ঢাকা, ১১ মে ২০২৪, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

ধর্ষণ- কুসুম কুসুম শাস্তি!

যুক্তরাজ্য থেকে ডাঃ আলী জাহান

(২ মাস আগে) ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৮ পূর্বাহ্ন

১. ১৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার খবর অনুসারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহাবুবুল মতিনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়েছে। অভিযোগ খুবই গুরুতর। এবং সিদ্ধান্তটি বেশ নাটকীয়। ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য বরাবর যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণ চেষ্টার জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ করেন একই বিভাগের এবং ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর থিসিস করা এক ছাত্রী। প্রশ্ন আসতে পারে যে এতো তাড়াতাড়ি এই অধ্যাপককে একেবারে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হল কীভাবে এবং কেন? মাত্র ১৬ দিনের মাথায় এরকম একটি কঠিন সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসলেন কীভাবে? আমি নিশ্চিত ড. মাহবুবুল মতিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোর্টে যাবেন। নিকট অতীত বিশ্লেষণ করে তিনি আশা করতে পারেন যে তার এই বহিষ্কারাদেশ কোর্টে হয়তো টিকবে না। হয়তো এই অধ্যাপক সগৌরবে আবার ফিরে আসবেন। অতীতে অনেকেই ফিরে এসেছেন। তিনিও হয়তো ফিরে আসবেন। নিরাশ হবেন না মাননীয় অধ্যাপক! শেষমেশ হয়তো আপনি জয়ী হয়ে ফিরে আসবেন মাঝখান দিয়ে কিন্তু মেয়েটার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ছেয়ে গেল!

২. তাড়াতাড়ি বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে যে অভিযোগ দায়ের করার পর থেকে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার ও যথাযথ বিচার চেয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এই আন্দোলন না হলে মহামান্য এ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতেন তা পাঠকরা ধারণা করতে পারেন।

৩. তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে ড. মাহবুবুল মতিনকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ ভাগ আইন মেনেই বহিষ্কার করেছে। তাহলে কি ঘটনার এখানেই সমাপ্তি? যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ প্রচেষ্টার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে ওনার কোন বিচার হবে না? উনার বিরুদ্ধে থানায় কোন মামলা দায়ের করা হবে না? পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেনা? এরকম অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে না? চার্জশিট দেবেনা? রিমান্ডে নেবে না? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই অধ্যাপককে বহিষ্কারাদেশের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোন অনুরোধ বা আদেশ নেই। অপরাধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার ফৌজদারী অপরাধের বিচার করবে কে? নাকি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হবার কারণে তার ফৌজদারী অপরাধ গৌণ হয়ে গেছে? সরকারি চাকরি করলেই কি পুলিশ আদালতের ভয় চলে যায়? শুধুমাত্র বিভাগীয় ব্যবস্থা? পুলিশ-আইন-আদালত কি শুধুমাত্র ফকির মিসকিনদের জন্য?

৪. গত সপ্তাহে পিজি হাসপাতালের দুই অধ্যাপক একই ধারার অভিযোগে শিরোনাম হয়েছিলেন। এক সরকারি অধ্যাপিকা আরেক বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের মামলা করেছিলেন। থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলেন যে অধ্যাপক সাহেবকে গ্রেফতারের জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তারপর আর কোন সংবাদ নেই। হয়তো সংক্ষুব্ধ মহিলা ডাক্তার শান্ত হয়েছেন। তাই পুলিশ আর সামনে এগোচ্ছে না।

৫. কিন্তু আমাদের তো এগোতে হবে। আমরা দেখতে চাই যে দেশের সকল নাগরিকের জন্য আইন একইভাবে প্রযোজ্য।আমাদের ছেলেমেয়েরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। সহপাঠী বা শিক্ষকদের দ্বারা যৌন নির্যাতন ধর্ষিতা হবার জন্য নয়। এরপরেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটবেই। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হয়তো সরাসরি দায়ী করা যাবে না। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি পুলিশকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য আহবান না করেন, তাহলে দায়ী কে? তাহলে কি ক্রিমিনাল আইন স্থান-কাল-পাত্র ভেদে গতি হারিয়ে ফেলে? সরকারি চাকরি করলেই কি দেশের আইন আদালতকে তোয়াক্কা না করলেও চলে?

ডাঃ আলী জাহান

কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, যুক্তরাজ্য

সাবেক পুলিশ সার্জন, যুক্তরাজ্য পুলিশ

সাবেক সরকারি চিকিৎসক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

[email protected]

পাঠকের মতামত

গরীব মানুষের বিচার হয়। বিরুধী দলের নেতা-কর্মীদের বিচার হয়।

এ কে এম জামসেদ
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৪:৫২ পূর্বাহ্ন

যারা ফকির মিসকিন, দুর্বল তাদের উপর আইন প্রয়োগ করে শাস্তি দেওয়ার জন্যই সরকার বসে আছে। এটা তো অনেক আগের কথা বা পুরানো কথা। যেমন আল্লামা মামুনুল হক। মামুনুল হকদেরকে ডান্ডা বেড়ি পরিয়ে আদালতে আদালতে ঘুরাবে যদি ও তারা নির্দোষ হোক। আর এসব লুচ্ছা, বদমাশদের কিছুই হবে না। সরকার কিছুই করবে না। এটাই সোনার বাংলা। এটাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। এটাই স্বাধীনতার চেতনা। এখন প্রশ্ন যে এটাকে সোনার বাংলা বলবো নাকি ........ বাংলা বলবো? এটা বুঝে উঠতে পারছি না।

Rafiqul Islam
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ১:৩৪ পূর্বাহ্ন

বর্তমান আইন শুধু ফকির মিসকিন দের জন্য এটাই সঠিক। এই অভদ্রলোক বড় বড় কিতাব পড়ে মানুষ হতে পারে নাই।

Ahmed
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন

যথার্থ লিখেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নগুলো আমি আবারো প্রশ্ন তুললাম : তাহলে কি ঘটনার এখানেই সমাপ্তি? যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ প্রচেষ্টার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে ওনার কোন বিচার হবে না? উনার বিরুদ্ধে থানায় কোন মামলা দায়ের করা হবে না? পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেনা? এরকম অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে না? চার্জশিট দেবেনা? রিমান্ডে নেবে না? কিন্তু তার ফৌজদারী অপরাধের বিচার করবে কে? নাকি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হবার কারণে তার ফৌজদারী অপরাধ গৌণ হয়ে গেছে? সরকারি চাকরি করলেই কি পুলিশ আদালতের ভয় চলে যায়? শুধুমাত্র বিভাগীয় ব্যবস্থা? পুলিশ-আইন-আদালত কি শুধুমাত্র ফকির মিসকিনদের জন্য? কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি পুলিশকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য আহবান না করেন, তাহলে দায়ী কে? তাহলে কি ক্রিমিনাল আইন স্থান-কাল-পাত্র ভেদে গতি হারিয়ে ফেলে? সরকারি চাকরি করলেই কি দেশের আইন আদালতকে তোয়াক্কা না করলেও চলে?

amir
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৫ অপরাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com