ঢাকা, ৮ মে ২০২৪, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রয়ে উভয় ক্ষতি

শিরিন নাঈম পূনম

(৩ মাস আগে) ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:১১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩৪ অপরাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশে তামাকজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে খুচরা শলাকা বা পৃথকভাবে সিগারেট বিক্রয় করা। একটি পুরো প্যাকেটের চাইতে একটি শলাকা ক্রয় করা অনেক সস্তা, যা শিশু, তরুণ ও স্বল্প আয়ের মানুষসহ যারা মূল্য সংবেদনশীল তাদের কাছে সিগারেটকে সহজলভ্য করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের যে কোন স্থানে এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ৮০ থেকে ২৮৪ টাকা যেখানে একটি খুচরা শলাকা মাত্র ৫টাকা থেকে ২০টাকা। এ সহজলভ্যতা তরুণদের ধূমপান শুরু করাকে সহজ করে তোলে এবং অন্যদেরকে ধূমপান ছাড়তে বা কমাতে নিরুৎসাহিত করে। এই কারণে পৃথিবীর কমপক্ষে ৮০টি দেশে সিগারেটের খুচরা শলাকার বিক্রি নিষিদ্ধ, যদিও বাংলাদেশে এটা এখনও নিষিদ্ধ নয়।

স্টপ (এ গ্লোবাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ওয়াচডগ) এর প্রতিবেদন মতে, খুচরা শলাকা বিক্রির কারণে ধূমপায়ীরা বাংলাদেশের সিগারেটের প্যাকেটের বিদ্যমান সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেখতে পায় না। এই তথ্য ঘাটতি ধনীদের তুলনায় দরিদ্রদের প্রভাবিত করে এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে। খুচরা শলাকা আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করে এবং দরিদ্র ধূমপায়ীকে আরও দরিদ্র করে। অর্থাৎ, যাদের অর্থ কম তারা প্রতিটি সিগারেটের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করে। এছাড়াও খুচরা শলাকা বিক্রির মাধ্যমে প্রতিবছর বিরাট অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ধূমপায়ীরা সিগারেটের জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫৩৭ টাকা খরচ করে, যা সীমিত বাজেটের উপর চাপ তৈরি করে। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার করে না এমন পরিবারের চাইতে তামাক ব্যবহারকারী পরিবার প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন পোশাক, বাসস্থান, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও যাতায়াতে কম অর্থ ব্যয় করে।

বিজ্ঞাপন
যখন অসুস্থতা দেখা দেয়, তখন এ পরিবারগুলো আরো বেশি আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়।

বাজারের বিদ্যমান সকল পণ্যের প্যাকেটেই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকে। খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করে প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্যে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু সিগারেট এমন একটি পণ্য যা প্যাকেটের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রয় করা হয়। ফলে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারায়। হিসাব করে দেখা গেছে এই অতিরিক্ত বিক্রয় মূল্যের ওপর কর আদায় সম্ভব হলে এক অর্থ বছরেই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হত। আর এভাবে বছরের পর বছর তামাকজাত দ্রব্যে বিক্রয়ে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথ গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, অতিউচ্চ স্তরের সিগারেটের ২০ শলাকার প্যাকেটে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৭০ টাকা হলেও বিক্রি করা হয় গড়ে ২৯৪.২৯ টাকায়। উচ্চ স্তরের সিগারেট ২০৪ টাকার পরিবর্তে গড়ে প্রায় ২২৯.৮৮ টাকায়, মধ্যম স্তরের সিগারেট ১২৬ টাকার পরিবর্তে ১৩৫.৮৬ টাকায় এবং নিম্ন স্তরের সিগারেট ৭৮ টাকার পরিবর্তে ৯৫.১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিড়ির ক্ষেত্রেও এভাবে সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে এভাবে সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট-বিড়ি বিক্রি অব্যাহত থাকায় প্রতিবছরই হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশে বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এ খুচরা শলাকা বিক্রির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এমতাবস্থায় ২০৪০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এই বিদ্যমান আইনকে আরো শক্তিশালী ও বাস্তবমুখী করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছয়টি সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সংশোধনী হলো-খুচরা শলাকা ও মোড়কবিহীন বিক্রয় নিষিদ্ধ করা। কেননা সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রিতে যেমন জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি সরকার হারাচ্ছে বিরাট অঙ্কের রাজস্ব।

খুচরা শলাকা ও মোড়কবিহীন বিক্রয় নিষিদ্ধ করা ছাড়া অন্যান্য প্রস্তাবগুলো হলো- বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সকল সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বাতিল করা, ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, এবং সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির চিত্র ৫০ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ৯০ ভাগ করা।

প্রত্যাশা যে, একটি তামাকমুক্ত সুস্থ-সবল জাতি গঠনের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো অতিদ্রুত পাস করে আইনে রূপদানের জন্য সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।

লেখক: সদস্য, এন্টি টোব্যাকো উইমেন পার্লামেন্টারিয়ান ফোরাম

পাঠকের মতামত

হাস্যকর, সিগেরেট খুচরা না পাইলে গাঁজা,ইয়াবা,ফেন্সিডেল,আইস আরো কত কি আছে রাস্তা গাঁটে সহজলভ্য এই সোনার বাংলায় !! উনি আসছে সিগারেট খুচরা বেছে নাকি পেকেট বেছে ?? কোথা থেকে আসে এসব আজব বস্তূ ???

Imran
২৬ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ১০:১৬ অপরাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবদলই সরকার সমর্থিত / ভোটের মাঠে নেই সরকারি দলের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো বিরোধীদল

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status