নির্বাচিত কলাম
আন্তর্জাতিক
ইসরাইল আসলে কী চায়?
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবারজাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁকে পাল্টা আক্রমণ করে কথা বলছে ইসরাইল। তবে তারা ইসরাইলকে পরিষ্কার সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছে। বলছে, দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া পরিষ্কারভাবে এবং বার বার প্রত্যাখ্যান করছে ইসরাইল। তাদের এই অবস্থান গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে গাজা যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে। এই যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিন থেকে গাজার সব রকম মানবিক সাপোর্ট পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শাসকগোষ্ঠী।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক অফিস গাজাকে একটি এপিডেমেকের একটি ‘টেক্সটবুক ফর্মুলা’ বলে অভিহিত করেছে।
বলা হয়েছে সেখানে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। খান ইউনুসে অবস্থিত নাসের হাসপাতালে সব রকম কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে।
সারাবিশ্ব যখন এলোমেলো, তখন কি ইস্যুতে লিখবো! বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ-চীন-ভারত, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ, চীন-যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইয়েমেন যুদ্ধ, সিরিয়া যুদ্ধ নাকি রাশিয়ায় বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যু! এর মধ্যে গত ৭ই অক্টোবর থেকে সবচেয়ে বড় যে ইস্যু তা হলো গাজায় ইসরাইলের ‘গণহত্যা’। এ ইস্যুটিই এখন এই মুহূর্তে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি সমীচীন মনে হচ্ছে। কারণ, সেখানে বিনা বিচারে, বিনা অপরাধে, অযথা নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে হত্যা করছে ইসরাইল।
এ অবস্থায় ইসরাইলের আন্তর্জাতিক যে অবস্থান তার কফিনে পেরেক মারা শুরু করেছে আইসিজের শুনানি। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে সেখানে বসতি নির্মাণ এবং তা সম্প্রসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করছে কমপক্ষে ৫০টি দেশ। গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালিয়েছে কিনা তাও একই সঙ্গে বিবেচনাধীন আছে আইসিজেতে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে এই আদালতে গণহত্যার অভিযোগ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের প্রতিনিধি ইসরাইলের বেআইনি কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে একে চরম বর্ণবাদ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদেরকে ‘ডিজপোজেবল অবজেক্ট’ অর্থাৎ যা পরিবর্তনশীল এমন হিসেবে ব্যবহার করার অমানবিকতা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে সৌদি আরব। নিজের বেআইনি আচরণের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার কথা তুলতে পারে না ইসরাইল। এ কথা বলেছে মিশর। বর্ণবাদী বৈষম্য সৃষ্টির জন্য ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে বেলিজে। তারা নিন্দা জানিয়েছে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, খেয়ালখুশিমতো হত্যা এবং গণহারে জেলে ঢোকানোর বিরুদ্ধে। আইসিজের বিচারে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরাইল। এটা বিস্ময়ের কোনো বিষয় নয়। তবে তাদের পক্ষে দৃশ্যত কথা বলতে ফিজিকে মাঠে নামিয়েছে। এ কারণে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ফিজির নাগরিকদের মধ্যে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। তিনি নাৎসিদের হলোকাস্টের সঙ্গে গাজায় ইসরাইলের নৃশংসতাকে তুলনা করেছেন। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করছে।
এ অবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি সারা সভ্য বিশ্বে ইসরাইলের সমর্থন কমে যাচ্ছে। ইসরাইল পরিস্থিতি নিয়ে নিন্দা জানানো দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে এই ক্ষোভ কুড়াচ্ছে ইসরাইল। এর কারণ, তারা গাজায় ভয়াবহ বৈষম্যমূলকভাবে সামরিক হামলা চালাচ্ছে। সেখানে যে প্রায় ৩০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু। এর পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ মূক হয়ে পড়েছেন। বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। এতিম হয়েছে কতো শিশু তার হিসাব নেই। জীবন হারানোর মতো দুর্দশায় ভুগছে তারা। কারও হাত নেই। কারও পা নেই। কারও বা দুটি পা-ই কেটে ফেলা হয়েছে। খাবারের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে নগ্ন পায়ে, খালে গায়ে শিশু। তার যত্ন কে নেবে! কেউ তো নেই আপন তার। এসব শিশুর ছবিটি একবার আপনার চোখের সামনে কল্পনা করুন তো! কি চোখ ভিজে ওঠে না? বুকের ভেতর থেকে এমনি এমনি কান্না উতলে ওঠে না!
এই যে ধ্বংসযজ্ঞ এতে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক খ্যাতি থাকলো কোথায়? বিশেষ করে যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে ইসরাইলকে কঠোরভাবে সমর্থন করেছে, তারা ভয়াবহতা দেখে বার বার বলেছে, সাধারণ মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধবিরতিতে যেতে হবে। যুবগোষ্ঠী, যুদ্ধবিরোধী জনগণ, যুক্তরাষ্ট্রে আরব সম্প্রদায় এতটাই ক্ষিপ্ত হয়েছে যে, এমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি। বিশেষ করে মিশিগানের কথা বলা যায়। সেখানে যুদ্ধবিরোধী ক্ষোভ এতটাই তীব্র হয়েছে যে, আগামী ৫ই নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে তারা। অর্থাৎ তারা বাইডেনের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রিপাবলিকান শিবিরে চলে যেতে পারে। হয়তো এ কারণেই বাইডেন প্রশাসন গত সপ্তাহে জোর দিয়ে বলেছে, ইসরাইলের বসতি স্থাপন অবৈধ। এর মধ্যদিয়ে তার প্রশাসন ইউটার্ন নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
বৃটেনও বলেছে, ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব অবৈধ। তবে এ বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ বলে তারা অভিহিত করে এবং বলে এর সমাধান হওয়া উচিত আদালতের বাইরে। তবে ইসরাইলকে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র, অর্থ এবং কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাতে আতঙ্কিত বিশ্ববাসী খুব কমই সন্তুষ্ট হবেন। ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণকারী একজন আমেরিকান অধিকারকর্মী তো বাইডেনের কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, তিনি যে অস্ত্র সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছেন ইসরাইলকে, তা দিয়েই নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে নেতানিয়াহু। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ভেটো দিয়েছে। এ নিয়ে সাধারণত নিরাপত্তা পরিষদে চীনের দূত মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। এর মধ্যদিয়ে ইসরাইলকে গণহত্যায় সবুজ সংকেত দেয়া হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। স্পেন ও বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রীরা যৌথভাবে গাজায় বৈষম্যমূলকভাবে সাধারণ মানুষ হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার মধ্যদিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে আয়ারল্যান্ড। ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের ফলে নিজেদের অবস্থান নতুন করে ভাবছে ইসরাইলপন্থি জার্মানি ও বৃটেন। সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন, ইসরাইলের কাছে বন্দি অবস্থায় ফিলিস্তিনি বেশির ভাগ নারী ও যুবতী যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এটা তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁকে পাল্টা আক্রমণ করে কথা বলছে ইসরাইল। তবে তারা ইসরাইলকে পরিষ্কার সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছে। বলছে, দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া পরিষ্কারভাবে এবং বার বার প্রত্যাখ্যান করছে ইসরাইল। তাদের এই অবস্থান গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে গাজা যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে। এই যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিন থেকে গাজার সব রকম মানবিক সাপোর্ট পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শাসকগোষ্ঠী। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক অফিস গাজাকে একটি এপিডেমেকের একটি ‘টেক্সটবুক ফর্মুলা’ বলে অভিহিত করেছে। বলা হয়েছে সেখানে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। খান ইউনুসে অবস্থিত নাসের হাসপাতালে সব রকম কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার বড় সব হাসপাতাল তাদের সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এর বেশির ভাগেই বোমা হামলা চালানো হয়েছে এবং এর ভেতর প্রবেশ করে তছনছ করেছে। জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিউর দেখতে পেয়েছেন ফিলিস্তিনি নারী, শিশু এবং সাধারণ মানুষের ওপর সহিংসতা ও অমানবিকতা স্বাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যদি ফিলিস্তিনি কোনো নারী বা শিশু শরণার্থী হওয়ার চেষ্টা করে বা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তাদেরকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয় বলে জোর দিয়ে তুলে ধরেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক একটি প্যানেল।
এখন প্রশ্ন ইসরাইল আসলে কি চায়? তারা কি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে নাকি গাজাবাসীকে নির্মূল করে চিরদিনের জন্য ওই অঞ্চল দখল করতে চায়?
ইসরাইল আসলে গাজাবাসীকে নির্মূল করে চিরদিনের জন্য ওই অঞ্চল দখল করতে চায়
Answer is easy: they want to dominate middle-east and lead the world under the safe-guard of USA!