দেশ বিদেশ
বিটিআরসি’র গণশুনানিতে গ্রাহকদের অভিযোগের পাহাড়
স্টাফ রিপোর্টার
৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবারবাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ‘টেলিযোগাযোগ সেবা’ সম্পর্কিত বিষয়ে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে সশরীরে এবং অনলাইন প্ল্যাটফরম ‘জুম’ এ গণশুনানির আয়োজন করে। গণশুনানি কমিটির সভাপতি ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো. মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গণশুনানিতে গ্রাহকরা টেলিযোগাযোগ সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তা তুলে ধরেন এবং কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা প্রশ্নের উত্তর দেন। গণশুনানিতে অংশে নিতে নিবন্ধন করেন ৩ হাজার ২৫ জন যা ২০২২ সালের গণশুনানিতে নিবন্ধনের সংখ্যার চেয়ে চারগুণ বেশি। গণশুনানিতে নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারী ছাড়াও উপস্থিত গ্রাহকরা টেলিযোগাযোগ সেবা সম্পর্কে তাদের প্রশ্ন উপস্থাপন করেন। গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে কমিশনার ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আমিনুল হক বলেন, বর্তমান সরকার আধুনিক, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে যার মূলে থাকবে নিত্য নতুন প্রযুক্তি।
টেলিযোগাযোগকে একটি সম্ভাবনাময়ী খাত উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি বছর গণশুনানি আয়োজনের মাধ্যমে অনেক অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় এবং গণশুনানি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে। গণশুনানি সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন কমিশনের সিস্টেমস্ অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান। তিনি বলেন, মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত দেশে মোবাইল সিম সংযোগ সংখ্যা ১৯ কোটি ২২ লাখ, ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৪৭ লাখ, মোবাইল ডেনসিটি ১০৮.৪১ ভাগ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ৭৫.৭৪ ভাগ। মার্চ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ তথা ডাটার ব্যবহার হয়েছে ৫ হাজার ৯১২ জিবিপিএস। বর্তমানে দেশে ৯৯ ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে যার মধ্যে স্মার্ট ফোন পেনিট্রেশন ৬০ ভাগের বেশি।
জবাবে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে সকল এলাকায় বহুতল অবকাঠামো রয়েছে সেখানে নেটওয়ার্ক কাভারেজ সহজে প্রবেশ করতে পারে না। অপারেটরগুলো নতুন সাইট স্থাপন করতে চাইলেও জনগণ বিভিন্ন এলাকায় নতুন সাইট নির্মাণের অনুমতি না দেয়ার ফলে পর্যাপ্ত সাইট স্থাপন করা যাচ্ছে না। টাওয়ার স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাওয়ার স্থাপনের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য বিটিআরসি টাওয়ার শেয়ারিং চালু করেছে। এর ফলে এক টাওয়ার থেকে সব অপারেটর সেবা গ্রহণ করতে পারবে। বিটিআরসি সারা দেশে বিভিন্ন শহর ও উপজেলায় টাওয়ার রেডিয়েশন পরিমাপ করে এবং এর ফলাফল বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দেশের রেডিয়েশন মাত্রা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে নিচে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রেডিয়েশন নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মুন্সি আমানুর রহমান স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে পছন্দের ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন, এর জবাবে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিটিআরসি এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে অবৈধ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। আমিনুল ইসলাম নামে ঢাকার এক শিক্ষার্থী বলেন, তরঙ্গ বরাদ্দের পরও অপারেটরগুলো যথাসময়ে রোলআউট না করায় গ্রাহকরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, অপারেটরদের যথাসময়ে তরঙ্গ রোলআউটের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে যা বাস্তবায়ন হলে মোবাইল নেটওয়ার্কের মান বাড়বে। ঝিনাইদহ থেকে জুম প্ল্যাটফরমে অংশ নিয়ে ইমরান হোসেন প্রত্যন্ত এলাকার সিমের মালিকানা পরিবর্তন, এমএনপিসহ সকল টেলিযোগাযোগ সেবা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে গ্রহণের সুবিধা চালুর বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান বলেন, সিমের মালিকানা পরিবর্তন ও এমএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয় বিধায় তা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে সম্ভব হয় না, ভবিষ্যতে মোবাইল অপারেটর সংক্রান্ত সকল সেবা যাতে অনলাইনে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। বর্তমানে যে সকল অনিবন্ধিত ফোন রয়েছে তা বন্ধ হয়ে যাবে কিনা এ বিষয়ে জুম প্ল্যাটফরমে প্রশ্ন করেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা রাসেল। এ বিষয়ে স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌ: শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, নেটওয়ার্কে সচল সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হচ্ছে, তাই আপাতত কোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ হবে না। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি, সারা দেশে সুলভমূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো, রাজস্ব আদায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রযুক্তি শিল্প বিকাশে বিটিআরসি’র অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।
বর্তমান চাহিদা এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আধুনিক ও ভবিষ্যৎমুখী টেলিযোগাযোগ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, টেলিযোগাযোগ আইন-২০১০ এর সর্বশেষ সংশোধনীর অনুসারেই বিটিআরসি’র কর্মপরিধি এবং দায়িত্ব নির্ধারিত থাকবে। ফাইভজি নেটওয়ার্কের জন্য যেসব তরঙ্গ বরাদ্দ হয়েছে সেটা যাতে ফোরজি সেবার মানোন্নয়নে ব্যবহার হয় সে বিষয়ে বিটিআরসিকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিটিআরসি’র সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় জনগণের মানসম্মত সেবা নিশ্চিতের জন্য। সেবার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে গণশুনানির মাধ্যমে প্রাপ্ত গঠনমূলক পরামর্শ ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমিশনের পরবর্তী গণশুনানি রাজশাহী বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কমিশনের অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, সিস্টেমস্ অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসাইন, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক জনাব আবদুল্লাহ আল মামুন, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো. নুরুল হাফিজ এবং পরিচালকবৃন্দসহ বিটিআরসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।