দেশ বিদেশ
রোদ-বৃষ্টিতেও মাথায় বোঝা নিয়ে ছোটেন তারা
হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) থেকে
১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার
ভোলার লালমোহন উপজেলার ৪০ বছর বয়সী যুবক মো. লিটন। তিনি উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহেষখালী এলাকার দর্জি বাড়ির বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন কুলি। পরিবারে অভাব-অনটন থাকায় ২০ বছর বয়স থেকেই জড়িয়ে পড়েন এ পেশায়। সেই থেকে চলছে তার এ কুলির কাজ। রোদ আর বৃষ্টি উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে বছরের পর বছর ধরে করে আসছেন এ কাজ। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুলি লিটন কখনো মাথায় ৫০ কেজি আবার কখনো ৮০ কেজি ওজনের বস্তা নিয়ে পৌঁছে দেন পৌর শহরের বিভিন্ন দোকানপাটে। এমন দৃশ্যে মনে হবে মাথায় করে যেন সংসারের বোঝা টানছেন তিনি।
লিটন জানান, নিম্নবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। তাই পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। বাধ্য হয়ে খুব ছোটবেলা থেকেই কুলির কাজ শুরু করি। এই কাজ করতে গিয়ে ঘামে পুরো শরীর ভিজে যায়। আবার রোদে সেই ঘাম শুকায়। এত কষ্ট করে এই কাজের বিনিময়ে কোনো দিন তিনশত, আবার কোনো দিন ছয়শত টাকা উপার্জন করি। তবুও এ দিয়েই টানাপড়েনে চলে সংসার। সংসারে স্ত্রীসহ এক মেয়ে এবং তিন ছেলে রয়েছে। প্রতিদিন যে টাকা উপার্জন করি তা দিয়ে বর্তমান সময়ে বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশি থাকায় আমাদের তিনবেলা ঠিকমতো খেতেই অনেক কষ্ট হয়।
তিনি আরও জানান, অনেক সময় স্ত্রী-সন্তানরা বায়না ধরে গরুর মাংস নেয়ার। তবে সীমিত আয়ে তা আর হয়ে ওঠে না। তাই বাধ্য হয়ে বয়লার মুরগি নেই। উপার্জনের টাকায় মাছ বলতে পাঙাশ, তেলাপিয়া আর ছোট ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছই খেতে পারি। বেশির ভাগ সময় ডাল, আলুর ভর্তা এবং শাক-সবজি দিয়েই তিনবেলা খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করছি। এ ছাড়া আমার হার্টেও সমস্যা। ডাক্তার বলেছে নিয়মিত ওষুধ খেতে। তবে আয়ের সঙ্গে ব্যয় না মেলায় নিয়মিত ওষুধ খেতে পারি না। তবে যখন বেশি সমস্যা দেখা দেয় তখন ধারদেনা করে ওষুধ কিনে খাই। এই অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের চাল ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতির চেয়েও আরেকটু ভালো থাকতে পারতাম।
কেবল লিটনই নয়, তার মতো ভোলার লালমোহন পৌর শহরে কুলির কাজ করেন শতাধিক মানুষ। যারা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লঞ্চে করে ঘাটে আসা বিভিন্ন প্রকার মালামাল পৌর শহরের বিভিন্ন দোকানে পৌঁছে দেন। দোকানে প্রতি বস্তা মালামাল পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে ৭ থেকে ৮ টাকা করে পান এসব কুলিরা। এমনই আরেক কুলি মো. জয়নাল। তার বয়স প্রায় ৫৫। তিনি লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পেশকার হাওলা এলাকার সামছুল হক শেউলি বাড়ির বাসিন্দা। গত ২৫ বছর ধরে কুলির কাজ করছেন জয়নাল। স্ত্রীসহ তার তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। সন্তানদের মধ্যে এক মেয়ে এবং এক ছেলে পড়ালেখা করেন।
জয়নাল বলেন, এখন বয়স হয়েছে। তাই তেমন কাজ করতে পারছি না। শরীর সুস্থ থাকলে কাজ করি আর না হয় বাড়িতেই থাকি। যেদিন কাজ করি সেদিন পাঁচশত থেকে ছয়শত টাকার মতো উপার্জন হয়। এই আয় দিয়েই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাই। তবে আমাদের মতো এসব নিম্নআয়ের মানুষদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে অনেক ভালো হতো। তাহলে আমরা আরেকটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম। এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওইসব কুলিরা যদি আমাদের কাছে আবেদন করেন তাহলে তাদেরকে ভিজিএফ চালের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আর্থিক সহযোগিতার সুযোগ আসলে তাদের তাও প্রদান করা হবে।