন ডিউটি ডাক্তার বলছেন, অনিকের দৃষ্টিশক্তি ফেরার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগেরও কম। তার দুটি চোখেই অনেক ক্ষত। আমরা আমাদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করছি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। 
গত সপ্তাহের সোমবার কাজ থেকে বাসায় ফিরছিলেন অনিক। এ সময় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান রাস্তায়। কী ঘটছে তা বুঝে ওঠার আগেই ছররা গুলি এসে তার মুখমণ্ডলে লাগে। তিনি মাটিতে পড়ে যান। অচেতন হয়ে পড়েন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আনা প্রায় ৫০০ রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।

হাসপাতালের রেকর্ড বলছে এর মধ্যে কমপক্ষে ২৭৮ জনের শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ক্ষত হয়েছে। মোটরসাইকেল ওয়ার্কশপে কাজ করে ১০ বছর বয়সী মোহাম্মদ শামীম। গত শুক্রবার মিরপুরে সংঘর্ষ চলাকালে তার দুই চোখেই ছররা গুলি বিদ্ধ হয়। সে কোনোদিনই পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শামীমের পিতা মোহাম্মদ ইদ্রিস সন্তানের এই পরিণতির জন্য কাঁদছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক গোলাম মোস্তাফা নিশ্চিত করেন যে, এসব মানুষ আহত হয়েছেন বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষে শটগানে ছররা গুলি ব্যবহার করার কারণে। এসব গুলি চোখে প্রবেশ করে আটকে আছে কেন্দ্রীয় অঞ্চল রেটিনায় অথবা শক্তির ফলে তা বেরিয়ে গেছে। এসব কারণে আংশিক অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে। 
ধাতব ছররা গুলি শটগান, আইন প্রয়োগকারীদের ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, এটা ব্যবহার যথার্থ নয়। তা প্রয়োজনীয়তা ও আনুপাতিকের নীতিকে লঙ্ঘন করে। বেশ কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক অনেক ছবি ও ফুটেজ যাচাই করে বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ১২ গজ পাম্প-অ্যাকশন শটগান ব্যবহার করেছে। তাতে এসব ধাতব ছররা গুলির কার্ট্রিজ থাকে।

এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেক্সট মেসেজে যোগাযোগের চেষ্টা করে আল জাজিরা। কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি আল জাজিরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ আল জাজিরাকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রাণঘাতী অস্ত্র পুলিশ বা আধা সামরিক বাহিনী ব্যবহার করেছে কিনা তা তিনি চেক করে দেখবেন। কিস্তু যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে বিক্ষোভ চলাকালে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। একই রকম উদ্বেগ জানিয়েছে আরেক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের ওপর সরাসরি গুলি, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট এবং শটগান থেকে ছররা গুলি ছোড়া হয়েছে। চোখে আহত হয়ে যারা বেঁচে আছেন তারা ও তাদের পরিবার দাবি করেছে, বৈষম্যমূলকভাবে শক্তি প্রয়োগ করেছে পুলিশ। কোনো বিরতি না দিয়ে গুলি করেছে। দক্ষিণের বরিশালে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন রকিবুল আহসান। তিনি বিএম কলেজে পরিসংখ্যানে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গত মঙ্গলবার তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে রাস্তায় অবস্থান নিলে তার দুই চোখেই গুলি করা হয়েছে। তার চোখ পুরোপুরি ভালো হবে কিনা তা নিশ্চিত নন ডাক্তাররা। রকিবুল আহসান বলেন, আমরা একটি আইনগত বিষয়ে প্রতিবাদ করছিলাম।

এর জন্য আমাদের গুলি করা হলো। এখানে কোনো ন্যায়বিচার নেই। সেলসম্যান অনিকের সঙ্গে হাসপাতালের একই ওয়ার্ডে আছেন মাদারীপুরের সুমন মিয়া। তিনি একজন রাজমিস্ত্রি। তার ডানচোখে গুলি বিদ্ধ হয়েছে। আহসান বা অনিকের মতো তিনি সরকার বিরোধী প্রতিবাদে জড়িত নন। তিনি কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। অপারেশন সত্ত্বেও চিকিৎসকরা তার চোখটি বাঁচাতে পারেননি। তার ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। তার বোন লিপি আকতার বলেন, কোনো প্রতিবাদে যুক্ত ছিল না আমার ভাই। তাকে কেন গুলি করা হলো? এর জন্য কাকে দায়ী করা হবে?

 

 

পাঠকের মতামত

কমেন্টকারি mohsin দের মত দালালদের কে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। এই দালাল mohsin বিগত দিনে কমেন্টের মাধ্যমে অনেক দালালি করেছে।

রহমান
৮ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২:২৬ অপরাহ্ন

জনাব মোহসিন সাহেব আপনি কি টেলিভিশন দেখেন? আল জাজিরা টিভি চ্যানেল ওপেন করেন কোনোদিন? কোনোদিন কি আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখেছেন? এটা করে থাকলে আপনার এই প্রশ্ন আসতো না। আল জাজিরা গাজা যুদ্ধ শুরু থেকেই এ পর্যন্ত শুধুমাত্র গাজা, ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট করছে। অন্য আন্তর্জাতিক খবর কমিয়ে দিয়েছে। একটানা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট করছে। এখনই ঢুকুন ওয়েবসাইটে বা টিভি চ্যানেলে! আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন! আসলে আঁতে ঘা লাগলে মানুষ এভাবেই বলে

তুমি আমি
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

মানুষ মানুষের জন্য। স্বদেশের উপকারে নাই যার মন, কে বলে মানুষ তারে পশু সেইজন। প্রবাদগুলির পক্ষে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ভূমিকা জাতি অবশ্যই স্মরণ করবে। মহান রব্বুল আলামীনের নিকট আপনাদের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

belal
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

সরকার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, উভয়ই যার যার সীমা লংঘন করেছে। যার ফলাফল আমরা সাধারণ জনগণ ভোগ করছি ।

Md Asaddul Islam
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

Mohsin - দিনের অধিকাংশ সময় আল জাজিরা ফিলিস্তিনের উপর রিপোট করে । ভাল করে চোখ কান খোলা রেখে দেখতে হবে !

k m b hossain
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

ফিলিস্তিনের উপর আল জাজিরার কোন রিপোর্ট দেখা যায় না কেন?

Mohsin
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

Please Save our Students!Please Save our College,Varsities!Please Save the Future of Bangladesh!

Dr.Abdul Momin
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:১০ পূর্বাহ্ন

বিচারহীনতার সংস্কৃতি জেঁকে বসলে এমনই হয় ! এসব স্পষ্ট মানবাধিকার লংঘন।

মোঃ মাহফুজুর রহমান
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:০৩ পূর্বাহ্ন

আল্লাহ তে বিশ্বাস কর । জুলুম করি ও না । নিজের বিবেক প্রয়োগ কর।

Kazi
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:৫৩ পূর্বাহ্ন

আল্লাহ তে বিশ্বাস কর । জুলুম করি ও না । নিজের বিবেক প্রয়োগ কর।

Kazi
৩০ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:৫৩ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status