ঢাকা, ৪ মে ২০২৪, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

মোখলেছ হত্যা

২৫ দিন পর ছাত্রলীগ নেতার লাশ উদ্ধার, ঘাতকের স্বীকারোক্তি

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার
mzamin

কিশোরগঞ্জে ঘাতক বন্ধুর স্বীকারোক্তির পর তল্লাশি চালিয়ে নিখোঁজের ২৫ দিন পর ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ ভূঁইয়ার মাথাবিহীন গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে জেলা শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ সংলগ্ন ওয়াচটাওয়ার এলাকার সেতুর নিচে নরসুন্দা নদীতে থাকা কচুরিপানার ভেতর থেকে শরীরে সিমেন্টের ব্লক বাঁধা অবস্থায় তার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের সন্ধানে সোমবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় নরসুন্দা নদীতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছিল পুলিশ। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার পুনরায় তল্লাশি অভিযান চালানোর পর দুপুরের দিকে ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ ভূঁইয়ার পরনের লুঙ্গি, ভাড়াবাসার চাবি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। পরে বিকাল ৪টার দিকে মাথাবিহীন লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বিপিএম-সেবা, পিপিএম (বার) এবং জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। নিহত মোখলেছ ভূঁইয়া (৩৮) মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে এবং কেওয়ারজোড় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। তিনি এ বছর গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন এবং জেলা আদালতে আইনজীবী সহকারী হিসেবে কাজ শিখছিলেন। অন্যদিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ঘাতক বন্ধুর নাম মিজান শেখ (২৮)।

বিজ্ঞাপন
সে একই গ্রামের শেফুল শেখ এর ছেলে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একই গ্রামে এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা সমবয়সী মোখলেছ ও মিজান ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব, মারামারি এমনকি মামলা-মোকদ্দমা থাকলেও তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরেনি। এমনকি একবার মারামারিতে মিজান আহত হলে মোখলেছ তাকে গোপনে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। ঘাতক মিজান মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছে। কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুর রহমান তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থানা এলাকায় কিশোরগঞ্জ সদর থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া বউবাজার এলাকার চুন্নু মিয়ার বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ ভূঁইয়া। গত ২৯শে মার্চ রাতে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে তারাবিহর নামাজ পড়তে বেরিয়ে আর বাসায় ফিরে আসেননি তিনি। নানাভাবে খোঁজাখুজি করেও তার কোন সন্ধান না পেয়ে গত ৩১শে মার্চ রাতে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় জিডি করেন মোখলেছ ভূঁইয়ার বড় ভাই মিজান ভূঁইয়া। এদিকে দীর্ঘদিনেও ছেলের কোন সন্ধান না পেয়ে ছেলের শোকে গত ১৩ই এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পিতা মকবুল হোসেন মারা যান। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গত ১৬ই এপ্রিল মোখলেছ ভূঁইয়ার বড় ভাই মিজান ভূঁইয়া বাদী হয়ে মিজান শেখ ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় অপহরণ মামলা করেন। এরপর থেকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বিপিএম-সেবা, পিপিএম (বার) এর নির্দেশনায় অভিযুক্ত মিজান শেখকে ধরতে পুলিশ সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা ছয়দিন অভিযান পরিচালনা করে। এক পর্যায়ে গত সোমবার হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি। মোখলেছকে গলা কেটে হত্যার পর তার শরীরে সিমেন্টের ব্লক বেঁধে ওয়াচটাওয়ার এলাকার নরসুন্দা নদীতে কচুরিপানার নিচে লাশ লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ঘাতক মিজান শেখের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার দেখিয়ে দেয়া স্থানে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার বিকালে নিখোঁজ মোখলেছ ভূঁইয়া’র মাথাবিহীন গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে মিজান শেখ জানায়, গ্রামে জমিজমাসহ নানা বিরোধে মিজান শেখদের সঙ্গে এলাকার প্রতিপক্ষের মামলা-মোকদ্দমা চলমান রয়েছে। মোখলেছ ভূঁইয়ার সহযোগিতার ফলে এ সব মামলা-মোকদ্দমার আসামিরা আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে যেতো। এ কারণে মোখলেছের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মিজান শেখ এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বিপিএম-সেবা, পিপিএম (বার) বলেন, মোখলেছকে গলা কেটে হত্যা করার পর শরীরে সিমেন্টের ব্লক বেঁধে ওয়াচটাওয়ার এলাকার ব্রিজের নিচে নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেয় ঘাতকেরা। লাশ উদ্ধার করা ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি এবং বেশকিছু আলামত উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মিজান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status