ঢাকা, ৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সা ম্প্র তি ক

মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র বাস্তবে নেই

শহীদুল্লাহ ফরায়জী
২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার
mzamin

একটি মুক্তিযুদ্ধের দেশে নির্বাচনবিহীন সংস্কৃতি, বল প্রয়োগের সংস্কৃতি, অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে অসাংবিধানিক কাজে ব্যবহার করার সংস্কৃতি যে- কী ভয়াবহ রূপ লাভ করতে পারে, অমানবিকতা, অনৈতিকতা এবং অপশাসনের ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি সমাজে কী দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে, তা বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম নিদর্শন। কীভাবে জাতীয়তাবোধ, মনন, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতা, নৈতিকতা ও সহনশীলতা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তা কেউ পর্যালোচনাও করছে না। বাংলাদেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবঞ্চিত। এটা হচ্ছে দীর্ঘ অপশাসনের ফসল। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত- কর্মরত থাকা অবস্থায় নির্দলীয় থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু বাংলাদেশে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ একটি দলের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করছে, যা প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যকে এবং রাষ্ট্রকে অস্বীকার করার শামিল

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মহৎ আদর্শ বা দর্শন ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’কে ক্ষমতাসীনরা ঝেটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। ন্যায়ভিত্তিক, নৈতিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পরিবর্তে চরম অগণতান্ত্রিক ও অন্যায়কেই রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে ফেলেছে। প্রজাতন্ত্র হিসেবে আবির্ভাবের পর গত ৫২ বছরে সামরিক এবং কর্তৃত্ববাদী দলীয় শাসনে রাষ্ট্র ক্রমাগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়েছে। নাম সর্বস্ব প্রজাতন্ত্র এখন নগ্ন হয়ে পড়েছে।

শাসকগণ ন্যায়কে পরিত্যাগ করে অন্যায়কে বরণ করেছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণ করে, রাষ্ট্র বা সরকার তাদেরকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ভীত ও শঙ্কিত করে তোলে। নিরস্ত্র জনগণের উপর সশস্ত্র রাষ্ট্রশক্তি বল প্রয়োগ করে ন্যায়কে ধূলিসাৎ করছে আর শাসককে গগণচুম্বী ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রযন্ত্র জনগণের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সরকারের স্বার্থ রক্ষা করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাষ্ট্র যেহেতু ন্যায়পরায়ণ নয়, সেহেতু ব্যক্তির মাঝেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। অন্যায়, ন্যায়ের চেয়ে উত্তম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাষ্ট্র আর নাগরিকের মাঝে পারস্পরিক লেনদেনে ন্যায় অনুপস্থিত হয়ে পড়েছে, সমাজ ভয়ঙ্কর অন্যায্য হয়ে উঠেছে। অন্যায় অনুসন্ধানে বা প্রতিকারে রাষ্ট্র অক্ষম। ফলে রাষ্ট্র দুর্বৃত্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অরাজকতা, দুর্নীতি ও অপশাসনে রাষ্ট্র এবং সমাজ চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অবৈধ শাসন, অন্যায়ের শাসন এবং অন্যায়ের প্রতিপত্তি রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয়তাবাদ বিকাশ বা উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করার আর কোনো দর্শন নেই। ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে রক্তের বিনিময়ে প্রজাতন্ত্র পেয়েছিলাম কিন্তু শাসকদের ক্ষমতা দখলের উদগ্র বাসনায় আবার ঔপনিবেশেই প্রত্যাবর্তন করেছে রাষ্ট্র। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ বাস্তবে আর নেই।

বাংলাদেশ, স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির বৈশ্বিক সূচকে পিছিয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- স্বাধীনতা সূচকে ১৬৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম এবং সমৃদ্ধি সূচকে ৯৯তম। বাংলাদেশ ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবঞ্চিত’ এবং সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভুটান। এর সূচক ৬১, নেপাল ৮৬, শ্রীলঙ্কা ৯৭, ভারত ১০৪ ও পাকিস্তান ১১৩। একটি রক্তের বন্যায় ভেসে যাওয়া রাষ্ট্রের বুক থেকে স্বাধীনতা ক্রমাগতভাবে ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে তারপরও সরকারের বাগাড়ম্বরের শেষ হচ্ছে না। সরকার প্রতিনিয়ত দম্ভ করে বেড়াচ্ছে,, বাংলাদেশ নাকি এগিয়ে যাচ্ছে! ‘৭১ সালে ভোটের মর্যাদা রক্ষার জন্য সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে যে দেশে, সেই দেশে একটি দল গত ১৫ বছর নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংসের তলানীতে নিয়ে গেছে। অথচ দলটি বলে বেড়াচ্ছে- তারা নাকি ক্ষমতায় থাকলে ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়, গণতন্ত্র নাকি জনগণের হাতে তারা ফিরিয়ে দিয়েছে।

আত্ম বিকাশের জন্যই স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যে স্বাধীনতার জন্য অকাতরে এদেশের মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বাধীনতা হরণ করে সরকার কীসের স্বপ্ন দেখায়? ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হচ্ছে? স্বাধীনতাই হচ্ছে জনগণের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু রাষ্ট্রের অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনগণ স্বাধীনতা বঞ্চিত। রক্ত সংগ্রামে আত্মবলীদান করা হয়েছে স্বাধীনতা বঞ্চিত থাকার জন্য নয়।  রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় সম্পদশালী  হচ্ছে আর জনগণকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গুটিকতক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম সংঘটিত হয়নি। সকলের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই মুক্তিসংগ্রাম, দাসত্বের বন্ধন ছিন্ন করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধ। সরকার তার অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে আমাদেরকে আবার দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলেছে। দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তির আস্বাদ লাভ করাই স্বাধীনতা। সরকার প্রতিনিয়ত আমাদের মুক্তির আনন্দকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মাটি করে দিয়েছে।

অগণিত ভাই-বোনের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আবার হরণ হচ্ছে স্বাধীন দেশে। যে আওয়ামী লীগ সত্তরের নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকারের মর্যাদা দেয়নি বলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই আওয়ামী লীগ ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকারকে ছিনতাই করে সংবিধানকে পদদলিত করেছে। জনগণের অধিকার এবং মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে মহা উৎসবে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনা করছে। ‘৭১ সালে ভোটের মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ জনগণ বুকের রক্ত দিয়েছে, এখন সেই আওয়ামী লীগই-  যারা ভোটাধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলন করে তাদেরকে গুলি করে, কারাগারে নিয়ে যায়, রিমান্ডে নির্যাতন করে এবং পরিশেষে ভোটাধিকার চাওয়ার অপরাধে নাশকতার মামলার আসামি করে।

পাকিস্তান অর্জনে মুসলিম লীগের অবদান ছিল অনেক। সেই মুসলিম লীগ মনে করতো বাঙালিরা দেশ শাসনের উপযোগী নয়, দেশ শাসন করবে মুসলিম বা পশ্চিম পাকিস্তানীরা। বাঙালিদের বিরোধিতাকে তারা সহ্য করতো না, ষড়যন্ত্রকারী এবং স্বাধীনতার শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করতো। পাকিস্তানের অবিচার, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছিল। পরিশেষে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েও পাকিস্তান রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখতে পারেনি। তথাকথিত ইসলামি উম্মার কথা বলে পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখতে পারেনি।

তেমনি আওয়ামী লীগের অন্যায়, অবিচার ও নিপীড়নের কারণে মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র হাতছাড়া হয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও আইনের শাসনকে রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করে দিয়ে, জনগণকে অবাঞ্ছিত, অপাঙতেয় ও অপ্রয়োজনীয় করে দিয়ে যে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, তা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নয়। অন্যায়, অবিচার এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের পাপকে রক্ত দিয়ে ধুয়ে মুছে দেয়ার বাংলাদেশ নয়। ভোটাধিকারের লড়াই, অধিকার অর্জনের লড়াই, জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা জড়িত, তাদেরকে পাকিস্তানি শাসকদের মতো এই বাংলাদেশেও ষড়যন্ত্রকারী এবং স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়, হাতকড়া পরিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়।

একটি মুক্তিযুদ্ধের দেশে নির্বাচনবিহীন সংস্কৃতি, বল প্রয়োগের সংস্কৃতি, অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে অসাংবিধানিক কাজে ব্যবহার করার সংস্কৃতি যে- কী ভয়াবহ রূপ লাভ করতে পারে, অমানবিকতা, অনৈতিকতা এবং অপশাসনের ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি সমাজে কী দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে, তা বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম নিদর্শন। কীভাবে জাতীয়তাবোধ, মনন, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতা, নৈতিকতা ও সহনশীলতা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তা কেউ পর্যালোচনাও করছে না।

বাংলাদেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবঞ্চিত। এটা হচ্ছে দীর্ঘ অপশাসনের ফসল। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত- কর্মরত থাকা অবস্থায় নির্দলীয় থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু বাংলাদেশে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ একটি দলের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করছে, যা প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যকে এবং রাষ্ট্রকে অস্বীকার করার শামিল। সরকার গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রকে ঠাঁই দিয়েছে কারচুপিতে, প্রতিযোগিতা বিহীন নির্বাচনে আর নির্বাচন পরে ফলাফল আগে নির্ধারণের অপকৌশলে।

এক মানুষের এক ভোট- এটা  সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। এক মানুষের এক ভোট নয়- সরকারি দলের এক মানুষের বহুভোট, তারা অন্যের ভোট দিয়ে দিতে পারে। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে ইচ্ছা তাকে দেবো’- নির্বাচনী জগতের এই অনুপম অবদান বা অর্জনকে সরকার ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনে কোনো প্রতিযোগিতা নাই, যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। সব প্রতিযোগীর নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’। সাদা টাকা বা কালো টাকার কোনো ফারাক নেই, পার্থক্য নেই। এক নির্বাচনে প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদের উল্লেখ থাকে পরবর্তী নির্বাচনে যদি তা ৫ হাজার গুণ বৃদ্ধি হয়ে যায় তবু রাষ্ট্র থেকে কেউ জিজ্ঞেস করবে না। বরং দলের কাছে এটাকে যোগ্যতা এবং দক্ষতা হিসাবে বিবেচিত হবে। একজন সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে অনুপার্জিত আয়ের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরও রাষ্ট্রের এমন কোনো সংস্থা নেই যারা এই উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত করবে বা নিষ্পত্তি করবে। রাষ্ট্রে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান নির্বাহী বিভাগ। আর সকল বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান সরকারের অভিপ্রায়ের অধীন। শুধু নির্বাহী বিভাগ দিয়ে একটি ভূখণ্ড চলে-  রাষ্ট্র চলে না।   

গণতন্ত্রের ন্যূনতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- নিয়মিত নির্বাচন, প্রাপ্তবয়স্কের সর্বজনীন ভোটাধিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের অধীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।  জনগণের অভিপ্রায় প্রয়োগের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব নয়। বাংলাদেশ এখন আর প্রজাতন্ত্র নয়। প্রজার সম্মতি বা সমর্থনের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হচ্ছে না। একদলীয় রাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকতে পারে না।

দেশ স্বাধীন কিন্তু প্রজা পরাধীন। সরকার থাকবে সংবিধানের অধীন। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান এখন ব্যক্তি বা দলের ইচ্ছাধীন। এখানে আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োগ, আইনের এখতিয়ার যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে না। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় জনগণের অধিকার সীমিত করা বা খর্ব করাকেই সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রাষ্ট্র থেকে ন্যায়কে উচ্ছেদ করে দিলে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা থাকে না। অবিচারের শাসন আর অন্যায়ের প্রতিপত্তি দেখার জন্য অগণিত মানুষ জীবন উৎসর্গ করেনি।

যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকলে রাষ্ট্র নির্ধারণ করা যায় তার অনেক বৈশিষ্ট্যই এখন বাংলাদেশে অনুপস্থিত। আইনের শাসন, সুযোগের সমতা, আইনের দৃষ্টিতে সমতা- এসব রাষ্ট্রীয় দর্শনের প্রতিফলন বাংলাদেশে নেই। আইনের সমতা বা সুযোগের সমতার যে অবিচল সত্তা তাকে প্রয়োগ করা বা অনুধাবন করার সক্ষমতাই সরকারের নেই। স্বাধীনতা না থাকলে যে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণ হতে পারে না- এইটুকু দর্শন গ্রহণ করার নৈতিক উচ্চতাও আওয়ামী লীগের নেই।

দার্শনিক প্লেটো তার রিপাবলিক গ্রন্থে বলেছিলেন- ‘ন্যায়’ একটা সত্তাবান অবিচল অস্তিত্ব। তাকে জানা যায়। তাকে জানার মাধ্যমেই মানুষ ক্রমান্বয়ে মহৎ জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে। আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। আর কিছুদিন থাকলে সকল ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা বঞ্চিত হবে। এখন সারা বিশ্বে স্বাধীনতা বঞ্চিত দেশের মধ্যে প্রথম হচ্ছে আফগানিস্তান (সূচকে ১৬৪)। বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রেই প্রথম হওয়ার বাসনা লালন করে। সুতরাং সরকার অচিরেই হয়তো আফগানিস্তানের জায়গা দখল করে স্বাধীনতা বঞ্চিত এক নম্বর দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্ব ইতিহাসে ১৬৪ নম্বর সূচকে অন্তর্ভুক্ত করবে। রাষ্ট্রকে আবার পরাধীন ও কালিমালিপ্ত করার দায় শাসকদের অবশ্যই বহন করতে হবে। 
সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের ফলশ্রুতিতে অর্জিত রাষ্ট্র আজ বেহাত হয়ে গেছে। সুতরাং সেই রাষ্ট্রকে পুনরুদ্ধার করতে আরেকটি নৈতিক জাগরণ এবং নতুন মুক্তিযুদ্ধ প্রয়োজন, যা জনগণের কাঙ্ক্ষিত প্রজাতন্ত্র বিনির্মাণ করার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করবে।

লেখক: গীতিকবি, সংবিধান বিশ্লেষক।
[email protected]

 

 

পাঠকের মতামত

খুব সুন্দর ভাবে লেখক বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেছেন। এই লিখার কোন কথাই লেখকের মন গড়া কথা না। এইটাই এখন বর্তমান বাংলাদেশ। প্রতিটা দেশ দিনে দিনে উন্নতির দিকে ধাবিত হয়। বর্তমান প্রজন্মের একজন নাগরিক হিসেবে বলতে পারি এই দেশ ভয়াবহ বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।

Ashiq
২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

সঠিক কথা বলেছেন।

md.shamsur rahman
২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:২৬ অপরাহ্ন

এদের কথাবার্তা ইশারা ইংগিতে মনে হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সব ভুল, বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে সব ঠিক।

Mohsin
২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন

100% খাটি ও সত্যি বলছেন

ar
২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ৮:৪১ পূর্বাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status