মত-মতান্তর
গ্রিন কোজি কটেজ : ঘটি ডোবে না, নামে তালপুকুর
গাজী মিজানুর রহমান
(২ মাস আগে) ৩ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ১২:০১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
বিগত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে অবস্থিত একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রায় অর্ধশত মানুষের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। নিহত ও আহতদের পরিবারসমূহের আপনজন, শত শত আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশির হৃদয়বিদারক আহাজারির ইতিহাস-রচনাকারী সেই ভবনটির নাম ‘গ্রিন কোজি কটেজ’। প্রচলিত একটা কথা আছে- ঘটি ডোবে না, নামে তালপুকুর। বাড়িটার কোথায় 'গ্রিন', কোথায় 'কোজি' এবং কোথায়-ইবা 'কটেজ' আছে বা ছিল, তা সচেতন মানুষকে এখন খুঁজে খুঁজে ফিরতে হচ্ছে।
দেশের অধিকাংশ মানুষ ইংরেজি শুদ্ধভাবে ব্যবহার করতে না পারলেও, রাজধানী ঢাকা-সহ বড় বড় মহানগরের বহু স্থাপনার নাম ইংরেজিতে। অক্সফোর্ড, কেম্ব্রিজ, লন্ডন, এডিনবার্গ, গ্লাসগো, ইত্যাদি মিলিয়ে রাখা সব চটকদার নাম রয়েছে এখানে-ওখানে। নাম শুনিয়ে স্থানগুলি সাধারণ মানুষকে ডেকে ডেকে বলে-একটু বসে যান, একটু এখানে পড়ালেখা করে যান, কিংবা একবেলা এখানে রাতের খাবার খেয়ে যান। শপিং মল , শপিং কমপ্লেক্সগুলির নানারূপ দোকানপাটের সাথে ইংরেজি ছাড়াও যুক্ত আছে ফরাসী, ইতালি, স্পেনিশ ভাষায় ব্যবহৃত নাম । বানরের গলায় মুক্তোর মালার মত এসব নাম ওদের গলায় ঝুলে থাকে।
ঢাকার আবাসিক এলাকার ভবনে ব্যবসাকেন্দ্রে, ক্লিনিক, কোচিং সেন্টার, খাবার দোকান এসব বসে যাচ্ছে । কিন্তু প্রাথমিক সনদ রয়েছে আবাসিক ভবনের এবং আবাসিক ভবনের চরিত্রের সাথে মিলিয়ে কেতাদুরস্ত নাম রাখা চলছে। ‘গ্রিন’ শব্দটার যে কত অপব্যবহার হচ্ছে, তা শহর, বন্দর, নগরে গেলে বুঝা যায়।
দুর্ঘটনা কবলিত বাড়ির ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায়, আগাগোড়া কাচ দিয়ে মোড়ানো ঘর- ধোঁয়া বের হবে, সেই ফাঁকফোঁকর পর্যন্ত নেই, তবুও অগ্নি-দুর্ঘটনার শিকার ভবনটির নামের মধ্যে রাখা হয়েছে ‘কটেজ’। ‘কটেজ’ তো চারিদিকে বাগান, মাঝখানে বসবাসের একটা প্রকৃতিবান্ধব গৃহ। কিন্তু এ বাড়ির চতুর্দিকে গ্লাস দিয়ে এঁটে দেওয়া এয়ার-টাইট পার্টিশন । দুর্ঘটনা ঘটলে তো ধোঁয়া বের হয়ে যেতে পারার মত খোলা পথ নেই । ভয়াবহ অক্সিজেন-সংকটে দমবন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়। ইদানীং নতুন এই ডিজাইন চালু হয়েছে পাশ্চাত্যের কাঁচঘেরা ঝাঁ চকচকে ভবনের কাঁচ-মোড়ানো এসি নির্ভর ভবন দেখে। জানালা থাকবে না, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভবন হবে– যেন টোকিও, নিউইয়র্ক, বেইজিং, লন্ডনের ঘরবাড়ি । ওদের তো বছরের বেশির ভাগ সময়ে বাতাস ঠাণ্ডা থাকে । এসির পরিবর্তে কোথাও কোথাও রুম হিটার দরকার হয়। তারা গ্লাস দিয়ে সব বন্ধ করলে তাদের ক্ষতির কিছু নেই। তাদের কোনো বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই। আমরা এই বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশে জানালা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে এসি-নির্ভর বায়ু-নিরোধক ভবন তৈরি করি কোন সুফল পেতে ? তারপরও এমন ব্যবসা-কেন্দ্র-প্রধান দমবন্ধ-পরিবেশের বাড়ির নামের সাথে থাকে ‘কটেজ’? হায়রে কটেজ !
অনেকে হয়তো বলবেন, নামে কি আসে যায় ? নামে কিছু যায় আসে না, এটা ঠিক। কিন্তু ভালো পরিবেশের কথা বলে খাবার খেতে মানুষকে ঘরে ডেকে আনবেন , আর তাদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে রাখবেন , এটা কেউ মেনে নেবে না। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, কারো নাম নিয়ে অন্য কেউ ঘাঁটতে যাবে না। কিন্তু কোনো মানুষের উল্টোপাল্টা আচার-ব্যবহার দেখলে , অন্য মানুষ তার ‘সাধু’ নামের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। যে-কোন সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা-কবলিত একটা ভবনের নাম দেবেন ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ তা কি করে হয় ?
( লেখক এবং প্রবন্ধকার )
দেশের বুদ্ধিজীবিরা আজ কোথায়। তাাদের মুখ থেকে কোন আওয়াজ শোনা না যায় না। আবার কয়েকজন আছে যারা শুধু.... প্রজন্ম নিয়েই ব্যস্ত। এমন দুর্যোগে তাদের নিকট থেকে কোন কথা শুনা যায় না। হায়রে বুদ্ধিজীবি…....
আমারতো মনে হয় অগ্নিনির্বাপণ বিষয়টি কি দেশের এসব ব্যাবসায়ী বুঝেন না!
ঘটি ডোবেনা নামে তালপুকুর।