দেশ বিদেশ
চট্টগ্রামে এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি কোরবানির পশু বিকিকিনি
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১২ জুন ২০২৪, বুধবার
আর মাত্র ৫ দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। এই সময়ে জমজমাট থাকার কথা কোরবানির পশুর বাজার। তবে এখনো অনেকটা ক্রেতাশূন্য চট্টগ্রাম নগরের পশুর বাজার। গত শনিবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাট বসা শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত সেভাবে চলছে না বিকিকিনি। বাজারে বিপুলসংখ্যক কোরবানির পশু আসলেও এখনো বিক্রি হচ্ছে হাতেগোনা। ষোলশহর বিবিরহাট গরুর বাজার। চট্টগ্রাম নগরের ৩টা স্থায়ী গরুর হাটের মধ্যে অন্যতম এই হাটে গত সোমবার বিকালে সরজমিন ঘুরে দেখা মেলেনি তেমন ক্রেতার। যদিও বাজার ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। এরমধ্যে ছিল অনেক ইউটিউবার, টিকটকার। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে বিপুলসংখ্যক পশু। এদের সিংহভাগই গরু। এরমধ্যে ৪০ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকানো হয়েছে একেকটা গরুর দাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা বেপারী মোহাম্মদ করিম মানবজমিনকে বলেন, গত শনিবার থেকে এখানে হাট বসা শুরু হয়েছে। আমি লোকজন নিয়ে শুক্রবার সকালে এসেছিলাম। এরমধ্যে ৪২টা গরুর মধ্যে মাত্র ১টি বিক্রি হয়েছে। অনেকে আসেন, আবার দরদাম করে চলে যান। আবার অনেকে এসে শুধু ভিডিও করেন কথা বলেন। গত শনিবার থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু এসে ভরে গেছে কোরবানির হাট। এখনো আসছে। বিক্রেতারা অপেক্ষায় রয়েছে ক্রেতার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ১০টি পশুর হাট বসছে নগরে। এর বাইরে জেলার ১৫টি উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে বসেছে আরও দুই শতাধিক হাট। হাটগুলোতে আসা বেপারী ও ইজারাদাররা জানান, এবার গরুর দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেশি। এখন পর্যন্ত হাটে আসা গরুর মধ্যে দেশি জাতের গরুর সংখ্যা বেশি। নগরীর নূর নগর হাউজিং এস্টেট বাজারে কুষ্টিয়া থেকে বেশ কয়েকটি গরু নিয়ে আসা মোহাম্মাদ সোলাইমান বলেন, প্রথম দফায় আমি ১৪টি দেশি ষাঁড় এনেছি। খামারে আরও বেশ কিছু গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে সবগুলো নিয়ে আসা হবে। তবে এখনো মাত্র ১টি ষাঁড় বিক্রি হয়েছে। আশাকরি, বুধবার থেকে বাজার গরম হবে।
এই হাটের ইজারাদার সাইফুল আলম বলেন, বগুড়া, কুষ্টিয়া, লালমনির হাট, চাঁপাই, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা গরু নিয়ে আসছেন। অনেক গরু এখনো পথে রয়েছে। আর কয়েকদিন পর বাজার পুরোপুরি জমে উঠবে বলে আশা করছি। আর হাটের বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে, সবগুলো শর্ত প্রতিপালনের বিষয়ে আমরা সজাগ। তবে অবৈধ ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বাজার ইজারা নিই আর ওরা যেখানে-সেখানে ছোট ছোট বাজার বসিয়ে পুরো নগরীতে গরুর হাটে পরিণত করে। এ ধরনের হাট যাতে কেউ বসাতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। যদিও অবৈধ হাটের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এবার কোনো অবৈধ হাট নগরে বসতে পারবে না। অবৈধ হাট প্রতিরোধে আমাদের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। ইজারা দেয়ার সময় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য আমাদের কিছু শর্ত ছিল, সবগুলো হাটেই সেসব শর্ত নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে সবমিলিয়ে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৯ হাজার ৬৩৮টি পশুর চাহিদা রয়েছে সন্দ্বীপে। সবচেয়ে কম ১৩ হাজার ৬৯৮টি পশুর চাহিদা রয়েছে নগরীর কোতোয়ালি থানা এলাকায়। এবার চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত করা হয়েছে সবমিলিয়ে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫১টি পশু। সেই হিসাবে ৩৩ হাজার ৪০৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে এবার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫১ হাজার ৩৬৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে ডবলমুরিং এলাকায়। আর চাহিদার চেয়ে সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ১৯১টি পশু উদ্বৃত্ত আছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। তবে সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার পশুর ঘাটতি থাকলেও বন্দরনগরীর হাটে আশপাশের জেলা ও উত্তরবঙ্গ থেকে খামারিরা চট্টগ্রামে পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসায় সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।