ঢাকা, ৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

গ্যাস সংকটে ৪০ দিন ধরে বন্ধ শাহজালাল সারকারখানার উৎপাদন

হাসান চৌধুরী ফেঞ্চুগঞ্জ সিলেট থেকে
২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার

গ্যাস সংকটে দেশের অন্যতম বৃহৎ ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শাহজালাল সারকারখানা ৪০ দিন ধরে বন্ধ। ইউরিয়া উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ কবে দেয়া হবে, সংকট লাঘবের সরকারি কোনো উদ্যোগের খবর না পাওয়ায়   শাহজালাল সারকারখানার উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছর এ নিয়ে দু’দফায় দীর্ঘ বন্ধের কবলে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আধুনিক ওই সারকারখানা দীর্ঘদিন এভাবে বন্ধ থাকলে এর স্বয়ংক্রিয় মেশিনগুলোতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সারকারখানার প্রকৌশল বিভাগ। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বাপেক্সের নিয়ন্ত্রণাধীন জালালাবাদ গ্যাস জ¦ালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিলে গত ১৩ই মার্চ  বন্ধ হয়ে যায় শাহজালাল সারাকারখানার উৎপাদন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার টন সার উৎপাদন ব্যাহত হয়। যার বাজার মূল্য ১২৫ কোটি টাকা। শাহজালাল সারকারখানা ফের কবে চালু হবে তা সঠিক করে কেউ  বলতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উৎপাদনক্ষম শাহজালাল সারকারখানা জ¦ালানি সংকটে বন্ধ রাখার ফলে অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না । চলতি অর্থবছর শাহজালালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল  ৩ লাখ ৮০ হাজার টন।

বিজ্ঞাপন
মার্চ পর্যন্ত এ কারখানায় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টন। বিদ্যমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে ২ মাস পর আগত নতুন অর্থবছরেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ প্রসঙ্গে বাপেক্সের পরিচালক (অপারেশন) ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান মানবজমিনকে জানান, শাহজালাল সারকারখানার জন্য বর্তমানে গ্যাস সরবরাহের বরাদ্দ নেই, তাই বন্ধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিলে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় দেয়া হবে। শাহজালাল সারকারখানার কাছে জালালাবাদ গ্যাসের বিপুল বকেয়া পাওনা জমা হয়েছে। সরকার গ্যাসের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা করলেও শাহজালাল সারকারখানা আগের দর ঘনমিটার প্রতি ৪ টাকা করে পরিশোধ করছে। ফলে বিপুল পাওনা জমা পড়েছে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের কাছে। গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি জানান। 
শাহজালাল ফাটিলাইজার কোম্পানি লিমিটিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  জিয়াবুল হোসেন জানান, সারকারখানা শুধুমাত্র গ্যাসের জন্য বন্ধ আছে। জ¦ালানি পেলেই পুনরায় কারখানা চালু করা হবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগোযোগ করা হচ্ছে।  জালালাবাদ গ্যাসের পাওনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষযটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। গ্যাসের মূল্য ইউনিট প্রতি ৪ টাকা থেকে ১৬ টাকায় করা হয়েছে। শাহজালাল সারকারখানায় বর্তমানে প্রতিটন সার উৎপাদনে খরছ হয় প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত প্রতিটন সারের বিক্রয় মূল্য ২৫ হাজার টাকা। প্রতি টনে প্রায় ১১ হাজার টাকা ঘাটতি। অন্তত এই ঘাটতি কীভাবে পুষিয়ে নেয়া যায় সেই চেষ্টায় শিল্প, কৃষি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন গ্যাসের মূল্য ইউনিট প্রতি ৪ টাকা দর দিয়ে উল্লেখিত ঘাটতি, এর বেশি দিলে সারকারখানার ফান্ডে কোনো টাকাই থাকবে না।  সারকারখানা পুনরায় চালুর ব্যাপারে এখন পর্যন্ত  তার কাছে কোনো তথ্য আসেনি বলেও তিনি জানান।  শাহজালাল সারকারখানার জিএম (একাউন্ট) মো: আব্দুল বারিক জানান, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ১৬ টাকা ধার্য্য করা হয়েছে। জুন ২০২২ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জালালাবাদ গ্যাস শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বকেয়া পাওনা পাবে ৭৭৯ কোটি টাকা। শাহজালাল সারাকারখানার উৎপাদনের সফলতা নিয়ে  এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি  জানান, নির্মাণের পর এ পর্যন্ত শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি সরকারের কোষাগারে সার বিক্রি করে অর্থ জমা দিয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা।  
সারকারখানার উৎপাদন বিভাগ সুত্র জানায়, বর্তমানে দৈনিক ১৩-১৪শ’ টন ইউরিয়া উৎপাদন হয় শাহজালাল সারকারখানায়। নির্মাণের পর ২০১৬ সালে শাহজালাল সারাকারখানা পুরোদমে উৎপাদনে যায়। যাত্রার পর থেকে এ সারকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন দিয়ে আসছিল। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে শাহজালাল সারকারখানার বিদ্যুতের সাব স্টেশনে গোলযোগ থেকে সৃষ্ট ফ্লাশিংয়ে কারখানার পাওয়ার হাউজের বয়লার শাটডাউন হয়ে পুরো সারকারখানার সবকটি প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় একটানা ৩৩দিন বন্ধ ছিল সারকারখানার উৎপাদন। বিজ্ঞমহলের মতে বাংলাদেশে বিদ্যমান সারকারখানাগুলো উৎপাদনোক্ষম রাখা দরকার, কারণ দেশে এক টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে খরছ হয় ৩৫-৩৬ হাজার টাকা,অপরদিকে বিদেশ থেকে ইউরিয়া আমদানি করতে প্রতি টনের খরছ হয় ৬০-৬৫ হাজার টাকা। ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রাক্তণ জিএস স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মতিন জানান, ফেঞ্চুগঞ্জে পুরাতন সারাকারখানার স্থলে একটি নতুন সারকারখানা স্থাপন ছিল এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। দীর্ঘ প্রতিক্ষা ও অনেক ত্যাগ-তীতিক্ষার পর প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রচেষ্ঠা ও  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার ফল এই শাহজালাল  সারকারখানা। দেশে সারের চাহিদা বিবেচনা করে সিলেটবাসীর প্রাণের এই প্রতিষ্ঠান নবনির্মিত শাহজালাল সারকারখানাকে যেকোনো মূল্যে টিকিয়ে রাখতে সরকারের  সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status