দেশ বিদেশ
জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে শেষ মুহূর্তে টাকার খেলা
মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট (সিলেট) থেকে
১৮ মে ২০২৪, শনিবার
টাকা উড়ছে সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের ভোটের মাঠে। প্রার্থীরা ভোটার টানতে বিলি করছেন টাকাও। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বেড়ে চলেছে টাকার খেলা। আর এবারের নির্বাচনে মুখোমুখি হয়েছেন টাকাওয়ালা প্রার্থীরাও। জৈন্তাপুরের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ নিজেও জানিয়েছেন, টাকা দিয়ে পেরে উঠতে পারবেন না বলে তিনি ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এদিকে- সীমান্ত চোরাকারবারিসহ একাধিক সিন্ডিকেটের সদস্যরাও পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এ কারণে এ দুটি উপজেলায় সংঘাত, সংঘর্ষের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিন্দ্বন্দিতা করছেন। পূর্ব আলীরগাও ইউনিয়নের নাগরিক জমির উদ্দিন। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে তিনি শাহ আলম স্বপনকে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিবেন। তোয়াকুল বাজারে কথা হয় সামসুল নামের এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আমি ফারুক আহমদকে মোটরসাইকেলে ভোট দিবো। রাধানগর আলমনগর গ্রামের শহীদ মিয়া বলেন- আমি ফারুক আহমদকে মোটরসাইকেলে ভোট দিবো। পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পান্তুমাই গ্রামের ফারুক আহমদ, ডৌবাড়ি ইউনিয়নের নগরডেঙ্গি গ্রামের আলী আহমদ, ফতেহপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজারের বাসিন্দা ইমরান আহমদ বলেন, নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় মোটরসাইকেল থেকে ঘোড়া প্রতীকের নাম ডাক বেশি।
মিছিল মিটিং পথসভায় স্বপন ও তার ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ও সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের অনেকে প্রকাশ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুকের মোটরসাইকেলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বহিষ্কার হতে পারেন এমন শঙ্কায় প্রকাশ্যে মাঠে না থাকলেও বিএনপি’র সিংহভাগ নেতাকর্মীরা আড়ালে থেকে শাহ আলম স্বপনের ঘোড়ার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটাররা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। ভোট কাড়তে তারা বিলি করছেন টাকাও। পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমদ ও হোসেন আহমদ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী (আনারস), আমেরিকা প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল গাফফার চৌধুরী খসরু (কাপ-পিরিচ), ইসমাইল আলী আশিক (দোয়াত কলম) শেষ ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।
ভোটারদের মতে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দোয়াত-কলম প্রতীকের ইসমাইল আলী আশিকের নাম তেমন আলোচিত না হলেও ফ্রন্টলাইনে রয়েছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী। তার সঙ্গে আলোচনায় আছেন কাপপিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আমেরিকা প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল গাফফার চৌধুরী খসরু। আলুবাগানের রিসোর্ট ব্যবসায়ী রাজু আহমদ, আসামপাড়া মানিক চৌধুরী হরিপুরের বাসিন্দা শামসুদ্দিন বলেন, এবারের নির্বাচনে একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী। কারণ, তিনি জনগণের জন্য মাঠে ঘাঠে সবসময় তাকে পাওয়া যায়। তাই আমরা আসন্ন নির্বাচনে তাকে আনারস প্রতীকে ভোট দিবো। ছাতারখাই দরবস্ত এলাকার আব্দুস ছালাম বলেন, এবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আমি আবদুল গাফফার চৌধুরী খসরু ভাইকে কাপপিরিচ প্রতীকে ভোট দিবো। বিপদে-আপদে আমরা তাকে পাশে পাই। এ উপজেলায় এবার দরবস্তের আধিপত্য ভেঙে দিতে লিয়াকত মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দু’প্রার্থী জয় ছিনিয়ে নিতে টাকা উড়াচ্ছেন ভোটের মাঠে- এমন অভিযোগ মিলেছে ভোটারদের কাছ থেকেও।