দেশ বিদেশ
মানবজমিনকে তথ্য দেয়ার অভিযোগে ট্রেজারারকে পদত্যাগে বাধ্য করলো আইআইইউসি
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৩ মে ২০২৪, শুক্রবারগত ২২শে এপ্রিল দৈনিক মানবজমিনে ‘চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যেন গনিমতের মাল’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আয়তনে দেশের বৃহত্তম এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আর্থিক লুটপাট, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে শুরু হয় তোলপাড়। তবে এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত অনিয়মগুলোর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এই প্রতিবেদককে তথ্য সরবরাহের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ২৭শে এপ্রিল প্রফেসর হুমায়ুন কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। গতকাল জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠকে সেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। তার জায়গায় বিভিন্ন অনিয়মে অভিযুক্ত প্রফেসর মাহিউদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর আজ সকালে অনুষ্ঠিতব্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভায় সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। সূত্র মতে, মানবজমিনের প্রতিবেদককে তথ্য দেয়ার জন্য শুরু থেকেই প্রফেসর হুমায়ুন কবিরকে দায়ী করেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আবু রেজা নদভীসহ সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ১৯শে এপ্রিল প্রতিবেদক বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভীর ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেয়ার পরদিনই হুমায়ুন কবিরের ঘনিষ্ঠ দুই শিক্ষককে তাদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। আর ২৪শে এপ্রিল বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) একটা নামমাত্র মিটিং করা হয়।
এদিকে একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেছেন, প্রফেসর মাহিউদ্দীন ও রেজিস্ট্রার আকতারুজ্জামান কায়সারের যৌথ ড্রাফট করা কারণ দর্শাও চিঠিতে ট্রেজারের বিরুদ্ধে খুঁজে খুঁজে ১৮টি অভিযোগ আনা হয়। এতে সময়মতো ভাউচার জমা না দেয়া, হিসাব এডজাস্ট না করাসহ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে। মানবজমিনে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য দায়ী করেও একটা অভিযোগ আনা হয়েছে। মানবজমিনে সমস্ত তথ্য ট্রেজারার সরবরাহ করেছে এবং তা মানবজমিন কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে বলে এই কারণ দর্শানোর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। কারণ দর্শানোর এই চিঠিটি ২৫শে এপ্রিল দু’জন কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারার প্রফেসর হুমায়ুন কবিরের বাসায় পাঠানো হয়। এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কারণ দর্শানোর উত্তর দেয়ার আগেই নদভীর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রফেসর হুমায়ুন কবিরকে তার দায়িত্ব পদত্যাগ করতে চাপ দিতে থাকে। পদত্যাগ না করলে তার পরিবারের ক্ষতি করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন আবু রেজা নদভী ও তার স্ত্রীর এক সময়ের অতি ঘনিষ্ঠ এই অধ্যাপক। একই সঙ্গে তাকে কলা অনুষদের ডিন পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। তার স্থলে প্রফেসর ইয়াসিন শরীফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে জানতে প্রফেসর হুমায়ুন কবিরকে ফোন দিলে মানবজমিনের প্রতিবেদক জানার পর তিনি সংযোগ কেটে দেন। দ্বিতীয় বার ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, আপনারা নিউজ করলেন, মধ্যে পড়ে আমাকে ভিকটিম করা হয়েছে। আমি এই বিষয়ে কথা বলতে পারবো না। শুধু বলবো আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে।
এদিকে এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভীকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার স্ত্রী ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রিজিয়া সুলতানা চৌধুরীর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বিষয়ে রেজিস্ট্রারই কথা বলবেন মিডিয়ার সঙ্গে। আপনি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেন। তবে রেজিস্ট্রার এ. এফ. এম. আখতারুজ্জামানকে (কায়সার) ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।