দেশ বিদেশ
শিশু অপহরণ করে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করতো চক্রটি
স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবাররাজধানীর হাজারীবাগ থেকে আড়াই বছর বয়সী এক শিশু অপহরণের ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর একটি অপহরণ চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রমনা বিভাগ। বুধবার কুমিল্লার লালমাই ও বরুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- অপহরণকারী সুলতানা আক্তার ওরফে নেহা (২২), তার স্বামী সাইফুল ইসলাম (২৭) ও ক্রেতা মো. শাহজাহান (৩৪)। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চক্রটি নিঃসন্তান দম্পতির কাছ থেকে শিশু দেয়ার অর্ডার নিয়ে অপহরণের জন্য মাঠে নামতো। পরবর্তীতে চাহিদামতো শিশু পেলে কৌশলে অপহরণ করে বিক্রি করে দিতো নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। রাজধানীর হাজারীবাগ থানার নিউ মডেল টাউন এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। পেশায় রিকশাচালক। নুরুল দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে হাজারীবাগ এলাকায় বসবাস করেন। গত ২১শে মার্চ বিকালে বাসার সামনে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ে তাবাসসুম ও ছেলে তাওসীন খেলেতে যায়। এই সময় শিশুদের নানি তাদের সঙ্গে ছিলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এনিয়ে শিশুটির বাবা ডিএমপি’র হাজারীবাগ থানায় গত ২১শে মার্চ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার শিশুটি উদ্ধারের জন্য মাঠে নামে ডিবি রমনা বিভাগ। মামলাটির ছায়া তদন্তে নেমে অপহরণ চক্রটিকে শনাক্ত করেন ডিবির রমনা বিভাগের ধানমণ্ডি জোনাল টিমের সদস্যরা। পরবর্তীতে বুধবার কুমিল্লার লালমাইয়ে অভিযান চালিয়ে শাহজাহানের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে অপহরণ করে কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় নিয়ে বিক্রি করে দেয় চক্রটি। ৫০ হাজার টাকায় শিশুটিকে সাইফুল-নেহা দম্পতির কাছ থেকে কিনে নেন মো. শাহজাহান। ছাড়া একইদিনে বরুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে নেহা ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নিঃসন্তান দম্পতির কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে চাহিদামতো শিশু চুরি করে বিক্রি করতো। অপহরণের কাজটি করতো সাইফুলের স্ত্রী নেহা। তিনি বিভিন্ন এলাকা শিশুদের টার্গেট করতো। এরপর কৌশলে শিশুদের চকলেট, চিপসসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে কোলে নিয়ে সটকে পড়তো। ভুক্তভোগী শিশু তাওসীনকে তারা অপহরণ করে কুমিল্লার শাহজাহানের কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল। ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, যাদের সন্তান নেই বা হয় না। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা সঠিক পদ্ধতিতে শিশু দত্তক নিন। কারও কোলের শিশু চুরি করে বা অপহরণ করে নিয়ে আপনাদের কাছে দিলো, আপনারা শিশুটিকে রাখলেন এটা অপরাধ। আর এমন অপরাধে আপনারাও একই মামলার আসামি হবেন। পাশাপাশি সন্তানদের পিতা-মাতাকে বলবো আপনার বাচ্চা বাসার বাইরে গেলে তাদের সঙ্গে পরিবারের বড় সদস্যরা থাকবেন। না হলে এমন ঘটনা আবারো ঘটতে পারে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের গবেষণা
ধূমপায়ীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যু হার অধূমপায়ীদের তুলনায় ৩ গুণ বেশি
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিতে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর হার ৩ গুণ বেশি ছিল এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি রোগীর। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ‘দ্যা রিলেশনশিপ বিটউইন স্মোকিং অ্যান্ড কোভিড-১৯ আউটকামস ইন টার্মস অফ মর্বিডিটি অ্যান্ড মর্টালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গবেষণা পরিচালনা করে।
এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারিতে ধূমপায়ীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৬.৬ শতাংশ, ধোঁয়াবিহীন তামাক বা এসএলটি (জর্দা-গুল-সাদা পাতা) ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪.৪ শতাংশ এবং অধূমপায়ীদের মধ্যে ২.১ শতাংশ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার’-এ ১২ই জুন ২০২০ থেকে ২৯শে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ১২৭,০৭১ জন সেবা গ্রহীতার মধ্যে ১৬০৭ জনের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, এমপি। তিনি বলেন, তামাকের ভয়াবহতা রুখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। নানান গবেষণা ও পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা সহজেই বুঝতে পারি তামাক আমাদের জন্য কতো ক্ষতিকর। তাই তামাক রুখতে সবার অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি এবং আমরা যেকোনো ভাবে এক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, এমপি বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশের আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে কাজ করতে হবে। সংসদ সদস্যরা অনেক সচেতন এবং উদ্যমী। সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করেছেন। করোনার সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্কের নিরূপণে যে গবেষণা করা হয়েছে তার ফলাফলে আমরা শঙ্কিত। আমাদের মধ্যে তামাক বিষয়ে দ্রুত সচেতন হতে হবে। ধূমপান, পরোক্ষ ধূমপান এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের সঙ্গে কোভিড-১৯’র মৃত্যুহার এবং অসুস্থতার সম্পর্ক নিরূপণে পরিচালিত গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। গবেষণার ফল প্রকাশে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল অধূমপায়ীদের থেকে ৭৩ শতাংশ বেশি এবং ধূমপান ছেড়ে দেয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশেরও বেশি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল ৩৬ শতাংশ বেশি। তিনি আরও জানান, গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মতে কোভিড-১৯ এর উচ্চ মৃত্যুহারের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাস (টাইপ-২), হাইপার টেনশন, কিডনির সমস্যা, নিদ্রাহীনতা এবং কার্ডিওভাসকুলারসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র এবং গণপরিবহনকে ১০০ ভাগ ধূমপানমুক্ত রাখা, কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধি করে তামাক পণ্য তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রাখা, তামাকের যেকোনো প্রচারণা নিষিদ্ধ করাসহ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারাকে শক্তিশালী করে তামাকের বিস্তার রোধ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে তামাক সম্পর্কিত চিকিৎসা এবং তামাক ব্যবহার রোধে কার্যকর কাউন্সেলিং করার জন্য। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সভা সঞ্চালনা করেন।