দেশ বিদেশ
ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে, বিড়ম্বনা ফুলবাড়ীয়া-সদরঘাট রাস্তা
স্টাফ রিপোর্টার
১৫ জুন ২০২৪, শনিবারআর মাত্র দু’দিন পার হলেই পবিত্র ঈদুল আজহা। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের ঈদের ছুটি। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। সড়ক ও রেলপথের মতো রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। তবে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে গুলিস্তান ফুলবাড়ীয়া টু সদরঘাটের ১০ মিনিটের রাস্তায়। এই রাস্তাটুকু পার হতে সময় লাগছে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। রাত ১০ টার আগে ট্রাক, ট্রান্সপোর্ট রাস্তায় বের করা নিষেধ থাকলেও তারা এ নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দখল করে ট্রান্সপোর্টের মালামাল লোড করা হয়।
লঞ্চমালিক সমিতির পরিচালক গাজী সালাউদ্দিন বাবু বলেন, নগরবাসী যাতে গ্রামে গিয়ে নির্বিঘ্ন ঈদ করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত লঞ্চ রাখা হয়েছে। যেসব রুটে যাত্রী বেশি থাকবে সেসব রুটে প্রয়োজন অনুসারে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হবে। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, নদীপথের বিভিন্ন রুটে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার পর থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১০৬টি লঞ্চ ঘাট ছেড়েছে এবং ৯৩টি লঞ্চ ঘাটে ভিড়েছে। ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় এবার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মোট ১৮০টি লঞ্চ ছাড়বে। এসব নৌপরিবহনের মধ্যে ঢাকা থেকে ছাড়বে ৯০টি, বিভিন্ন স্থান থেকে ৯০টি ঢাকায় আসবে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, পদ্মা সেতু হওয়ার আগের সময়ের মতো উপচেপড়া ভিড় নেই। লঞ্চগুলোতে ডেক ও ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী না থাকায় অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েই ঢাকা ছাড়ছেন যাত্রীরা। টার্মিনালের পন্টুনে বাঁধা চাঁদপুর-ইলিশাগামী সারি সারি লঞ্চ। লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই। লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার থেকে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর প্রধান নদী-বন্দর সদরঘাট টার্মিনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করছেন।
ঈদ যাত্রা সহজ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক জানান, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা হকারমুক্ত রাখতে, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধ করা, যাত্রী হয়রানি বন্ধ করার মাধ্যমে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে, আইডল/অননুমোদিত বার্দিং বন্ধে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সময় অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর বিভিন্ন ধারায় এমভি মানিক-৯ (রেলিং না থাকায়) দুই হাজার টাকা, বাগেরহাট-২ (অবৈধ বার্দিং) পাঁচ হাজার টাকা, রাজারহাট-বি (রেলিং না থাকায়) তিন হাজার টাকা ও রাজদূত প্রাইম (রেলিং না থাকায়) তিন হাজার টাকাসহ মোট ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ঢাকা-ভোলা রুটের এমভি গ্রীনলাইন-২ লঞ্চের স্টাফ জানান, ঈদ উপলক্ষে তাদের যাত্রী বেশ বেড়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টায় ভোলার উদ্দেশ্যে এমভি গ্রীনলাইন-১ ও ২ পূর্ণসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়েছে। গ্রীনলাইন-১ এর যাত্রী রহিম বলেন, অনলাইনে অগ্রিম টিকেট কেটে রেখেছিলাম। এখানে এসে যেমন ভিড় প্রত্যাশা করেছিলাম সেটা নেই। ঢাকা টু হাতিয়া রুটের এমভি ফারহান-১০ এর টিকিট মাস্টার জানান, তাদের লঞ্চটির সব কেবিন অগ্রিম বুক করা।
যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। স্থল ও নৌ উভয়পথেই পুলিশ, নৌপুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। পাশাপাশি ঘাট এলাকায় র?্যাব’র একটি টিমও নিয়োজিত রয়েছে।
টার্মিনালে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্টাফদের প্রশিক্ষণ, লঞ্চে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা সচেষ্ট আছি। আমাদের টিম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদের সময় আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়াতে লঞ্চ চালাই। অন্য সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিয়ে থাকি। যার কারণে অনেকে মনে করে ঈদের সময় ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে।