ঢাকা, ১২ মে ২০২৪, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

আমি নারী, আপনি ফুল নাকি কাঁটা?

আইরিন আঁচল

(২ মাস আগে) ৮ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১:০০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

প্রতীকী ছবি

বয়স তার আনুমানিক ২০। সবসময় পর্দা মেনে চলে। তথাকথিত ঘরের বউ হওয়ার সকল যোগ্যতাই আছে তার। মানিকগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ঘরের কোণায় তার দিন কাটছে। কিন্তু ঘরের বাইরেই মন শান্ত করা সবুজের সমারোহ। চার দেয়ালে বন্দি মেয়েটার মুখেও একটা কৃত্রিম হাসি লেগেই থাকে। সে হাসি দেখা যায় খুব কম, নিজেকে লুকিয়ে রাখতেই যে ব্যস্ত।

ফেসবুক পোস্ট দেখে কি মানুষকে চেনা যায়? এক আপুর কথা বলি। ফেসবুকে ভীষণ একটিভ। পোস্ট দেখলে মনে হবে চিল মুডেই থাকেন সব সময়। আবার তার সঙ্গে কথা বললে আপনি হাসতে বাধ্য চাকরিও করছেন। থাকেন ঢাকায়।

আরেক আপু থাকেন প্রবাসে। মাল্টায় তার কতো সুন্দর জীবন। ফেসবুকে পোস্ট দেখলেই লোভ লাগে। সুন্দর সুন্দর স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, চাকরি করছেন। একেকটা রিলসে সর্বনিম্ন ভিউ দুই হাজার।

উপরের তিনজন মানুষের জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সামাজিক স্ট্যাটাসটাও ভিন্ন। কিন্তু তাদের মাঝে দুটা মিল। প্রথমত তারা নারী, দ্বিতীয়ত তারা ডিভোর্সী। তিন নারীরই দোষ- তারা স্বামীর ঘর আলো করে রাখতে পারেননি। কার দোষে, কী কারণে ডিভোর্স হলো? এই উত্তর সমাজ খোঁজে না। কিন্তু সমাজের চোখে নারীরাই অপরাধী। সমাজের বিচার ঐ যে, তাল গাছটা আমার। তিনজন মানুষই করে যাচ্ছেন সমাজের সাথে যুদ্ধ।

মানিকগঞ্জে থাকা মেয়েটা নিজ ঘরে জালবন্দী। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। এই আপুটা আমাকে বলেছিলেন, ছোট ভাইটাও কথা শোনায়। আর পাড়াপ্রতিবেশীতো ওত পেতে থাকে। কারো সঙ্গে চোখ তুলে কথা বলতে পারি না। মাসে দুই থেকে তিনটা প্রস্তাব আসে বিয়ের। সেজেগুজে মানুষের সামনে যাই। সবার এক প্রশ্ন কেন, ছাড়াছাড়ি হলো? নিজের জীবনটা শুধু একটা নেগেটিভ প্রশ্নে থেমে আছে তার।

ঢাকায় থাকা আপুটার সঙ্গে কথা বললে বুঝতেই পারবেন না কতোটা দুঃখ তার মনে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, পাশের যে মানুষটার সঙ্গে নিরাপদে চলতে চাই। সেই সুযোগ নিতে চায়। ডিভোর্সী নারী...

মাল্টায় থাকা আপুটার জীবনটাও দুর্বিষহ। তিনি বলেন, মা ফোন করে কাঁদে আর বলে তোর বিয়ে দেয়া দরকার। এক ফুপু আছে, যাকে কোনদিন ভালো সময়ে দেখি নাই। আমার ডিভোর্স হবার পর থেকেই আব্বু-আম্মুর আপনজন হবার চেষ্টা করছে। তার কথা, মেয়ে বিদেশে একা থাকে, তাও ডিভোর্সী। এটা নাকি লজ্জার। এত কথা শুনতে হয় যে দেশের পথটাই ভুলতে বসেছেন।

আরেকটা আপুর কথা বলি। মালয়েশিয়াতে থাকেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। একদিন হলেন জঘন্য নির্যাতনের শিকার। গণমাধ্যমেও নিউজ হলো। হলো আন্দোলনও। সমাজ তার নাম দিলো, ধর্ষিতা। আপুর ভাষ্য, এই ঘটনার পর সবার একটাই প্রশ্ন কীভাবে হলো? খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গল্পটা একদিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা।  যেন তারা গল্প থেকে ফ্যান্টাসি খুঁজতে শুরু করতে ব্যস্ত। এক প্রতিবেশী তো আম্মুকে এও বলেছে, জিন্স প্যান্ট পরে ঘুরলে এমনতো হবেই।

আপুর গল্পটা ছোট করে বলি। ধর্ষণের শিকার হবার সময়ে ছিলেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ফাইনাল পরীক্ষাটা দেয়া শুধু বাকি। মানসিক যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে চলে গেলেন ভার্সিটি থেকে দূরে। দু'টা বছর ছিলেন ঘরের ভিতর বন্দি। নিয়মিত যেতে হয়েছে মানসিক ডাক্তারের কাছে। এরপর শিক্ষকদের সহযোগীতায় করোনাকালে অনার্স সম্পন্ন করেন। মাস্টার্সের জন্য পাড়ি দেন মালয়েশিয়া। আপু বলেছিলেন, আমি নির্যাতনের শিকার। কিন্তু কটু কথার ভয়ে আমরা নিজ বাড়ি ভাড়া দিয়ে ৩২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থেকেছি। যাতে চেনা মানুষগুলোর বাজে কথা শুনতে না হয়।

আপু মালয়েশিয়াতে আজ প্রায় চার বছর। সেখানেই এক বাংলাদেশির সঙ্গে বিয়ে করে ঘর পেতেছেন। আপু বলেন, আমার জীবনের এই ঘটনার কয়েক বছর হয়ে গেছে। আজ দেশ থেকে কতো দূরে। তবুও মনে হয় এই বুঝি পেছন থেকে কেউ এসে মুখ চেপে ধরছে।

আপনাকে বলছি। হ্যাঁ, আপনাকেই। আপনার পাশে থাকা মেয়েটাও হয়তো লড়ছে। সম-অধিকার নিয়ে কতো কথাইতো বলেন। আচ্ছা, পাশে থাকা আপজন কিংবা অপরিচিত মানুষটার লড়াইয়ের প্রতিবন্ধকতা আপনি ননতো? একবার ভেবেই দেখেন না, হয়তো না বুঝেই পাশের কিংবা দুরের নারীটার পথের কাঁটা আপনি। ফুল না হলেও দয়া করে কাঁটা হবেন না প্লিজ। নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

পাঠকের মতামত

ডিভোর্সের জন্য নারী পুরুষ সমভাবে দায়ী।

মিলন আজাদ
৮ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ২:০৮ অপরাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com