বাংলারজমিন
ফসলের মাঠে ৩৪ কোটি টাকার সেতু!
রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবারদেখে মনে হবে কৃষিজমি থেকে কোনো গায়েবি পাকা সেতু উঠে এসেছে। জমি অধিগ্রহণ জটিলতার মধ্যেও ৩৪ কোটি টাকার উপরে খরচ করে নির্মাণ করা হয় এই সেতুটি। যা জনগণের কোনো কাজে আসছে না। সেতু ব্যবহারে দুই পাশে কোনো রাস্তা করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। তারা চায় দ্রুত জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ করে সেতুটি সচল করার।
এলাকার মুক্তিযোদ্ধা টাইগার লোকমান হোসেন বলেন, সেতুটি দেখে মনে হচ্ছে এটি কোনো গায়েবি সেতু। কারণ সেতুটির দুই পাড়ে শুধু ফসলের মাঠ। কোনো রাস্তা তৈরি করা হয়নি। সেতু ব্যবহারের জন্য আগে জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা নির্মাণ করার পর ব্রিজের কাজে হাত দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটা না করে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কালীগঙ্গা নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ করেছে। পরিকল্পনার অভাব ছিল কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির জন্য সাবেক সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের প্রচেষ্টায় কালীগঙ্গা নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। যা এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে উঠবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা নির্মাণ না করায় সেতুটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর দুই পাড়ের রাস্তা নির্মাণ করে সেতুটি মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হোক।
তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা এবং অর্থবরাদ্দ বাড়ানো হলেও ভূমি অধিগ্রহণ আর স্থাপনার ক্ষতিপূরণের টাকা দুই বছরেও বুঝে পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে না পাওয়ায় জমি ছাড়ছেন না তারা। জমি ও স্থাপনার মালিকরা বলছেন, প্রায় দুই বছর ধরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফলে ৩৪ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে নির্মিত সেতু ব্যবহার করতে পারছে না জনগণ।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর কালীগঙ্গা নদীর উপর ‘গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু (সিআইবিআরআর)’ প্রকল্পের আওতায় ৩৪ কোটি টাকার উপরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। দুই পাড়ে ৬৩০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৪.৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। তবে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিলনালাই সিংজুরী ইউপি ভায়া বৈকুণ্ঠপুর বালিয়াবাধা এ সড়কে কালীগঙ্গা নদীর উপর এ সেতুটি চালু হলে ঘিওর উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে।? কোনো ধরনের দুর্ভোগ এবং ভোগান্তি ছাড়াই হাজার হাজার মানুষ নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে। উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বান করে ঢাকার অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডারস এবং মেসার্স কহিনূর এন্টারপ্রাইজ (জেভি) নামের প্রতিষ্ঠানকে সেতুসহ এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। দরপত্র অনুযায়ী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার নির্দেশনা ছিল। এ সময়ের মধ্যেও কাজটি শেষ হয়নি। ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. মাসুদ মিয়া জানান, ভূমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় জমি ছাড়ছেন না। আর এলজিইডি বিভাগ জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে না। কাজ শুরু করতে গেলে ভূমির মালিকরা বারবার বাধা দিচ্ছেন। এমন জটিলতায় বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে অধিগ্রহণ হয়ে গেলে কাজ শেষ করতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে। উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, দুই বছর আগে সেতু নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ঠিকাদার দুই পাশের সংযোগ সড়ক করতে পারছেন না। তবে অধিকরণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে জেলার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) এল এ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ জানান, ভূমি অধিগ্রহণ বিষয় একটি চলমান প্রক্রিয়া। জমির মালিকদের ইতিমধ্যে ৭ ধারা নোটিশ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় খুব দ্রুতই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ করবেন।